ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২০ মার্চ ২০২৫ ||  চৈত্র ৭ ১৪৩১

পঞ্চপাণ্ডব ‘অধ্যায়ের’ অম্লমধুর সমাপ্তি!

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ১৩ মার্চ ২০২৫  
পঞ্চপাণ্ডব ‘অধ্যায়ের’ অম্লমধুর সমাপ্তি!

সাকিব আল হাসান নিজ থেকে কী আর ঘোষণাটা দেবেন? আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এক প্রকার ‘নির্বাসিত’ সাকিব। লাল সবুজের জার্সিতে আরেকবার তাকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা শূন্যের কোটায়। নামের পাশে তাই অবসর লিখে দিলেও ভুল হবে না কিছুতেও।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বুধবার রাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। মাশরাফি বিন মুর্তজা অনেক আগের থেকেই ক্রিকেটে নেই। তামিম ইকবাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়েছেন নিকট অতীতে। মুশফিকুর রহিম সাদা বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। মাহমুদউল্লাহ বাকি ছিলেন। দাঁড়ি টেনেছেন তিনিও। সাকিবের ঘোষণার এখন খুব একটার প্রয়োজন হচ্ছে না। তাতে যা দাঁড়ায়, বাংলাদেশের ক্রিকেটের বহু প্রচলিত পঞ্চপাণ্ডব অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়েই গেল।

মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ- বাংলাদেশ ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডব। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৭, বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন যে অবস্থানে এসে পৌঁছেছে, তার শুরুটা তো ওই দিনেই হয়েছিল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জোহানসবার্গে বাংলাদেশের ম্যাচ। ৬৪ রানে ম্যাচ হারলেও বাংলাদেশ একইসঙ্গে পেয়েছিল ‘পঞ্চপাণ্ডব’কে। মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও তামিম একইসঙ্গে দেশের হয়ে খেলতে নেমেছিলেন প্রথমবারের মতো।

এরপর পদ্মা-মেঘনায় গড়িয়েছে অনেক জল, তার কোনো সীমা নেই। সময়ও অনেক চলে গেছে। সাফল্য দুহাত ভরে এসেছে, আবার রয়েছে ব্যর্থতার মিছিল। সবকিছুতেই জড়িয়ে আছেন এ পঞ্চপাণ্ডব। সময়ের ধারাবাহিকতায় তারা এখন খুলে রেখেছেন রঙিন জার্সি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘পাঁচক’-র কীর্তি খুব বেশি নেই। এর আগে ৬৪ ‘পাঁচক’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বাংলাদেশে এবারই প্রথম।

কোনো সন্দেহ ছাড়াই পঞ্চপাণ্ডবের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তামিম ইকবাল ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে বেশি রেকর্ড বহন করেছেন। ওয়ানডে, টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রানের মালিক। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১৫ হাজারেরও বেশি রান করেছেন। মুশফিকুর রহিমও তাই। দেশের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান। টেকনিক্যালি দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান।

মাহমুদউল্লাহ সব সময়ই ছিলেন বিশেষ ভূমিকায়। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ডেথ ওভারে বিগ হিটারের ভূমিকা পালন করছেন বছরের পর বছর। এ পাঁচের মধ্যে সবচেয়ে বড় মাশরাফি ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের চিত্রই পাল্টে দিয়েছেন। ঘরের মাঠে এবং দেশের বাইরে সাফল্যর রূপকার তো মাশরাফিই। মাঠ ও মাঠের বাইরে দারুণভাবে দলকে সামলেছেন মাশরাফি। অধিনায়ক থেকে হয়ে উঠেছেন নেতা।

পঞ্চপাণ্ডবের অনেক সুখস্মৃতি থাকলেও রয়েছে একাধিক আক্ষেপ। ২০১২ ও ২০১৬ এশিয়া কাপ ফাইনাল, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে নাটকীয় হার, ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল, নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল (মাশরাফি ছাড়া) এবং ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ ফাইনাল (সাকিব ও তামিম ছাড়া) আক্ষেপ হয়ে আছে তাদের কাছে। ২০১৯ সালের সাকিব, মুশফিক বাদে বাকিদের বিবর্ণ পারফম্যান্স কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।

২০০৭ থেকে শুরু করে ২০১৯ পর্যন্ত ১১১ ওয়ানডে তারা একসঙ্গে খেলেছেন। তাদের অধীনে দল জয় পেয়েছে ৫৪ ম্যাচে। হেরেছে ৫৩ ম্যাচ। ফল আসেনি ৪ ম্যাচে। পারফম্যান্সের বিচারে তারা সাফল্য-ব্যর্থতার অনুপাত ফিফটি-ফিফটি।

ঢাকা/ইয়াসিন


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়