ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

ইউরো গ্রুপ ‘ই’: পুরোনো আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারবে নতুন স্পেন?

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪১, ১০ জুন ২০২১   আপডেট: ১১:৫৪, ১০ জুন ২০২১
ইউরো গ্রুপ ‘ই’: পুরোনো আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারবে নতুন স্পেন?

আগামী ১১ জুন থেকে শুরু হচ্ছে ইউরোর শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। ১১টি শহরের ভিন্ন ১১ ভেন্যুতে লড়াই হবে ২৪ দলের। এই মহাযজ্ঞের আগে ছয় গ্রুপের বিশ্লেষণধর্মী ধারাবাহিক আলোচনার পাঁচ নম্বর গ্রুপ ‘ই’ নিয়ে:

২০১২ সালের ইউরো জয়ের পর থেকে বড় কোনও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে শেষ ষোলো টপকাতে পারেনি স্পেন। ফুটবলের সুপারপাওয়ার মর্যাদাও হারিয়ে গেছে। অধিনায়ক সার্জিও রামোসকে রাখা হয়নি দলে। তার বাদ পড়ায় ২০০৮ সালে ইউরোজয়ী দলের কেউ নেই এবার।

বলা চলে, শুরু হচ্ছে নতুন প্রজন্মের স্পেনের। নতুন খেলোয়াড়রা তাদের পূর্বসূরিদের মতো বিশ্বমঞ্চে দাপট দেখাতে পারবে কি না সেটাই দেখার। তবে টুর্নামেন্টের ফেভারিট হিসেবে তারা খেলবে এবং ‘ই’ গ্রুপ থেকে শেষ ষোলোতে তাদের দেখা স্বাভাবিক।

গ্রুপে স্পেনের সঙ্গী রবার্ট লেভানদোভস্কির নেতৃত্বাধীন অদম্য পোল্যান্ড। তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশেলে বেশ সংগঠিত দল সুইডেন। তারাও নকআউটে ওঠার দৌড়ে থাকবে। একটি-দুটি অঘটন ঘটিয়ে ইউরোতে টানা দ্বিতীয়বার শেষ ষোলোতে খেলতে আশাবাদী স্লোভাকিয়া।

স্পেন

স্পেনের ইতিহাসে প্রথমবার রিয়াল মাদ্রিদের কোনও খেলোয়াড় নেই। নাচো, রামোস, মার্কো আসেনসিও, লুকাস ভাসকেস ও ইসকোকে নেননি এনরিকে। এই স্পেনকে নিয়ে পুরোনো আধিপত্য ফেরানোর মিশনে নামবেন তিনি।

কোচ: লুইস এনরিকে

সম্ভাব্য ফরমেশন ও একাদশ: ৪-৩-৩; ডি গিয়া, আলবা, লাপোর্তে, পি. তোরেস, লরেন্তে, কোকে, রোদ্রি, থিয়াগো, ওলমো, মোরাতা, এফ. তোরেস।

সূচি: ১৪ জুন, প্রতিপক্ষ সুইডেন; ১৯ জুন, প্রতিপক্ষ পোল্যান্ড; ২৩ জুন, প্রতিপক্ষ স্লোভাকিয়া।

ইউরো খেলেছে: ৯ বার।

শেষ ইউরোতে: শেষ ষোলো।

সেরা সাফল্য: চ্যাম্পিয়ন (১৯৬৪, ২০০৮, ২০১২)|

নজরে থাকবেন: থিয়াগো আলকান্তারা। কে আসলে জ্বলে উঠবে, এই দলে তা খুঁজে বের করা কষ্টের। স্পেন খেলে দলগতভাবে। তবে থিয়াগো তার অভিজ্ঞতা দিয়ে এই তরুণ দলকে অনুপ্রাণিত রাখবেন। অনেকে তার মাঝে স্প্যানিশ লিজেন্ড জাভির ছায়া দেখতে পান। বল দখল করা ও পায়ে রাখায় বেশ সাবলীল তিনি। প্রতিপক্ষের জন্য সমস্যা তৈরি করে দিতে পারেন।

শক্তি: স্পেনের শক্তি মিডফিল্ডে। থিয়াগো, কোকে ও রোদ্রির মাঝমাঠের বিপক্ষে বল পাওয়াই হবে প্রতিপক্ষের জন্য বড় পরীক্ষা। গত বছর থিয়াগো পাস সম্পন্ন করার হার ছিল ৮৯.৫ শতাংশ, আর রোদ্রির ৯২.১ শতাংশ।

দুর্বলতা: অনভিজ্ঞ সেন্টার ব্যাকদের নিয়ে ঝামেলায় পড়তে পারে স্পেন। সার্জিও রামোসের অনুপস্থিতিতে আইমেরিক লাপোর্তে ও পাউ তোরেসকে দেখা যেতে পারে তার জায়গায়। দুজনেই মানসম্পন্ন খেলোয়াড়। ২৪ বছর বয়সী তোরেস কেবল সাত ম্যাচ খেলেছেন স্পেনের হয়ে। আর লাপোর্তে ফ্রান্সের সঙ্গে জুনিয়র আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষে স্পেন দলে খেলতে যাচ্ছেন।

পোল্যান্ড

রবার্ট লেভানদোভস্কিই দলের প্রাণ। কিন্তু ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের মতো তার ফর্ম পড়ে গেলে বিপদের মুখোমুখি হবে পোলিশরা। বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে রেকর্ড গড়া মৌসুম কাটিয়ে ফিরছেন তিনি। তাকে নিয়ে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে কেবল তিন ম্যাচে ডাগআউটে দাঁড়ানো পাওলো সোসাকে।

কোচ: পাওলো সোসা

সম্ভাব্য ফরমেশন ও একাদশ: ৪-২-৩-১; সেসনি, রাইবাস, বেডনারেক, গ্লিক, কেজিওরা, লিনেত্তি, ক্রিচোভিয়াক, জোজভিয়াক, ক্লিচ, সিমানস্কি, লেভানদোভস্কি।

সূচি: ১৪ জুন, প্রতিপক্ষ স্লোভাকিয়া; ১৯ জুন, প্রতিপক্ষ স্পেন; ২৩ জুন, প্রতিপক্ষ সুইডেন।

ইউরো খেলেছে: ২ বার।

শেষ ইউরোতে: কোয়ার্টার ফাইনাল।

সেরা সাফল্য: কোয়ার্টার ফাইনাল (২০১৬)।

নজরে থাকবেন: পোল্যান্ড যখন মাঠে নামবে, নিঃসন্দেহে নজরে থাকবেন রবার্ট লেভানদোভস্কি। প্রতিপক্ষের জন্য এই ইউরোতে তাকে সবচেয়ে বিপজ্জনক মনে করা হচ্ছে। গত মৌসুমে বুন্দেসলিগায় ৪১ গোল করেছেন বায়ার্ন তারকা, এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলদাতা জার্ড মুলারের ৪৯ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙেছেন তিনি। তার লক্ষ্যই থাকবে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের চেয়ে ভালো পারফরম্যান্স করা, যেখানে তিনি তিন ম্যাচ ছিলেন গোলশূন্য। নয়তো ইউরোর নকআউটে পোল্যান্ডের ওঠা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

শক্তি: স্ট্রাইকার। আবারও উঠে আসছে লেভানদোভস্কির নাম। ক্লাব ফর্ম জাতীয় দলের জার্সিতে দেখাতে পারলেই হয়। পুরো আক্রমণভাগ তাকে কেন্দ্র করে মাঠ দাপিয়ে বেড়াবে। ফরোয়ার্ড আরকাদিউজ মিলিকও পোলিশদের আক্রমণের ধার বাড়াবেন।

দুর্বলতা: পোলিশদের রক্ষণ নিয়ে রয়েছে দুশ্চিন্তা। দলে উজচেখ শেসনি ও লুকাস ফাবিয়ানস্কির মতো মানসম্পন্ন গোলকিপার, বিশ্বমানের স্ট্রাইকার ও দারুণ সব মিডফিল্ডার রয়েছে। কিন্তু ব্যাক লাইনের দায়িত্বে থাকবেন সাউদাম্পটনের ২৫ বছর বয়সী সেন্টার হাফ জ্যান বেডনারেক ও সম্প্রতি সিরি আ থেকে অবনমিত হওয়া বেনেভেন্তোর ৩৩ বছর বয়সী কামিল গ্লিক।

সুইডেন

জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ অবসর ভেঙে ইউরোতে ফেরার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ৩৯ বছর বয়সী স্ট্রাইকার যে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন, ডাকও পেয়ে যান দলে। কিন্তু মে মাসে হাঁটুর চোট পান এসি মিলান তারকা এবং ছিটকে যান এই আসর থেকে। অবশ্য অভিজ্ঞ একটি দল নিয়েই ইউরোতে নামছে তারা, বলা চলে খুব বেশি অভিজ্ঞ। ১২ জন খেলোয়াড়েরই বয়স ত্রিশের ওপরে।

ইউরো বাছাইয়ে রক্ষণাত্মক খেলে নজর কাড়া দলটি এবারও একই কৌশলে এগোবে। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে শেষ আট পর্যন্ত খেলা সুইডিশরা ভালো কিছুর প্রত্যাশা করছে। অন্তত গ্রুপ পর্বের গেরোটা তারা কাটাতে চায়।

কোচ: জান্নে এন্ডারসন।

সম্ভাব্য ফরমেশন ও একাদশ: ৪-৪-২; ওলসেন, অগাস্টিনসন, ড্যানিলেয়সন, লিন্ডেলর্ফ, ক্রাফথ, ফর্সবার্গ, একডাল ওলসন, লারসন, আইজাক, কুলুসেভস্কি।

সূচি: ১৪ জুন, প্রতিপক্ষ স্পেন; ১৮ জুন, প্রতিপক্ষ স্লোভাকিয়া; ২৩ জুন, প্রতিপক্ষ পোল্যান্ড।

ইউরো খেলেছে: ৬ বার।

শেষ ইউরোতে: গ্রুপ পর্ব।

সেরা সাফল্য: সেমিফাইনাল (১৯৯২)।

নজরে থাকবেন: এমিল ফর্সবার্গ। আরবি লাইপজিগের সঙ্গে কয়েক বছর ধরে খেলছেন ২৯ বছর বয়সী মিডফিল্ডার। গত মৌসুমে সাত গোল ও চার অ্যাসিস্টে জার্মান ক্লাবকে বুন্দেসলিগার দ্বিতীয় স্থানে রেখেছিলেন। চমৎকার প্লে মেকিং ও সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার সামর্থ্য এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারকে অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে রাখছে।

শক্তি: গতি ও তারুণ্যের উদ্দীপনা। আইজাকের সঙ্গে ২১ বছর বয়সী জুভেন্টাস উইঙ্গার দেজান কুলুসেভস্কি এই আসরের শীর্ষস্থানীয় তরুণ প্রতিভা। আক্রমণভাগে তারা দুজন একসঙ্গে খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। আরেক গতিময় স্ট্রাইকার জর্ডান লারসনও দলে শক্তি যোগ করবেন।

দুর্বলতা: মাঠের যে কোনও পজিশনে সুইডেনের প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে। কিন্তু ম্যাচের মোড় বদলে দেওয়ার মতো সত্যিকারের পারফর্মারের বড্ড অভাব। আইজাক কিংবা কুলুসেভস্কি কাছাকাছি মানের খেলোয়াড় হলেও সেই জায়গায় এখনও পৌঁছাতে পারেননি।

স্লোভাকিয়া

২০১৬ সালের পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি করে টানা দ্বিতীয়বার শেষ ষোলো খেলতে পারবে তো স্লোভাকিয়া? গতবার এই দল রাশিয়াকে হারায় এবং ইংল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করে নকআউটে উঠেছিল, যেখানে হেরে গেছে জার্মানির কাছে।

কোচ: স্তেফান তারকোভিচ

সম্ভাব্য ফরমেশন ও একাদশ: ৪-১-৪-১; দুব্রাভকা, হুবোকান, স্ক্রিনিয়ার, সাৎকা, পেকারিক, লোবোৎকা, মাক, হামসিক, কুককা, দুদা, দুরিস।

সূচি: ১৪ জুন, প্রতিপক্ষ পোল্যান্ড; ১৮ জুন, প্রতিপক্ষ সুইডেন; ২৩ জুন, প্রতিপক্ষ স্পেন।

ইউরো খেলেছে: ১ বার।

শেষ ইউরোতে: শেষ ষোলো।

সেরা সাফল্য: শেষ ষোলো (২০১৬)।

নজরে থাকবেন: মিলান স্ক্রিনিয়ার। ২০১০ সালের পর ইন্টার মিলানের প্রথম সিরি আ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন ২৬ বছর বয়সী সেন্টার ব্যাক। স্লোভাকের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হতে পারেন তিনি। মাঝমাঠে বল তৈরি করে দেওয়ার সামর্থ্যও তার নজর কাড়া।

শক্তি: স্লোভাকিয়ার মূল শক্তি মাঝমাঠ। স্লোভাকিয়ার সর্বকালের শীর্ষ গোলদাতা মারেক হামসিক, জুরাজ কুককা, স্তানিস্লাভ লোবোৎকা ও ওনদ্রেজ দুদাকে নিয়ে গড়া দৃঢ় মাঝমাঠ আক্রমণভাগের কাজ সহজ করে দিতে পারেন।

দুর্বলতা: স্ট্রাইকারের অভাব রয়েছে স্লোভাকদের। উপযুক্ত ৯ নম্বর জার্সিধারী নেই, যা গোলের সুযোগ তৈরি করে দিতে মিডফিল্ডারদের ওপর চাপ ফেলবে। ৩৩ বছর বয়সী মাইকেল দুরিস থাকবেন আক্রমণের নেতৃত্বে। কিন্তু জাতীয় দলে ফর্মে নেই, ৫৪ ম্যাচে করেছেন সাত গোল, ২০১৬ সালের আসরে দেখা পাননি একটি গোলেরও।

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়