ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ফিরে দেখা সাত বিপিএলের ফাইনাল

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৬, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১৩:৫৩, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ফিরে দেখা সাত বিপিএলের ফাইনাল

শেষ হচ্ছে বিপিএলের অষ্টম আসর। করোনাভাইরাসের কারণে এক বছরের বিরতি দিয়ে গত ২১ জানুয়ারি শুরু হয়েচিল ছয় দলের লড়াই। সেখান থেকে ধীরে ধীরে বাদ পড়েছে চার দল, ফাইনালের লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছে ফরচুন বরিশাল ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

দুইবার শিরোপা জিতেছে কুমিল্লা। আর বরিশাল দুইবার ভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির অধীনে ফাইনালে খেললেও ট্রফি থেকে গেছে অধরা। তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়ে রেকর্ড ট্রফিজয়ী ঢাকার পাশে কুমিল্লা বসবে নাকি খরা কাটাবে বরিশাল, সেই উত্তর মিলবে রাতে। তার আগে ফিরে দেখা যাক আগের সাত আসরের ফাইনাল।

আরো পড়ুন:

সপ্তম আসর

রাজশাহী রয়্যালস বনাম খুলনা টাইগার্স

স্কোর: রাজশাহী- ১৭০/৪; খুলনা- ১৪৯/৮; ফল: রাজশাহী ২১ রানে জয়ী

ম্যাচসেরা: আন্দ্রে রাসেল (রাজশাহী)- ২৭* (১৬) ও ২/৩২

২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি ঢাকার শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ‍মুখোমুখি হয় রাজশাহী ও খুলনা। আন্দ্রে রাসেলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে সেদিন শেষ হাসি হেসেছিল রাজশাহী।

টস হেরে ব্যাট করতে নামে রাজশাহী। ইরফান শুক্কুরের হাফ সেঞ্চুরি ছিল তাদের পক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস। তবে তাকে ছাপিয়ে আলো কাড়েন রাসেল ও মোহাম্মদ নওয়াজ। ৯৯ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে এনে দেন ১৭০ রানের সংগ্রহ। দুজনের অপরাজিত জুটি ৭১ রানের, বল খেলেন ৩৪টি। নওয়াজ ২০ বলে ৪১ রানে আর রাসেল ১৬ বলে ২৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। শেষ দুই ওভারে আসে ৩৩ রান।

লক্ষ্যে নেমে ১১ রানে ২ উইকেট হারানো খুলনা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল রাইলি রুশো ও শামসুর রহমানের জুটিতে। মিডল অর্ডারে তাদের ৭৪ রানের জুটি ভাঙার পর আর দাঁড়াতে পারেনি তারা। ৮ উইকেটে ১৪৯ রানে থামে খুলনা। আর প্রথমবার ঘরে শিরোপা তোলে রাজশাহী।

দলটিকে চ্যাম্পিয়ন বানাতে যে অধিনায়ক রাসেলের অবদান অনস্বীকার্য, তার প্রমাণ টুর্নামেন্ট সেরার স্বীকৃতি। ২২৫ রান ও ১৪ উইকেট নেন, যার মধ্যে ফাইনালে ছিল দুটি। ম্যাচসেরাও তিনি।

ষষ্ঠ আসর

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স বনাম ঢাকা ডায়নামাইটস

স্কোর: কুমিল্লা- ১৯৯/৩, ঢাকা- ১৮২/৯; ফল: কুমিল্লা ১৭ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: তামিম ইকবাল (কুমিল্লা)- ১৪১* (৬১) ও ২ ক্যাচ।

সাকিব আল হাসান উড়ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির সেই দিনে ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ককে ছাপিয়ে রুদ্রমূর্তি ধারণ করলেন প্রতিপক্ষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ওপেনার তামিম ইকবাল। ৬১ বলে ১০ চার ও ১১ ছয়ে ১৪১ রানের বিস্ফোরক ইনিংসেই সেদিন ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয়। সাকিব ফাইনালে একটি উইকেট (২৩) নিয়ে শীর্ষ বোলারের আসনে থাকলেও তাকে শিরোপাবঞ্চিত করে কুমিল্লা ১৭ রানে জিতে।

৩ উইকেটে ১৯৯ রান করেছিল কুমিল্লা। বড় লক্ষ্য দিয়ে ওয়াহাব রিয়াজ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও থিসারা পেরেরা বাকি কাজ সারলেন। তারা উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন, যাতে ৯ উইকেটে ১৮২ রানে থামে ঢাকা। টানা দ্বিতীয় ফাইনালে হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয় সাকিবদের। টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে।

পঞ্চম আসর

রংপুর রাইডার্স বনাম ঢাকা ডায়নামাইটস

স্কোর: রংপুর- ২০৬/১, ঢাকা- ১৪৯/৯; ফল: রংপুর ৫৭ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: ক্রিস গেইল (রংপুর), ১৪৬* (৬৯) ও ০/২।

ফাইনালে প্রথমবার রংপুর। তাদের প্রতিপক্ষ তিনবারের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা, যাদের রয়েছে সাকিব আল হাসান, শহীদ আফ্রিদি ও সুনীল নারিনের মতো তারকা। কিন্তু রংপুরের ছিল একজন- ক্রিস গেইল। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনার তার একপশলা বিস্ফোরণ ঘটান ব্যাট হাতে।

গেইল সেদিন ৬৯ বলে অপরাজিত ১৪৬ রান করেন। তাতে ২০৭ রানের টার্গেট দেয় রংপুর ঢাকাকে। সাকিব নেন রংপুরের একমাত্র উইকেট।

ওখানেই ম্যাচ শেষ হয়ে গিয়েছিল। জহুরুল ইসলাম অমির ৫০ ছাড়া আর কারো ব্যাটে রান ছিল না। ২৬ রান করেন সাকিব। সোহাগ গাজী, ইসুরু উদানা ও নাজমুল ইসলাম দুটি করে উইকেট নিয়ে ঢাকাকে ৯ উইকেটে ১৪৯ রানে থামান। ব্যস, গেইল শোতে ৫৭ রানে জিতে রংপুর পায় প্রথম শিরোপা।

ফাইনালের ম্যাচসেরার সঙ্গে টুর্নামেন্ট সেরাও হন ৪৮৫ রান করা গেইল।

চতুর্থ আসর

ঢাকা ডায়নামাইটস বনাম রাজশাহী কিংস

স্কোর: ঢাকা- ১৫৯/৯, রাজশাহী- ১০৩ (১৭.৪ ওভারে); ফল- ঢাকা ৫৬ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: কুমার সাঙ্গাকারা (ঢাকা)- ৩৬ (৩৩)।

দুইবার ফাইনালে উঠে দুইবারই চ্যাম্পিয়ন হওয়া ঢাকা তাদের তৃতীয় ফাইনালে পায় রাজশাহী কিংসকে। আগে ব্যাট করতে নেমে এভিন লুইসের ৩১ বলে ৪৫ রান ও উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারার ৩৩ বলে ৩৬ রানের সৌজন্যে ৯ উইকেটে ১৫৯ রান করে ঢাকা।

৩ উইকেট নিয়ে মূল অবদান রাখেন ফরহাদ রেজা। প্রথম ফাইনালে রাজশাহীর জন্য ১৬০ রান খুব একটা কঠিন ছিল না। কিন্তু টপ অর্ডারদের ব্যর্থতায় মোড়ক লাগে পুরো ব্যাটিং অর্ডারে। মুমিনুল হক সর্বোচ্চ ২৭ রান করেন। এরপর সাব্বির রহমান (২৬) ও সামিট প্যাটেল (১৭) ছাড়া আর কেউ দুই অঙ্কের ঘরে যাননি।

ঢাকাকে তৃতীয় ট্রফি এনে দিতে বল হাতে কোনো একক বোলারের জাদু এদিন দেখা যায়নি। দুটি করে উইকেট নিয়ে অবদান রাখেন আবু জায়েদ রাহী, সাকিব ও সানজামুল ইসলাম।

তৃতীয় আসর

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স বনাম বরিশাল বুলস

স্কোর: বরিশাল- ১৫৬/৪, কুমিল্লা- ১৫৭/৭; ফল- কুমিল্লা ৩ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচসেরা: অলক কাপালি (কুমিল্লা)- ৩৯* (২৮)।

২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর, প্রথমবার ফাইনালে কুমিল্লা। প্রথম আসরের রানার্সআপ বরিশাল দারুণ শুরু করে সেক্কুগে প্রসন্নের ১৯ বলে ৩৩ রানের ঝড়ে। এছাড়া শাহরিয়ার নাফীসের ৩১ বলে অপরাজিত ৪৪ রান ছিল উল্লেখযোগ্য। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ (৪৮) অল্পের জন্য হাফ সেঞ্চুরি পাননি।

৪ উইকেটে বরিশালকে ১৫৬ রানে আটকে দেয় কুমিল্লা। মাশরাফির দলকে জয়ের পথে দারুণ সূচনা এনে দেন ওপেনার ইমরুল কায়েস। ইনিংস সেরা ৩৭ রানে ৫৩ রান করেন তিনি।

আহমেদ শেহজাদ করেন ৩০ রান। অলোক কাপালি একপ্রান্ত আগলে রাখলেও ১৯তম ওভারে কেভন কুপার পরপর দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচে উত্তেজনা ফেরান। যদিও ওই ওভারের শেষ দুই বলে দুটি চার মেরে ব্যবধান কমান কাপালি।

তাতে শেষ ওভারে ১৩ রান দরকার ছিল কুমিল্লার। বল হাতে নেন মোহাম্মদ স্যামি, দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউট হন শুভাগত হোম প্রথম বলেই। চাপে পড়ে কুমিল্লা। কিন্তু দ্বিতীয় বলে একটি লেগ বাই নিয়ে স্ট্রাইকে এসে পরপর দুটি চার মারেন কাপালি। এরপর আরো দুটি রান নেন তিনি, শেষ বলে প্রয়োজনীয় একটি রান নিয়ে কুমিল্লাকে প্রথম শিরোপা এনে দিয়ে ম্যাচসেরা হন কাপালি। ২৯ বলে ৩৯ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।  

দ্বিতীয় আসর

ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স বনাম চিটাগং কিংস

স্কোর: ঢাকা- ১৭২/৯, চিটাগং ১২৯ (১৬.৫ ওভারে); ফল- ঢাকা ৪৩ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: মোশাররফ হোসেন (ঢাকা)- ৩/২৬।

মাশরাফি মুর্তজার নেতৃত্বে দাপট দেখিয়ে ঢাকা ফাইনালে হারায় চিটাগং কিংসকে। ২০১৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারির ফাইনালে প্রতিপক্ষকে ১৭৩ রানের টার্গেট দেয় তারা। তারপর মোশাররফ হোসেন কৃপণ বোলিংয়ের পাশাপাশি ৩ উইকেট নিয়ে জয়ের নায়ক। ৪ ওভারে ২৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন তিনি। টপ অর্ডার ভাঙন ধরিয়ে ম্যাচসেরা এই স্পিনার। তার সতীর্থ আলফোনসো থোমাস ২.৫ ওভারে ১৯ রান দিয়ে নেন সমানসংখ্যক উইকেট।

চিটাগংয়ের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ রান আসে জেসন রয়ের ব্যাটে।

এর আগে এনামুল হক বিজয়ের ৩৬ বলে ৫৮ ও সাকিবের ২৯ বলে ৪১ রানের সুবাদে ৯ উইকেটে ১৭২ রান করে ঢাকা। এছাড়া মোহাম্মদ আশরাফুল ২৪ রান করেন। ঢাকার টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয়ে টুর্নামেন্টে ৩২৯ রান করে ও ১৫ উইকেট নিয়ে সেরা হন সাকিব।

প্রথম আসর

বরিশাল বার্নার্স বনাম ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স

স্কোর: বরিশাল- ১৪০/৭, ঢাকা- ১৪৪/২ (১৫.৪ ওভারে); ফল- ঢাকা ৮ উইকেটে জয়ী।

২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম আসরের ফাইনালে মুখোমুখি ঢাকা ও বরিশাল।

আগে ব্যাট করতে নেমে আহমেদ শেহজাদ ও ব্র্যাড হজের ব্যাটে দারুণ শুরু করেছিল বরিশাল। ৪.২ ওভারে ৪৩ রান এনে দিয়ে বিদায় নেন শেহজাদ (২৮)। কিন্তু আক্রমণাত্মক শুরু ধরে রাখতে পারেনি তারা অন্যদের নিষ্প্রভ ব্যাটিংয়ে। অন্যপ্রান্তের ব্যাটসম্যানরা কেবল আসা যাওয়ার মধ্যে ছিলেন। অধিনায়ক হজ ৫১ বলে ৭০ রানে অপরাজিত থাকেন।

ঢাকার পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন শহীদ আফ্রিদি, দুটি নাভেদ উল হাসান।

অল্প পুঁজিতে বড় কোনো চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি বরিশাল। ১৩ রানে শুরুতেই নাজিমউদ্দিনকে তারা ফেরালেও ইমরান নাজির বিধ্বংসী ছিলেন। ৪৩ বলে ৬টি করে চার ও ছয়ে ৭৫ রান করে ঢাকার জয়ের ভিত গড়ে দেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান। তার সঙ্গে ১১০ রানের জুটি গড়েন এনামুল হক বিজয়। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান দলকে জিতিয়ে দিয়ে মাঠ ছাড়েন। ৩৮ বলে ৪৯ রানে অপরাজিত ছিলেন এনামুল।

২৬ বল হাতে রেখেই প্রথমবারের চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা।

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়