বোল্ড আউটের মতোই ওই রান আউট, সোধীর আউট নিয়ে তামিম
ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
ইশ সোধীকে রান আউট (পূর্বের মানকাড) করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু, স্পিরিট অব ক্রিকেটের কথা বিবেচনায় তাকে ফিরিয়ে আনে বাংলাদেশ। তাতে বাংলাদেশ মন জয় করলেও সেই সোধী দারুণ পারফরম্যান্স করে স্বাগতিকদের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে উড়িয়ে দেন। ব্যাট হাতে ৩৫ রানের পর বল হাতে ৬ উইকেট নিয়ে লেগ স্পিনার হয়েছেন ম্যাচ সেরা।
১৭ রানে হাসান মাহমুদ তাকে রান আউট করেছিলেন। বোলিংয়ের আগে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যান সোধী। হাসানও সুযোগ পেয়ে ভাঙেন স্টাম্প। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো বোলার আগে এমন কিছু করেননি। তাইতো ফিল্ডার, বোলার সবার চোখে মুখে ছিল হাসির ঝিলিক। টিভি আম্পায়ার জায়ান্ট স্ক্রিনে নিজের সিদ্ধান্ত জানালে বাংলাদেশ সাফল্য পায়। তখন নতুন ব্যাটসম্যান ট্রেন্ট বোল্টও মাঠে প্রবেশ করেন।
কিন্তু খানিকবাদেই মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম নতুন এক ঘটনার সাক্ষী হয়। বাংলাদেশের অধিনায়ক লিটন দাস আম্পায়ার মারিয়াস ইরাসমাসের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান। কি কথা হয়েছিল দুজনের তা বোঝা যাচ্ছিল স্পষ্ট। লিটন ব্যাটসম্যান সোধীকে মাঠে ফেরাতে অনুরোধ করেন আম্পায়ারকে। অধিনায়কের অনুরোধ রাখেন ইরাসমাস।
ড্রেসিংরুমের পথে এগিয়ে যেতে থাকা সোধী তখন নতুন জীবন পান। পুনরায় ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। হাসানের কাছে দৌড়ে গ্লাভস খুলে ব্যাট ফেলে তাকে বুকে জড়িয়ে নেন। দুজনের মুখেই তখন ছিল এক গাল হাসি।
ক্রিকেটে এখন মানকাড বলে কোনো টার্ম নেই। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) অন্য সাধারণ আউটের মতোই মানকাডকে ‘রান আউট’ হিসেবে বিবেচনা করছে। আগে থেকেই এই আউট বৈধ ছিল। বোলার যেমন ক্রিজের বাইরে পা ফেললে শাস্তিস্বরূপ হিসেবে ‘নো বল’ ডাক দেওয়া হয়, তেমনই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যানকে রান আউট করলেও তা পুরোপুরি বৈধ।
তালগোলপাকানো এই ঘটনা নিয়ে ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে আসা তামিম জানিয়েছেন, দলীয় সিদ্ধান্ততেই সোধীকে ফেরানো হয়েছিল।
‘হ্যা, এটা (মানকাড) এখন বৈধ। আউট নেওয়া যেত। কিন্তু আমার মনে হয় ওরও এমন করা উচিত হয়নি (রিঅ্যাক্ট)। ও খুব সারপ্রাইজ হয়েছে। কিন্তু সারপ্রাইজ হওয়া ঠিক হয়নি। এটা আমরা নিব কি নেব না সেটা আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। দলের সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু কেউ যখন সারপ্রাইজ হবে তখন ভিন্ন চিন্তা আসতে পারে।’
আম্পায়ার জায়ান্ট স্ক্রিনে নিজের সিদ্ধান্ত জানানোর পর ক্ষিপ্ত হন সোধী। হাসানের ওপর রাগ করে ব্যাট দিয়ে গ্লাভসে তালি দিতে দিতে ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটতে শুরু করেন। সোধীর এমন রিঅ্যাকশনেই কি বাংলাদেশ তাকে আবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ দিয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তামিম বলেছেন, ‘নট নেসেসারিলি।’ এদিকে সোধী অভিযোগ করেছেন তাকে ওয়ানিং দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে তামিম সোজাসাপ্টা বলেছেন, ‘এখানে ওয়ার্নিংয়ের কিছু নেই। এটা বোল্ড আউটের মতো। ওই সময়ে হয়তো অধিনায়ক চিন্তা করেছে আমরা এভাবে আউট নিব না। এজন্য আমরা তাকে ব্যাক করেছি। আসলে এই আউটে ভুল কিছু নেই। আপনি নিবেন কিংবা নিবেন না সেটা সম্পূর্ণ আপনার সিদ্ধান্ত। নিলে ভুল কিছু নেই। এটা দলের আলোচনা হওয়া উচিত। সামনে সব দলই এর সুবিধা নিতে চাইবে।’
সোধীকে যখন রান আউট করেছিল বাংলাদেশ তখন তার রান ছিল ১৭। জীবন পেয়ে স্কোরবোর্ডে আরও ১৮ রান যোগ করেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তার ৩৫ রানের ইনিংসে নিউ জিল্যান্ড শেষ দিকে দারুণভাবে লড়াই করে ২৫৪ রানের লড়াকু পুঁজি পেয়েছে। তবে কঠিন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ এমন সিদ্ধান্ত নেবে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরে ওয়ানডের সাবেক অধিনায়ক বলেছেন, ‘হয়তো বা নিব। আমি এখানে কোনো ভুল দেখি না। কারণ এখন আইন আছে। এটা আমরা নেই বা আমাদের বিপক্ষেও কেউ নেয় আমি মনে করি আমাদের ওই রিঅ্যাক্টটা করা উচিত যেভাবে অন্যরা করে।’
ঢাকা/ইয়াসিন