ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সামাজিক দূরত্ব মানছেন না বস্তির মানুষ

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:০০, ২৩ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সামাজিক দূরত্ব মানছেন না বস্তির মানুষ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও যথাযথ দৃষ্টি নেই বস্তির দিকে। বস্তির ঘরগুলোতে গাদাগাদি করে অনেক মানুষ থাকায় নিশ্চিত হচ্ছে না শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব। ফলে বস্তিতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।

রাজধানীর হাজারিবাগ, মোহাম্মদপুর এলাকার কয়েকটি বস্তিতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এসব জায়গায় বাস করেন নিম্ন আয়ের মানুষজন, বিশেষ করে রিকশা-ঠেলাগাড়ির চালক, পোশাক শ্রমিক, দিনমজুর ও গৃহশ্রমিকরা। প্রথম দফা সাধারণ ছুটির সময়ে অনেক পোশাক শ্রমিক বাড়ি চলে গেলেও অন্যান্য পেশাজীবীরা এখনো ঢাকায় আছেন। এছাড়া, প্রথম দফা ছুটি শেষে পোশাক কারখানা খোলার খবরে অনেক শ্রমিক ঢাকায় ফিরেছেন।

বস্তির অনেকে জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই করোনাভাইরাস সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন না। এমনকি বস্তির অনেকে এটি বিশ্বাসও করতে চান না।

বুধবার হাজারিবাগের প্রেমতলা বস্তিতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রত্যেক ঘরে কয়েকজন করে অবস্থান করছেন। কোনো কোনো ঘরে ৫ থেকে ৭ সদস্যের পরিবারও থাকছে।

বস্তিতে বসবাসকারী দিনমজুর মনির হোসেন বলেন, ‘ছোট একটি ঘরের ভাড়া ৩৫০০ টাকা দিতে হয়। এজন্য আমরা চারজন এখানে মেস করে থাকি।’

আরেক বাসিন্দা মোনায়েম মিয়া বলেন, ‘হুনছি, করোনা আইছে। তো আমাগো কী? মোরা তো দিন আনি দিন খাই। আমাগো কিছু হইব না। কেউর কিছু হয়ও নাই। এগুলা বড়লোকের রোগ, গরিবের না। রাস্তায়, ঘরে তো সবে একলগেই থাহে। কিছু হইতে তো দ্যাখি না।’

সামাজিক দূরত্বের বিষয়ে বুঝিয়ে বলার পর হেমায়েত গাজীর বস্তির বাসিন্দা লুৎফর বলেন, ‘বউ, চার পোলা-মাইয়া লইয়া এক ঘরে থাকি। আমার সমস্যা অইব না তো?’

তিনি জানান, বস্তির কোনো ঘরেই  সামাজিক  এবং শারীরিক দূরত্ব মানা হয় না। কেউ সাবান দিয়ে হাত ধোয় না। সবাই সবার সঙ্গে মিশছে। একজন আরেকজনের ঘরে যাচ্ছে। আড্ডা-ফূর্তি করছে।

বস্তিতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না হওয়ায় সেখানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কেমন, জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, ‘এটা ড্রপলেটের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। ধরুন, আপনি কথা বলছেন, ওই সময় মুখ থেকে অদৃশ্য যে বিন্দু কণাগুলো বের হয় সেগুলোতেও ভাইরাস থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি বস্তিতে সামাজিক দূরত্ব না মানা হয় এবং সেখানে কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি থাকে, তাহলে সবাইকেই আক্রান্ত করবে। আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এটা সবার জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে।’

এদিকে, গত ৮ এপ্রিল রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় একটি বস্তিতে করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়ার পর সেটি লকডাউন করে দেয় পুলিশ। এরপর অন্য কোনো বস্তি লকডাউনের খবর পাওয়া না গেলেও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এটিকে ঝুঁকির বাইরে রাখছেন না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চিকিৎসক বলেন, ‘এখনো করোনা টেস্ট অ্যাভেইলেভল না। শুধু উপসর্গ এবং কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করে যাদের সন্দেহজনক মনে হচ্ছে, তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু রুরাল লেভেল পর্যন্ত করোনা পরীক্ষা না করা গেলে আসল বাস্তবতা বোঝা যাবে না। এখন তো উপসর্গ ছাড়াই করোনা রোগী পাওয়া যাচ্ছে। সুতরাং বস্তিসহ প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত কোভিড-১৯ পরীক্ষা করতে হবে। এতে সব জায়গার রোগী শনাক্ত হবে।’

 

ঢাকা/নূর/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়