ইমরানুজ্জামান: বাংলাদেশি ‘হিটম্যান’
প্রাইম দোলেশ্বরের চার জয়ের দুটির নায়ক তিনি। ব্যাট হাতে দোর্দান্ড প্রতাপ। ২২ গজে আগ্রাসন দেখানো যেন তার কাছে ছেলেখেলা। ব্যাটে ছক্কা বৃষ্টি। চারের ফুলঝুরি। নিখুঁত টাইমিং মেলাতে পারেন। পেশীশক্তি যোগ করেছে বাড়তি সামর্থ্য। সব মিলিয়ে ইনিংস উদ্বোধনীতে দারুণ এক প্যাকেজ ইমরানুজ্জামান।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানে শুরু ও শেষের ঝড়ে প্রতিপক্ষকে এলোমেলো করে দেওয়া। ইমরানুজ্জামান চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে উদ্বোধনীতে সেই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন সিদ্ধহস্তে। গতকাল মঙ্গলবার মাত্র ৬ ওভারের ম্যাচে ১৪ বলে ৪১ রান করেছেন ২ চার ও ৫ ছক্কায়। স্ট্রাইক রেট ২৯২.৮৫। এর আগেও ঝড় তুলেছেন। মিরপুরে খেলাঘরের বিপক্ষে ১৭ বলে ২৩৫.২৯ স্ট্রাইক রেটে তার রান ৪০। সব মিলিয়ে ৪ ম্যাচে ৯৯ রান করা ইমরানের স্ট্রাইক রেট এখন পর্যন্ত ওপেনার ও প্রতিষ্ঠিত সকল ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৮৩.৩৩।
রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপকালে ডানহাতি ব্যাটসম্যান বললেন, ‘জোরে মারা বা পাওয়ার হিটিংটাই আমি বেশি পছন্দ করি। আমি যেহেতু ওপেনার, প্রথম পাওয়ার প্লে’টা ঠিকভাবে ব্যবহার করাটাই লক্ষ্য থাকে। এরপর থিতু হয়ে গেলে অন্যরকম মানসিকতায় ব্যাটিং করি।’
২৬ বছর বয়সি এ ব্যাটসম্যান যশোরের সন্তান। যশোর জেলা দলের অধিনায়কও তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলছেন খুলনা বিভাগীয় দলের হয়ে। উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান ৪ ম্যাচে ২ ফিফটিতে করেছেন ২২০ রান। এছাড়া লিস্ট এ’র ৮ ম্যাচে ১৮৪ রান করেছেন। ২০১৯ সাল থেকে প্রাইম দোলেশ্বরে খেলছেন এ ব্যাটসম্যান। শুরুতে সুযোগ না পেলেও কোচের আস্থা অর্জন করে থিতু হয়েছেন। মিরপুরে তিনি পেয়েছিলেন প্রথম লিস্ট এ হাফ সেঞ্চুরি। সেবার ৫৪ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেছিলেন।
বৃষ্টিতে পয়েন্ট ভাগাভাগি হওয়ায় এবারের লিগের প্রথম রাউন্ডে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি। দ্বিতীয় ম্যাচে ছোট্ট ক্যামিওতে নিজেকে মেলে ধরেন। গতকাল মোহামেডানের বিপক্ষে ছিলেন দুর্বার। ৪ ইনিংসে ৯ ছক্কা হাঁকিয়ে জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিমের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে আছেন। ইমরান জানালেন, ছক্কা মারাটা তার কাছে ‘নেশা’র মতো। ২০১৮ সালে প্রথম বিভাগে এক ইনিংসে ৯টি ছক্কা মেরেছিলেন। ওই মৌসুমে রানও করেছিলেন ৮৯৬। তাতেই প্রাইম দোলেশ্বরের দুয়ার খুলে যায় তার জন্য।
ইমরানের পছন্দের ক্রিকেটার বা আদর্শ নেই কেউ। তবে বললেন, ‘যারা হার্ড হিটার তাদের খেলা বেশি উপভোগ করি। তাদের মতো করেই খেলতে পছন্দ করি।’
তবে পারফরম্যান্স নিয়ে ভাবনার দিকও আছে। ব্যাট হাতে ধারাবাহিকতা নেই। ছোট ক্যামিও বড় করতে পারেননি এখনও। এজন্য তৃপ্তির ঢেকুর না তুলে সামনের সুযোগগুলিকে কাজে লাগাতে চান,‘ভালো খেলেছি, ভালো লাগছে। তবে টি-টোয়েন্টিতে ৭০/৮০ রানের ইনিংস খেললে তা সন্তোষজনক। আপাতত ম্যাচ বাই ম্যাচ ধারাবাহিক হওয়াটাই আমার লক্ষ্য। দল এখনও পর্যন্ত পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। এটাকেও ধরে রাখতে হবে। দলের প্রত্যেকের সেই আত্মবিশ্বাস আছে।’
বর্তমান সময়ে ‘হিটম্যান’ বলতেই চোখের সামনে ভেসে আসে ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মার ছবি। ইমরানুজ্জামানের শক্তি, সামর্থ্য, মেধা, প্রজ্ঞা সব আছে। যশোর সন্তান কী হতে পারবেন বাংলাদেশি ‘হিটম্যান’। সেই প্রশ্ন আপাতত তোলা থাক সময়ের কাছে।
ঢাকা/ইয়াসিন
আরো পড়ুন