ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

প্রস্রাব ঝরে পড়ার কারণ ও করণীয়

এস এম ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ৩০ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ২০:৫৫, ৩০ জানুয়ারি ২০২২
প্রস্রাব ঝরে পড়ার কারণ ও করণীয়

প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারার সমস্যাকে চিকিৎসকেরা ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স বলেন। অনেকেই এ সমস্যায় ভুগে থাকেন। 

এটা একটি বিব্রতকর সমস্যা- বাথরুমে যাওয়ার আগেই প্যান্ট ভিজে যেতে পারে, এমনকি কাশি বা হাঁচি দিলেও প্রস্রাব ঝরে পড়তে পারে। হালকা প্রস্রাব ঝরে পড়াও দৈনন্দিন জীবনকে চ্যালেঞ্জিং করতে পারে। এখানে ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সের ধরন, কারণ ও করণীয় সম্পর্কে বলা হলো।

ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সের ধরন

প্রস্রাব ধরে রাখতে পারছেন না? এর সমাধান করতে হলে আগে ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সের ধরন শনাক্ত করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স রয়েছে- স্ট্রেস ইনকন্টিনেন্স, আর্জ ইনকন্টিনেন্স, মিক্সড ইনকন্টিনেন্স, ওভারফ্লো ইনকন্টিনেন্স ও ফাংকশনাল ইনকন্টিনেন্স।

* ব্লাডারের ওপর চাপ পড়লে প্রস্রাব ঝরে পড়তে পারে। এটাকে স্ট্রেস ইনকন্টিনেন্স বলে। হাসলে, কাশলে, হাঁচি দিলে অথবা কোনোকিছু উত্তোলন করলে এই সমস্যা হতে পারে।

* ব্লাডারের অনৈচ্ছিক সংকোচনে প্রস্রাব ঝরে পড়াকে আর্জ ইনকন্টিনেন্স বলা হয়। এ সমস্যার ক্ষেত্রে সবসময় প্রস্রাব করার জন্য তাড়না অনুভূত হয়ে থাকে, এমনকি আপনি সবেমাত্র বাথরুমে মূত্রত্যাগ করে আসলেও। আর্জ ইনকন্টিনেন্স অতি অল্প পরিমাণে প্রস্রাব নির্গমন থেকে শুরু হয় যা আপনি লক্ষ্য নাও করতে পারেন।

* স্ট্রেস ইনকন্টিনেন্স ও আর্জ ইনকন্টিনেন্সের সমন্বয়ে প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারার ব্যর্থতাকে মিক্সড ইনকন্টিনেন্স বলা হয়।

* ব্লাডারে অতিমাত্রায় প্রস্রাব পরিপূর্ণ হলে ব্যক্তির অনিচ্ছায় প্রস্রাব ঝরে পড়তে পারে। এটাকে ওভারফ্লো ইনকন্টিনেন্স বলে। এক্ষেত্রে যথেচ্ছভাবে প্রস্রাব বের হয়- কখনো কখনো একটানা ঝরতে থাকে, আবার কখনো কখনো বড় ধরনের প্রবাহ হিসেবে ঝরতে থাকে।

* ব্লাডারের কাজ স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও শারীরিক ও মানসিক সীমাবদ্ধতার কারণে যথাসময়ে প্রস্রাব করতে বাথরুমে যেতে না পারার সমস্যাকে ফাংকশনাল ইনকন্টিনেন্স বলে। উদাহরণস্বরূপ, হাঁটতে না পারলে অথবা স্মৃতিভ্রংশতায় বাথরুম খুঁজে পেতে সমস্যা হলে প্রস্রাবে প্যান্ট ভিজে যেতে পারে।

প্রস্রাব ঝরে পড়ার সমস্যা যাদের বেশি হয়

যে কারো ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স হতে পারে। তবে এসব মানুষদের ঝুঁকি বেশি- নারী, বয়স্ক মানুষ, ধূমপায়ী, প্রস্রাব ঝরে পড়ার পারিবারিক ইতিহাস, ডায়াবেটিস রোগী, এমএস রোগী, স্থূল ব্যক্তি ও স্মৃতিভ্রষ্ট মানুষ।

ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সের কারণ ও করণীয়

প্রস্রাব ঝরে পড়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-

* মূত্রবর্ধক খাবার ও ওষুধ: কিছু খাবার, পানীয় ও ওষুধ আর্জ ইনকন্টিনেন্স সমস্যার কারণ হতে পারে। যেমন: সাইট্রাস ফল, কফি, কার্বনেটেড ড্রিংকস ও অ্যালকোহল। মূত্রবর্ধক ওষুধ ফিউরোসেমাইড, হাইড্রোক্লোরোথিয়াজাইড, টরসেমাইড ও স্পিরোনোল্যাক্টোনও প্যান্ট ভিজে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

যদি মনে করেন যে, কোনো খাবার বা পানীয়’র প্রভাবে ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স হচ্ছে, তাহলে ওই খাবার বা পানীয় বাদ দিয়ে দেখতে পারেন। যদি ধারণা করেন যে, ওষুধের কারণে প্রস্রাব ধরে রাখতে পারছেন না, তাহলে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তিনি আপনাকে বিকল্প ওষুধ দিতে পারেন অথবা প্রস্রাব ঝরে পড়ার প্রকৃত কারণ শনাক্তকরণের দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।

* গর্ভাবস্থা ও সন্তান জন্মদান: গবেষণার উপাত্ত বলছে, প্রায় ৪০ শতাংশ গর্ভবতী নারীর স্ট্রেস ইনকন্টিনেন্স হয়ে থাকে। এছাড়া কিছুক্ষেত্রে সন্তান জন্মদানের পর অনবরত প্রস্রাব ঝরতে পারে। সন্তান জন্মদানের ছয় সপ্তাহ পরও প্রস্রাব ঝরলে চিকিৎসের কাছে যেতে হবে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বাচ্চা প্রসবের পূর্বে ও পরে পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ ও কেগেল এক্সারসাইজ করলে ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স কমবে। কারণ, এসব এক্সারসাইজ ব্লাডার নিয়ন্ত্রণকারী পেশিসমূহকে শক্তিশালী করে। এসব এক্সারসাইজ শিখতে ইউটিউবের ভিডিও দেখতে পারেন।

* বয়স্কতা: ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সের দুটি কারণের সঙ্গে বয়স্কতার সম্পর্ক আছে: বয়স্কদের ব্লাডার বা পেলভিক ফ্লোরের পেশিসমূহ দুর্বল এবং প্রোস্টেটের বৃদ্ধি। পেলভিক ফ্লোরের পেশিসমূহের দুর্বলতা কাটাতে আপনার চিকিৎসক পেলভিক ফ্লোর ফিজিক্যাল থেরাপির পরামর্শ দিতে পারেন।

প্রোস্টেটের বৃদ্ধি প্রধানত দুইভাবে ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স ঘটিয়ে থাকে- এটি ব্লাডারে চাপ দিয়ে প্রস্রাব নির্গত করায় এবং এটি প্রস্রাবের প্রবাহে সাময়িক বাধা দিয়ে ওভারফ্লো ইনকন্টিনেন্সের দিকে ধাবিত করে। এক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ওষুধ দিতে পারেন। ওষুধে কাজ না হলে আপনার চিকিৎসক সার্জারি বিবেচনা করতে পারেন।

* মেনোপজ: মাসিকের স্থায়ী সমাপ্তি (মেনোপজ) হলে ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স সমস্যা দেখা দিতে পারে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত ৩১টি গবেষণার রিভিউ অবলম্বনে গবেষকদের মত হলো, গর্ভাবস্থা ও সন্তান জন্মদান সংক্রান্ত ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সের মতো মেনোপজাল ইনকন্টিনেন্সেও পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করলে উপকার পাওয়া যাবে।

* মূত্রনালীর সংক্রমণ: মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউটিআই) প্রায়ক্ষেত্রে প্রস্রাবের শক্তিশালী চাপ সৃষ্টি করে এবং সাময়িকভাবে প্রস্রাব ঝরাতে পারে। ইউটিআই’র অন্যান্য লক্ষণসমূহ হলো- পেলভিক এরিয়াতে ব্যথা বা চাপ, প্রস্রাবের সময় ব্যথা ও জ্বালাপোড়া, লাল বা গাঢ় প্রস্রাব ও জ্বর। আপনার চিকিৎসক ইউটিআই শনাক্ত করলে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন। সাধারণত দুয়েকদিনে উপসর্গ চলে যায়, কিন্তু কারো ক্ষেত্রে ছয়-সাত দিন লাগতে পারে। এই সংক্রমণ দূর হয়ে গেলে প্রস্রাব ঝরে পড়াও থেমে যায়।

* প্রোস্টেট ক্যানসার সার্জারি: গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রোস্টেট ক্যানসারের জন্য সার্জারি করেছেন তাদের ৬-৮ শতাংশের দীর্ঘস্থায়ী ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স ছিল। এই ধরনের ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স নিয়ন্ত্রণে রাখতে পানীয় সীমিত করতে হবে, ব্লাডারকে অস্বস্তিতে ফেলে এমনকিছু এড়িয়ে চলতে হবে এবং পেলভিক ফ্লোর ফিজিক্যাল থেরাপি নিতে হবে। তারপরও প্রস্রাব ঝরতে থাকলে আপনার চিকিৎসক সার্জারির পরামর্শ দিতে পারেন।

* কোষ্ঠকাঠিন্য: কোষ্ঠকাঠিন্যেও প্রস্রাব ঝরে পড়তে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হলে ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স সমস্যা চলে যায়। দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে এই পরামর্শগুলো মনে রাখুন- ডায়েটে বেশি করে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার (ফল ও শাকসবজি) অন্তর্ভুক্ত করুন, প্রচুর পানি পান করুন, ওটিসি ল্যাক্সাটিভ/স্টুল সফেনার সেবন করুন এবং ডায়েট থেকে পরিশোধিত শস্য, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও ভাজা খাবার কমিয়ে ফেলুন।

পড়ুন: পুরুষের ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স সমস্যা

/ফিরোজ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়