ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ডায়াবেটিসের ১০ ভয়াবহ পরিণতি (শেষ পর্ব)

দেহঘড়ি ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩০, ১ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৫:১৬, ১ অক্টোবর ২০২০
ডায়াবেটিসের ১০ ভয়াবহ পরিণতি (শেষ পর্ব)

ডায়াবেটিস শব্দটির কথা শুনলে মনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনসুলিন ও রক্ত শর্করা ব্যবস্থাপনার কথা চলে আসে। নিশ্চিতভাবে ইনসুলিন ও রক্ত শর্করা এই ক্রনিক রোগের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ডায়াবেটিস রোগীর শরীরে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন উৎপাদন হয় না অথবা সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, এর ফলে রক্তে শর্করা বেড়ে যায়। কিন্তু রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ না করলে শরীরের বিভিন্ন অংশে অপূরণীয় ক্ষতি হয়। উচ্চ রক্ত শর্করা হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক ও এমনকি যৌনজীবনে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলে।

বোস্টনের জোসলিন ডায়াবেটিস সেন্টারের অন্তর্গত ইনপেশেন্ট ডায়াবেটিস প্রোগ্রামের পরিচালক ওসামা হামদি বলেন, ‘ডায়াবেটিসকে রূপকার্থে টার্মাইট বা কাঠের আসবাবপত্র ধ্বংসকারী কীটের সঙ্গে তুলনা করা যায়, যা গোপনে ধীরে ধীরে শরীরের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করে। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অধিকাংশ রোগীর মৃত্যু হয় হার্ট অ্যাটাকে। কিন্তু এই রোগের গুরুতর উপসর্গ নেই বলে অনেকে এটাকে হালকাভাবে নেন।’

গবেষণায় দেখা গেছে, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস শরীরের প্রত্যেকটা তন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। একারণে ডায়াবেটিস শনাক্ত হলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশসমূহকে রক্ষার্থে রোগটিকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না রাখার ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

ত্বকে সংক্রমণ হয়: ডায়াবেটিস ত্বকে সকল রকম সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে, যেমন- ব্রণের মতো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, ছত্রাক সংক্রমণ, যৌনাঙ্গে সংক্রমণ ও চুলকানি। ডা. হামদি বলেন, ‘ডায়াবেটিস রোগীদের ছত্রাক সংক্রমণ বেশি হয়। ত্বকে ঘনঘন ছত্রাকের আক্রমণ হলে ডায়াবেটিস আছে কিনা পরীক্ষা করা উচিত, কারণ এটা রোগটির প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।’ ডা. রডবার্ড জানান, ‘কিছুক্ষেত্রে স্থূলতার সঙ্গে ত্বকের সংক্রমণ সম্পর্কযুক্ত, কারণ স্থূল মানুষদের ত্বকের ভাঁজে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের অনুকূলীয় আর্দ্র পরিবেশ সৃষ্টি হয়।’ ডায়াবেটিসের কিছু ওষুধও যৌনাঙ্গে ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, কারণ এগুলো প্রস্রাবের মাধ্যমে শর্করার নির্গমন ঘটিয়ে থাকে, যার ফলে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের জন্য আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণ করলে ত্বকে সংক্রমণের প্রবণতা কমে আসবে। কিন্তু সংক্রমণ হয়ে গেলে ওটিসি ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন, যেমন- ছত্রাক সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম।

ঘুমের সময় শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হয়: একটি মারাত্মক স্লিপ ডিসঅর্ডার হচ্ছে অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া। এ সমস্যার ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে গলার মাংসপেশি শিথিল হয়ে পড়ে ও ঘুমের সময় শ্বাসনালিকে রুদ্ধ করে।এর ফলে শ্বাসক্রিয়া সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৫০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীর স্লিপ অ্যাপনিয়া হয়। বিশেষ করে শরীর স্থূল হলে অথবা গলার আকার ১৭ (পুরুষ)/১৬ (নারী) ইঞ্চির বেশি হলে এ সমস্যার ঝুঁকি বেশি। অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ হচ্ছে জোরে নাকডাকা। মাড়ির রোগের মতো অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়াও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণকে কঠিন করতে পারে, কারণ উভয় সমস্যাতেই শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় রয়েছে।

দৃষ্টি সমস্যা হয়: চল্লিশোর্ধ্ব ৩ জন ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে একজনের চোখে ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি দেখা গেছে। ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথির ক্ষেত্রে চোখের পেছনের আলোক-সংবেদনশীল টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতিরিক্ত রক্ত শর্করা সময়ের আবর্তনে চোখের সূক্ষ্ম রক্তনালীর ক্ষতি করে বলে এমনটা হয়ে থাকে। এ প্রক্রিয়াটি শনাক্তের সাত বছর আগে শুরু হতে পারে। সুখবর হলো- প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথির চিকিৎসা করলে অন্ধত্বের ঝুঁকি ৯৫ শতাংশ কমে যেতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডায়াবেটিস অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড কিডনি ডিজিজেস (এনআইডিডিকে) অনুসারে।

কিডনি অকার্যকর হয়: উচ্চ রক্ত শর্করা তথা ডায়াবেটিস রোগে প্রস্রাবে প্রোটিন লিক করতে পারে। এটা হলো কিডনি সমস্যার অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ। যারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেন না তাদের কিডনি ১০ বছরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশের কিডনি অকার্যকর হয়ে যেতে পারে, যেখানে ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়, জানান ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট বিটুল হাটিপোগলু।

স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়: প্রায় অর্ধেক টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীর নিউরোপ্যাথি তথা পেরিফেরাল স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটা হচ্ছে ডায়াবেটিসের সর্বাধিক সংঘটিত জটিলতা। প্রথমদিকে উপসর্গ প্রকাশ নাও পেতে পারে অথবা হাত-পা ঝিনঝিন করতে পারে বা অসাড় হতে পারে, বলেন ডা. গাবাই। কিন্তু স্নায়ুর এই ক্ষতি শেষপর্যন্ত ব্যথা, দুর্বলতা ও পরিপাক সমস্যা সৃষ্টি করবে। এনআইডিডিকে’র মতে, রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি শারীরিক সক্রিয়তা, স্বাস্থ্যকর খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহারে ডায়াবেটিস জনিত স্নায়ু ক্ষতি প্রতিরোধ হবে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়