ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

শ্রীলঙ্কার ৪২ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসের যত কথা

নুহিয়াতুল ইসলাম লাবিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৩, ৭ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শ্রীলঙ্কার ৪২ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসের যত কথা

নুহিয়াতুল ইসলাম লাবিব : ক্রিকেট তখন এখনকার মতো বহুল প্রচলিত ছিল না। গুটি কতক দল নিয়েই ছিল ক্রিকেট বিশ্ব। এশিয়া উপমহাদেশ ক্রিকেটে ছিল আরো এক ধাপ পিছিয়ে। পাকিস্তান, ভারত ছাড়া আর কোনো দলই ক্রিকেটের সাথে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত ছিল না। বলছি, ১৯৭৫ সালের ক্রিকেট মঞ্চের কথা। সে সময়ে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পূর্ব আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান এ নিয়েই ছিল ক্রিকেটের জগত। তবে সেবছরই ক্রিকেট বিশ্বে নাম লেখায় নতুন এক বিস্ময়! 

১৯৭৫ সালের ৭ জুন, এশিয়া মহাদেশের অন্যতম পরাশক্তি শ্রীলংকার একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম অভিষেক হয় সেদিন। সে সময়ের একদিনের ক্রিকেট ম্যাচগুলো ৫০ ওভারে খেলবার নিয়ম ছিল না, প্রতিটি ম্যাচই ৫০ ওভারের বদলে ৬০ ওভারে খেলা হতো। সময়ের কথা বিবেচনায় এনে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে পরবর্তীতে ৫০ ওভারে নিয়ে আসা হয় ।

প্রথম ম্যাচের স্মৃতিটা একদম ভালো ছিল না শ্রীলঙ্কার। ৩৭.২ ওভারেই ক্যারিবিয়দের বোলিং তোপে ৬০ রানেই অলআউট হয়ে যায় শ্রীলংকা। তাই তো ম্যাচটি ক্যারিবীয়রা হেসে খেলেই ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে জিতে নেয়।



শুরুটা ভালো না হলেও ৪২ বছরের দীর্ঘ পথচলায় লংকানরা এশিয়া মহাদেশে তো বটেই, ক্রিকেট বিশ্বেও অন্যতম পরাশক্তির নাম। হবেই না কেন? এখন পর্যন্ত প্রায় সবকটি শিরোপাই যে রয়েছে লংকানদের দখলে।

১৯৭৫ এ অভিষেক আর ঠিক দশ বছরের মাথায় প্রথম ঘরের মাটিতে সিরিজ জেতার গৌরব অর্জন করে লংকানরা। আর তার ঠিক দশ বছর পর অর্থাৎ ১৯৯৫ সালে সর্বপ্রথম দেশের বাহিরে গিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতে ক্রিকেট বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় লংকানরা।

১৯৯৬ সালে বারোটি দলের অন্তর্ভূক্তিতে ওয়ার্ল্ড কাপের সূচনা হয় সেবার। এশিয়া মহাদেশ থেকে ভারত-পাকিস্তানের সাথে শ্রীলংকাও সেবার সর্বপ্রথম ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ আয়োজনের ব্যবস্থা করে। সুলতান যারাওয়ানিকে অধিনায়ক করে সেবার দল ঘোষনা করে শ্রীলংকা ক্রিকেট বোর্ড। সর্বপ্রথম ঘরের মাটিতে ক্রিকেট একটু চমক না দেখালে কি হয় নাকি? তবে তাই বলে বিশ্বকাপটাই দখল? হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাওয়া সেই শ্রীলংকা দলই সেবার অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডকে পিছনে ফেলে সর্বপ্রথম বিশ্বকাপ জয়ের সাধ পায়। এরপর থেকে শ্রীলংকাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এবং তারই ধারাবাহিকতায় ক্রিকেট বিশ্ব সনাথ জয়সুরিয়া, চামিন্দা ভাস, মুত্তিয়া মুরালিধরণের মতো বেশ কিছু বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার দেখেছে এই লংকানদের থেকেই।

১৯৯৬ সালের পর আবার নতুন শিরোপার মুখ দেখে ২০০২ সালে। তবে এবার আর বিশ্বকাপ নয়, সেবার প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ঘরে তুলবার সুযোগ হয় লংকানদের জন্য। সেবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে প্রতিপক্ষে এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি ভারত। তবে সেবার অন্যতম প্রতিপক্ষ ছিল বৃষ্টিও। প্রথম ইনিংস পুরোটা শেষ হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ৮.৪ ওভারের বেশি খেলতে পারেনি ভারতীয়রা, তাই ম্যাচটি পরিত্যাক্ত হওয়ায় যৌথভাবে দুদলই ছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল জয়ী।

দীর্ঘ এই বিয়াল্লিশ বছরের পথ চলায়, ওয়ার্ল্ড কাপ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পাশাপাশি ২০১৪ সালে জয়াবর্ধানের নেতৃত্ব টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও জিতে নেয় শ্রীলংকা দল, তাছাড়া ২০০৭, ২০১১ সালে ওয়ার্ল্ড কাপে রানার্স-আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে লংকানরা।

একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লংকানরা খেলেছে ৭৯১টি ম্যাচ। যার মধ্যে জয় এসেছে ৩৬৯টি ম্যাচে এবং হারতে হয়েছে ৩৮১ ম্যাচে। অন্যদিকে ড্র হয়েছে ৫টি ম্যাচ। ফল হয়নি ৩৬টি ম্যাচের।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হারানোর কিছুই নেই এখন লংকানদের জন্য। বরং দিন দিন নতুন রেকর্ড গড়তে মুখিয়ে আছে লংকানরা। বর্তমানে র্যা ঙ্কিংয়ে সাতে অবস্থান করছে এই দলটি। কে জানে কোনোদিন হয়তো সবাইকে ছাপিয়ে এক নম্বর দলটি হয়েও চোখ রাঙবে ক্রিকেট বিশ্বকে!




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ জুন ২০১৭/নুহিয়াতুল/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়