ঢাকা     শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

নতুন ধরনের করোনাভাইরাস কতটা ভয়ঙ্কর?

দেহঘড়ি ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৬, ২১ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৮:৩৩, ২১ ডিসেম্বর ২০২০
নতুন ধরনের করোনাভাইরাস কতটা ভয়ঙ্কর?

করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত বিশ্ব। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৮ কোটি মানুষ। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ইতোমধ্যে কেড়ে নিয়েছে প্রায় ১৭ লাখ মানুষের প্রাণ। এবার এই ভাইরাস সম্পূর্ণ নতুন আরেকটি রূপে আবির্ভূত হয়েছে যুক্তরাজ্যে। বিশ্বের জন্য এই ঘটনা নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।

করোনা ভাইরাসের নতুন রূপ কেন উদ্বেগের?

নতুন ধরনের করোনাভাইরাস একসঙ্গে ৩টি বিষয় জানান দিচ্ছে যা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।

* এই ভাইরাস অন্যান্য সংস্করণের তুলনায় নিজেকে দ্রুত প্রতিস্থাপন করছে।

* এই ভাইরাসে এমন মিউটেশন ঘটে যা মূল ভাইরাসকে প্রভাবিত করে। 

* মিউটেশনগুলোর কিছু পরিবর্তন ইতোমধ্যে ল্যাবে ধরা পড়েছে। দেখা গেছে কোষগুলোতে সংক্রমিত হওয়ার পর ভাইরাসটির ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পায়।

নতুন করোনাভাইরাস কত দ্রুত ছড়াচ্ছে?

সেপ্টেম্বরে এটি প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল। নভেম্বর মাসে লন্ডনের প্রায় এক চতুর্থাংশ কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে করোনার নতুন রূপ পাওয়া গেছে। যা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে পৌঁছেছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, নতুন ধরনের করোনাভাইরাস আগের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি গতিতে ছড়ায়। 

নতুন ধরনের করোনাভাইরাস কতটা ছড়িয়েছে?

ধারণা করা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের নতুন রূপান্তরিত রূপটি যুক্তরাজ্যের কোনো রোগীর মধ্যে আবির্ভূত হয়েছিল বা এমন কোনো দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে এসেছে, যেখানে করোনাভাইরাসের রূপান্তর পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা দুর্বল। নতুন রূপটি উত্তর আয়ারল্যান্ড ব্যতীত পুরো যুক্তরাজ্যে দেখা দিয়েছে। তবে লন্ডন, দক্ষিণ পূর্ব এবং পূর্ব ইংল্যান্ডে এটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের জেনেটিক কোড পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান নেক্সটস্ট্রেইন জানিয়েছে, নতুন এই করোনাভাইরাস এখন নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক এবং অস্ট্রেলিয়াতেও পাওয়া গেছে।

বিশ্বে এমন ঘটনা কী আগেও ঘটেছে?

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সর্বপ্রথম শনাক্ত হয়েছিল চীনের উহানে। তবে সেটির সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রাপ্ত করোনাভাইরাসের ধরন মিলবে না। মিউটেশনের মাধ্যমে ভাইরাসটি অনেকবার নিজের মধ্যে পরিবর্তন এনেছে। যেমন ফেব্রুয়ারিতে ভাইরাসটির ডি৬১৪জি নামক যে রূপান্তর ইউরোপে দেখা দিয়েছিল, সেটিই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল। এছাড়া ইউরোপে এ২২ভি নামক এই ভাইরাসের আরেকটি রূপ ছড়িয়ে পড়েছিল, যা পরবর্তীতে স্পেনে গ্রীষ্মের ছুটিতে সংক্রমণ ঘটিয়েছিল। 

কোথা থেকে এলো নতুন বৈশিষ্ট্যের এই করোনাভাইরাস?

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবি গুপ্তার মতে, ল্যাব পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের নতুন ধরনকে মানুষের দেহে সহজে সংক্রমণ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যা সরকারকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ভাইরাসটির নতুন রূপ অস্বাভাবিক উচ্চমাত্রার মিউটেশনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সম্ভাব্য ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ভাইরাসটি দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের কোনো রোগীর মধ্যে উদ্ভব হয়েছিল। এরপর শরীরের দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ভাইরাসটি সেখানে নিজেকে পরিবর্তনের প্রজনন স্থানে পরিণত হয়েছিল।

এটি কি আরো বেশি প্রাণঘাতী?

এটি যে আগেরটির চেয়ে আরো বেশি প্রাণঘাতী বা মারাত্মক, এরকম প্রমাণ এখনো গবেষকরা পাননি। ভাইরাসটিকে আরো পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন গবেষকরা। তবে ভাইরাসটি অনেক বেশি সংক্রামক। তাই সংক্রমণ বেড়ে যাওয়াটাই হাসপাতালগুলোর জন্য প্রধান সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে।  

নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন কাজ করবে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাভাইরাসের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনগুলো ভাইরাসটির নতুন ধরনের ক্ষেত্রেও কাজ করবে। কিংবা বলা যায়, আপাতত কাজ করবে। শীর্ষস্থানীয় ৩টি প্রতিষ্ঠানের তৈরি ভ্যাকসিন ভাইরাসের স্পাইকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করতে পারে। ভ্যাকসিনগুলো ভাইরাসটির বিভিন্ন অংশে আক্রমণ করতে পারে, তাই নতুন মিউটেশনের মাধ্যমে স্পাইকের কিছু অংশ পরিবর্তন হলেও ভ্যাকসিনগুলো কার্যকরী থাকবে। অধ্যাপক গুপ্তার মতে, কিন্তু ভাইরাসটি যদি মিউটেশনের মাধ্যমে অনেক বেশি নিজের মধ্যে পরিবর্তন ঘটাতে থাকে, তাহলে তা উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। ভাইরাসটি ভ্যাকসিনের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার সম্ভাব্য পথে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। 

গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড রবার্টসনের মতে, ভাইরাসটি সম্ভবত ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা দুর্বল করার মতো মিউটেশন করতে সক্ষম হবে। এটি আমাদের ফ্লুর মতো অবস্থানে নিয়ে যাবে, যেখানে ভ্যাকসিনগুলো নিয়মিত আপডেট করার দরকার হয়। ভাগ্যক্রমে আমাদের কাছে থাকা ভ্যাকসিনগুলো আপডেট করার সুযোগ রয়েছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

ঢাকা/ফিরোজ/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়