শুভমানের শতক, ৬ উইকেটে বাংলাদেশের হার
সাইফুল ইসলাম রিয়াদ || রাইজিংবিডি.কম
বাংলাদেশ: ২২৮/৮ (৪৯.৪ ওভার)
ভারত: ২৩১/৪ (৪৬.৩ ওভার)
ফল: ভারত ৬ উইকেটে জয়ী।
লক্ষ্য বড় নয়। প্রয়োজন ক্রিজে আকড়ে ধরে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছানো। শুভমান গিল সেটাই করলেন। ওপেনিংয়ে নেমে সেঞ্চুরি করে দলকে জিতিয়ে তবে মাঠ ছাড়লেন শুভমান। তার ব্যাট থেকে আসে ১০১ রান। বল খেলেন ১২৯টি। শুভমানের সঙ্গে ৯ রানে জীবন পাওয়া রাহুল অপরাজিত ছিলেন ৪১ রানে। ২২৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৬ উইকেটে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ভারত। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন রিশাদ হোসেন।
রাহুলের সহজ ক্যাচ ফেললেন জাকের
তাসকিনকে স্কয়ার লেগে উড়িয়ে মেরেছিলেন রাহুল। কিন্তু সহজ ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি জাকের আলী। তখন ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৯৬ রান। রাহুল ছিলেন ৯ রানে। ক্যাচ ধরতে পারলে ভারতের পঞ্চম উইকেটের পতন হতো। কিছুটা হলেও চাপে পড়তো রোহিতে দল। জীবন পেয়ে রাহুল হাত খুলে খেলার চেষ্টা করছেন। শুভমানের সঙ্গে জুটির ফিফটি পার হয়েছে ইতিমধ্যে। দুজনের জুটিতে জয়ের দিকে এগোচ্ছে ভারত।
আইয়ারের পর রিশাদের ঘূর্ণিতে সাজঘরে আকসার
মোস্তাফিজের কাটারে পরাস্ত হলেন আইয়ার। মিড অফে উড়ে মারতে চেয়েছিলেন কিন্তু টাইমিংয়ে গড়বড়। বল চলে যায় শান্তর হাতে। ১৫ রান করেন তিনি। আইয়ারের পর আকসারও ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৮ রান করে রিশাদের হাতেই ক্যাচ তুলে দেন আকসার। ১৪৪ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় ভারত। ক্রিজে শুভমানের সঙ্গী রাহুল।
কোহলিকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙলেন রিশাদ
রোহিত ফেরার পর কোহলি-শুভমান জুটি গড়ে এগিয়ে নিচ্ছিলেন দলকে। দুজনের ব্যাটে ভারত দলীয় শতরান পার করে। ধীরগতিতে এগোচ্ছিলেন এই তারকা ব্যাটার। কিন্তু থামিয়ে দিলেন রিশাদ। লেট কাট দিতে গিয়ে ধরা পড়েন সৌম্যর হাতে। তার আউটের পর ক্রিজে আসেন আইয়ার। ফিফটি তুলে নেন শুভমান। ৬৯ বলে ৫টি চার ও ১টি ছয়ের মারে ফিফটির ইনিংসটি সাজান শুভমান।
রোহিতকে ফেরালেন তাসকিন
রান তাড়ায় রোহিত-শুভমানের ব্যাটে দারুণ শুরু করে ভারত। ৮ ওভারে দেখা পায় দলীয় ফিফটির। এক প্রান্তে মেরে খেলার চেষ্টা করা রোহিত ফেরেন ফিফটির কাছে গিয়ে ৪১ রানে। তার আউটে ভাঙে ৬৯ রানের জুটি। পাওয়ার প্লেতে দলটি ১ উইকেটে ৬৯ রান করে। ক্রিজে শুভমানের সঙ্গী কোহলি।
বাংলাদেশ ২২৮
৩৫ রানে ৫ উইকেটের পতনের পর হাল ধরেন তাওহীদ-জাকের। দুজনে ১৫৪ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে প্রাণ এনে দেন। ৬৮ রানে জাকের আউট হলে ভাঙে জুটি। এরপর কখনো রিশাদ, কখনো তাসকিনকে নিয়ে তাওহীদ ম্যাচ টেনে নে ইনিংসের শেষ ওভার পর্যন্ত। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম শতক। বাংলাদেশ থামে ২২৮ রানে। মাঝে রিশাদের ১২ বলে ১৮ রানের ক্যামিও দারুণ কাজে দেয়। শামি একাই নেন ৫ উইকেট।
‘হেঁটে হেঁটে’ তাওহীদ হৃদয়ের সেঞ্চুরি
৪৬.৪ ওভারে বড় ধাক্কা খান তাওহীদ। শামিকে এক্সট্রা কাভারে মারতে গিয়ে ক্র্যাম্পের শিকার হন। ব্যাটে ভর দিয়ে শুয়ে পড়েন মাটিতে। ফিজিও এসে বেশ কয়েক মিনিট ধরে তাওহীদকে ফিট করে তোলেন। তখন সেঞ্চুরি থেকে ৫ রান দূরে। এরপর এক প্রকার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে হেঁটে রান নিয়ে সেঞ্চুরির দেখা পান। ১১৪ বলে তাওহীদের এই সেঞ্চুরি সাজানো ছিল ৬টি চার ও ২টি ছয়ের মারে। ৩৪ তম ওয়ানডেতে এটি প্রথম সেঞ্চুরি। আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে শতক হাঁকান। শেষ পর্যন্ত ১১৮ বলে ১০০ রানে থামেন তাওহীদ। তার আউটে বাংলাদেশও অলআউট হয়।
রিশাদের দুই ছক্কায় বাংলাদেশের দুইশ পার
আকসার প্যাটেলকে টানা তিন বলে দুই ছয় এক চার হাঁকিয়ে বাংলাদেশের স্কোর দুইশ পার করেন রিশাদ। ৪৪.৪ ওভারে দুইশ পার করে বাংলাদেশ। অবশ্য পরের ওভারে ফেরেন সাজঘরে। ১২ বলে ১৮ রান করেন তিনি। এরপর ক্রিজে এসে তানজীমও টিকতে পারেননি। তাওহীদের সঙ্গী তাসকিন।
থামলেন জাকের, শামির দুইশ
শামির আউটসাইড অফের বল লেগে টেনে নিয়ে মারতে চেয়েছিলেন জাকের আলী। টাইমিংয়ে গড়বড়। বল উড়ে যায় আকাশে। লং অন থেকে দৌড়ে এসে ক্যান নেন কোহলি। ৬৮ রানে থামেন জাকের। ১১৩ বলে এই রান করেন তিনি। তিনি যখন ক্রিজে দলের রান মাত্র ৩৫, উইকেট ছিল না ৫টি। জাকেরের আউটে ভাঙে ২৫৯ রানের জুটি। ক্রিজে তাওহীদের সঙ্গী রিশাদ। তাকে ফিরিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দুইশ উইকেটের ক্লাবে নাম লেখান শামি।
তাওহীদ-জাকেরে প্রাণ ফিরে পেলো বাংলাদেশ
৮৭ বলে জাকেরের ফিফটির পরই বাংলাদেশ শতরানের জুটি পার করে। ৩ চারে সাজানো জাকেরের ইনিংসটি ছিল লড়াকু। প্রথম বলে জীবন পাওয়া এই ব্যাটার এরপর ছিলেন সাবধানী। সঙ্গী তাওহীদ হৃদয়ও একই কাজ করেছেন। ২৩ রানে জীবন পেয়ে ৮৫ বলে তুলে নেন ফিফটি। এরপর হাঁকিয়েছেন ছয়-চারও। দুজনের জুটি দেড়শর কাছে, রান যাচ্ছে দুইশর দিকে। ৩৫ রানে ৫ উইকেট পতনের পর শুরু হয় দুজনের পথ চলা। ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে প্রাণ দেন দুজনে।
তাওহীদ-জাকেরের প্রতিরোধে শতরান পার
৮৪ বলে তাওহীদ-জাকের জুটির ফিফটি হয়। দুজনে প্রতিরোধ গড়ে খেলতে থাকেন। প্রথম বলেই রোহিতের হাতে জীবন পান জাকের, সেট হওয়ার পর তাওহীদের ক্যাচ ছাড়েন হার্দিক। ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর এই দুই ব্যাটার হাল ধরেন। তাওহীদ ২৯ ও জাকের ২৭ রানে ব্যাট করছেন। দুজনের ব্যাটে ভর করে ২৮.১ ওভারে দলীয় শতরান পূর্ণ হয়।
মুশফিকের গোল্ডেন ডাক, রোহিতের মিসে হ্যাটট্রিক হাতছাড়া
নবম ওভারে আকসার আসেন বোলিংয়ে। দ্বিতীয় বলে খোঁচা দেন তানজীদ। কিন্তু দ্বিধায় ছিলেন খোদ বোলার। উইকেটরক্ষক রাহুল বোঝানোর চেষ্টা করেন বল ব্যাটে লেগেছে। এর মধ্যে আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। এদিকে তানজীদ সঙ্গী তাওহীদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে পার হয়ে যায় রিভিউ নেয়ার সময়। নিলেও অবশ্য লাভ হতো না। ২৫ বলে ২৫ রান করেন তিনি। এরপর ক্রিজে এসেই প্রথম বলে খোঁচা দেন মুশফিক। গোল্ডেন ডাক। মুশফিকের পর জাকের আলী এসেও খোঁচা দেন। কিন্তু রোহিত ক্যাচ মিস করায় মিস হয় হ্যাটট্রিক। ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে আসে ৫ উইকেটে ৩৯ রান। এখন লড়ছেন তাওহীদ-জাকের।
১০ বলে ৫ রানে মিরাজের বিদায়
শান্ত-সৌম্যর বিদায়ের পর তানজীদ প্রতিরোধ গড়েন মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে। টানা চারে পরিস্থিতি নিজেদের দিকে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন তানজীদ। কিন্তু মিরাজ বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারলেন না। মোহাম্মদ শামির আউটসুইং করা বল বেরিয়ে যাচ্ছিল। ব্যাট চালিয়ে বসেন মিরাজ। বল ব্যাটে লেগে উড়ে যাচ্ছিল প্রথম স্লিপ দিয়ে। ডানে গিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন শুভমান গিল। ১০ বলে ৫ রান করেন মিরাজ, বাংলাদেশ ২৬ রানে তৃতীয় উইকেট হারায়। ক্রিজে তানজীদের সঙ্গী তাওহীদ।
সৌম্যর পর শান্তর শূন্য
মোহাম্মদ শামির প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে সৌম্যকে স্ট্রাইক দেন তানজীদ। চার বল ডট দিয়ে শেষ বলে মিড অফে ব্যাট চালিয়ে যেন ভুল করেন সৌম্য। কানায় লেগে যায় উইকেটের পেছনে রাহুলের হাতে। শূন্য রানে সৌম্যর বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন শান্ত। তিনিও হার্শিথ রানার দ্বিতীয় ওভারে সৌম্যকে অনুসরণ করেন। আউট সুইং করা বলে কাভার ড্রাইভ খেলতে গিয়ে কোহলির হাতে ধরা পড়েন শান্ত। কোনো রান না করেই বাংলাদেশ অধিনায়ক ফিরলে শুরুতেই বিপাকে পড়ে দল। ২ ওভারে ২ রানে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ক্রিজে তানজীদের সঙ্গী মিরাজ।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
গ্রুপ বি থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় শুরু হবে লড়াই। এই ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ একাদশ
তিন পেসার নিয়ে একাদশ সাজিয়েছে বাংলাদেশ। তবে জায়গা হয়নি নাহিদ রানার। এদিকে ইনজুরির কারণে নেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
একাদশে যারা তানজিদ হাসান, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, জাকের আলি, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান।
ভারত একাদশ
রোহিত শার্মা, শুবমান গিল, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়া, আকসার প্যাটেল, রবিন্দ্র জাদেজা, হার্শিত রানা, মোহাম্মদ শামি, কুলদিপ যাদব।
আত্মবিশ্বাসী শান্ত
জয় দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পা রাখতে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, “এই সংস্করণে আমাদের দল বেশ ভারসাম্যপূর্ণ এবং আমরা বিশ্বাস করি, এই টুর্নামেন্টে যে কোনো দলকে আমরা হারাতে পারি।”
ভারতের মতো দলের বিপক্ষেও শান্ত কেন এতটা আত্মবিশ্বাসী? সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার, “সব দলই ট্রফি জয়ের সামর্থ্য রাখে। তবে আমি এমন একজন, প্রতিপক্ষ নিয়ে খুব বেশি যে ভাবে না। আমরা যদি নিজেদের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে পারি যথাযথভাবে, যেকোনো দিনে যেকোনো দলকে হারাতে পারি আমরা।”
পরিসংখ্যান ভারতের পক্ষে
দুই দল এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে ৪১ বার। ৩২ বারই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে রোহিত শর্মার দল। বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ৮টিতে। ১টি ম্যাচ পরিত্যাক্ত হয়েছে। আইসিসি ইভেন্টে বাংলাদেশের সবশেষ জয় ২০০৭ সালে। সেবার ভারত গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়ে। এরপর ২০১১ ওয়ানডে ও ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে ভারতের প্রতিপক্ষে ছিল বাংলাদেশ। দুবারই জয় দিয়ে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়।
আশায় কোহলি
দলটির অভিজ্ঞ ব্যাটার বিরাট কোহলিও বাংলাদেশকে পেয়ে যেন হাততালি দিচ্ছেন! স্টার স্পোর্টসকে এই তারকা ক্রিকেটার বলেন, “বাংলাদেশের বিপক্ষে যতবার জয় দিয়ে আসর শুরু করেছে ভারত, ততোবারই শিরোপা জিতেছে।’’ ২০১১ এবং ২০২৪ সালের আসরের ম্যাচ দুটোর কথা মনে করিয়ে দিলেন কোহলি। এবারও তেমনই আশা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আসর শুরু করাটা সবসময় আমাদের জন্য ভালো কাজ করেছে। এবারও আমরা একই প্রত্যাশা করছি।”
ঢাকা/রিয়াদ