ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

১৯৭৫ বিশ্বকাপ: বিশ্ব ক্রিকেটের প্রথম রাজা ওয়েস্ট ইন্ডিজ

মুহাম্মদ মেহেদী হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫৭, ১৮ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১৯৭৫ বিশ্বকাপ: বিশ্ব ক্রিকেটের প্রথম রাজা ওয়েস্ট ইন্ডিজ

মুহাম্মদ মেহেদী হাসান: দেখতে দেখতে দরজার কড়া নাড়তে শুরু করেছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দ্বাদশ আসর। বিশ্বকাপের এবার আয়োজনটা হচ্ছে জন্মভূমি ইংল্যান্ডের মাঠে। এ প্রতিযোগিতাকে ঘিরে অনেক আগের থেকেই বিশ্বজুড়ে শুরু হয়ে গেছে উন্মাদনা।

দশ দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপ। প্রত্যেকটা দল সবাই সবার মুখোমুখি হবে। সেরা চারটি দল খেলবে সেমিফাইনালে। এরপর ফাইনাল দিয়ে শেষ হবে এ আসর। এর আগে দেখে নেওয়া যাক ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিকথা।

প্রথম পর্বে আজ থাকছে ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপের ইতিহাস।
টেস্ট ক্রিকেটের বয়স তখন প্রায় ১০০ বছর। ওয়ানডে ক্রিকেট কেবল হাঁটি হাঁটি পা পা করছে। বয়স মাত্র চার বছর। এ সময়ে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ হয়েছে মাত্র ১৮টি। বেশ কিছু দলের আবার এ সংস্করণে খেলার অভিজ্ঞতা বলতে গেলে শূন্যই।  অবশ্য টেস্ট ম্যাচও যে অনেক হয়েছে তাও নয়, সবমিলিয়ে ৮৪টি। মূলত বাণিজ্য বৃদ্ধি ও খেলার জনপ্রিয়তা বাড়ানোর স্বপ্নে তড়িঘড়ি করে আয়োজন করা হয় বিশ্বকাপের। আর আয়োজক হিসেবে এর দায়িত্ব দেওয়া হয় ক্রিকেটের জনক দেশ ইংল্যান্ডকে। ঐতিহ্য ও অবকাঠামোগত সামর্থ্য বিবেচনায় করেই নির্বাচন করা হয় দেশটিকে।

ইংল্যান্ডের মোট ছয়টি ভেন্যু লর্ডস, বার্মিংহাম, নটিংহাম, দ্য ওভাল, ম্যানচেস্টার ও লিডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয় সবগুলো ম্যাচ। ৮টি দেশের অংশগ্রহণে ৭ জুন থেকে ২১ জুন পর্যন্ত ১৫ দিন ধরে চলে এ আসর। স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও অন্য ৫টি টেস্ট খেলুড়ে দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে অংশ নেয় শ্রীলঙ্কা ও পূর্ব আফ্রিকা।  পূর্ব আফ্রিকা মূলত কেনিয়া, উগান্ডা, তাঞ্জানিয়া এবং জাম্বিয়ার খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে গড়া। বর্ণবাদী আচরণে নিষিদ্ধ দক্ষিণ আফ্রিকার জায়গায় সরাসরি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পেয়েছিল দলটি।
 


প্রাথমিকভাবে চারটি দল করে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অনুষ্ঠিত হয় রাউন্ড-রবিন লিগ। গ্রুপ ‘এ'তে ছিল ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড ও পূর্ব আফ্রিকা এবং ‘বি’ গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং শ্রীলঙ্কা। প্রতি গ্রুপের শীর্ষ দুই দল খেলে সেমি-ফাইনাল। এরপর ফাইনাল। ফাইনালসহ মোট ম্যাচ হয় ১৫টি। প্রতিযোগিতার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করে প্রুডেনশিয়াল অ্যাসুরেন্স কোম্পানী। তাদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিশ্বকাপের নামকরণ করা হয় ‘প্রুডেনশিয়াল কাপ।’

তখন ওয়ানডে ক্রিকেটের ধরণ কিছুটা ভিন্ন ছিল। প্রতি ইনিংসে খেলা হতো ৬০ ওভার এবং লাল বলে খেলা হতো। আর পোশাক ছিল সনাতনী ধাঁচের- সাদা। সব ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয় দিনে। ইংল্যান্ডে গ্রীষ্মকালে সন্ধ্যা নামত বেশ দেরি করে। তাই ১২০ ওভারের ম্যাচও শেষ হতো দিনের আলো থাকতেই।

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে। ৬০ ওভারে রেকর্ড ৩৩৪ রান করেছিল ইংল্যান্ড। তার জবাবে ৩ উইকেটে ১৩২ রান করে ভারত। হারে ২০২ রানের রেকর্ড ব্যবধানে! সে ম্যাচে ওপেনিং নেমে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ১৭৮ বলে মাত্র ৩৬ রান করেছিলেন সুনিল গাভাস্কার। এতো বড় স্কোর তাড়া করতে নেমে কেন এমন ব্যাটিং করেছিলেন তিনি তা আজও রহস্যই থেকে গেছে। মজার ব্যাপার সে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় বলেই কট বিহাইন্ড হয়েছিলেন গাভাস্কার। তবে এজ খুব সূক্ষ্ম হওয়ায় কেউ আবেদন করেননি। ফলে আম্পায়ারও আউট দেননি। বহু বছর পর এ কথা নিয়েই বলেছেন এ ভারতীয়।

টুর্নামেন্টে সব ম্যাড়মেড়ে ম্যাচই দিয়েই আগাচ্ছিল। গ্রুপ পর্বের প্রায় সব ম্যাচই একতরফা। শেষ দিনে এজবাস্টনে পাকিস্তান বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার ম্যাচটি ছিল অবশ্য নাটকীয়তায় ঠাঁসা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬০ ওভারে ২৬১ রানের টার্গেট দিয়েছিল পাকিস্তান। সে লক্ষ্য তাড়ায় ২০৩ রানেই ৯ উইকেট হারিয়ে বসে ক্যারিবিয়ানরা। শেষ উইকেটে অ্যান্ডি রবার্টসকে নিয়ে ৬৪ রানের অবিশ্বাস্য এক জুটি গড়ে পাকিস্তানকে হতাশায় ডোবান ডেরেক মারে। টুর্নামেন্টও যেন প্রাণ পায়।

গ্রুপ পর্ব শেষে 'এ' গ্রুপ থেকে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড এবং 'বি' গ্রুপ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়া সেমি-ফাইনালের টিকেট পায়। প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড। লো স্কোরিং ম্যাচেও দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। ইংলিশদের মাত্র ৯৩ রানে গুটিয়ে দিয়েছিল অসিরা। তবে সে রান তুলতে তাদের উইকেট হারাতে হয়েছিল ৬টি। অস্ট্রেলিয়া দলের মূল পেসার তখন ডেনিস লিলি। সঙ্গে জেফ থমসন, ম্যাক্স ওয়াকারের মতো গতিতারকারাও ছিল। কিন্তু তাদের ছাপিয়ে তরুণ গ্যারি গিলমোর কেড়ে নেন সব আলো। ১২ ওভার বল করে ৬টি মেইডেনসন নেন ৬ উইকেট। এরপর ৩৯ রানে ৬ উইকেট হারানো দলে ব্যাট হাতেও ত্রাতা তিনি। ২৮ বলে ২৮ রানের মহামূল্যবান এক ইনিংসেই ফাইনালের টিকেট কাটে অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে তেমন রোমাঞ্চ ছড়ায়নি। আগে ব্যাট করে ১৫৮ রানে অলআউট হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। জবাবে ৫ উইকেট ও ১১৯ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় ক্যারিবিয়ানরা।
 


তবে ফাইনালে লর্ডসে বেশ টান টান উত্তেজনার ম্যাচ হয়। সেমিফাইনালের মতো ফাইনালেও বিধ্বংসী হয়েছিলেন গিলমোর। ভিভ রিচার্ডস, ক্লাইভ লয়েড, আলভিন কালিচরণদের মতো ব্যাটসম্যানদের ফিরিয়ে তুলে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। তবে ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক লয়েডকে ফেরানোর আগে খেলেন মহাকাব্যিক এক ইনিংস। তাতে ২৯১ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় দলটি। ১২ চার ও ২ ছক্কায় ৮৫ বলে ১০২ রানের ইনিংস খেলেন অধিনায়ক। জবাবটা ভালোই দিচ্ছিল অসিরা। ৩ উইকেট হারিয়ে তুলেছিল ১৬৩ রান। পরে স্নায়ুচাপে ভেঙে পড়ে দলটি। রানআউট হন পাঁচ ব্যাটসম্যান। শেষ পর্যন্ত অসিরা থামে ২৭৪ রানে। প্রথম বিশ্বকাপ জিতে নেয় ক্যারিবিয়ানরা।

টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক নিউজিল্যান্ডের গ্লেন টার্নার। ১৬৬.৫০ গড়ে করেন ৩৩৩ রান। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসটিও তার। পূর্ব আফ্রিকার বিপক্ষে করেন অপরাজিত ১৭১ রান। সর্বাধিক ২ সেঞ্চুরিও আসে তার ব্যাট থেকে। আসরে মাত্র দুই ম্যাচ খেলেই ১১ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার অস্ট্রেলিয়ার গ্যারি গিলমোর। আসরের সেরা বোলিং ফিগারটিও তার। ইংলিশদের বিপক্ষে মাত্র ১৪ রানের খরচায় পান ৬ উইকেট। সর্বোচ্চ ডিসমিসাল অসি উইকেটরক্ষক রডনি মার্শের ১০টি।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ মে ২০১৯/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়