ইনিংস ব্যবধানে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বদলা নিলো বাংলাদেশ

:: সংক্ষিপ্ত স্কোর ::
জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস: ১১১/১০
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৪৪/১০, জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২২৭/১০
ফল: বাংলাদেশ ইনিংস ও ১০৬ রানে জয়
মিরাজের অর্জনের ঝুলি ‘টইটুম্বুর’
সিলেটে ম্যাচ হারলেও মিরাজ দুই ইনিংসে ৫টি করে উইকেট পেয়েছিলেন। ম্যাচে ১০ উইকেট নিজের কাজটা ঠিকটাক করেছিলেন। চট্টগ্রামেও মিরাজ ধরে রাখলেন ছন্দ। নিজেকে এগিয়ে নিলেন আরো একধাপ।
এই টেস্টে মিরাজ সেঞ্চুরি পেলেন। বল হাতে পেলেন আবারো ৫ উইকেট। হলেন বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের নায়ক। নির্বাচিত হয়েছেন সিরিজ সেরা খেলোয়াড়।
টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেয়েছেন মিরাজ। সেঞ্চুরির পথে তুলে নিয়েছেন সাদা পোশাকে ২ হাজার রান। আগের ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে ২০০ উইকেটের পথ পেরিয়েছিলেন। ২ হাজার রান ও ২০০ উইকেটের ডাবলে নাম লিখিছেন সাকিবের পর। ম্যাচে ৫ উইকেট পেয়েছেন যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৩তম বার।
একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট শিকারি বাংলাদেশের তৃতীয় ক্রিকেটার হয়েছেন তিনি। আবার সিরিজে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট নিয়ে টেস্ট ইতিহাসের সপ্তম ক্রিকেটারও হয়েছেন।
বাংলাদেশের হয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ তৃতীয়বার ম্যাচ সেরা হয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তৃতীয়বার ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হয়েছেন।
ব্যাট-বল হাতে অসাধারণ দিন কাটিয়ে মিরাজ রঙিন করেছেন এই টেস্ট। তাতে টইটুম্বুর হয়েছে তার অর্জনের ঝুলি।
বদলা নিলো বাংলাদেশ
প্রথম টেস্ট বাজে ভাবে হারের পর দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল বাংলাদেশের। দ্বিতীয় টেস্টে ভালো করতে মরিয়া হয়ে ছিল স্বাগতিকরা। সিরিজের সঙ্গে নিজেদের মান বাঁচানোর লড়াই। প্রায় ২১ বছর পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ হার এড়ানোর মিশন। সেই মিশনে শেষ পর্যন্ত বিজয়ের হাসিই হাসল বাংলাদেশ।
ব্যাট-বলে উজ্জ্বল পারফরম্যান্সে সিলেট টেস্টে হারের বদলা চট্টগ্রামে নিল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়েকে এক ইনিংস ও ১০৬ রানে হারিয়ে সিরিজ ড্র করল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে ১১১ রানে অলআউট করেছে বাংলাদেশ।
এর আগে জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে ২২৭ রান করেছিল। জবাবে বাংলাদেশ করে ৪৪৪ রান। ২১৭ রানের লিডের চাপে পড়ে অতিথিরা। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই চাপ সামলে নিতে পারেনি আরভিনের দল।
মিরাজ, তাইজুল, নাঈমের স্পিন বিষে নীল হলো জিম্বাবুয়ে। মিরাজ সেঞ্চুরির পর তুলে নেন ৫ উইকেট। তাইজুল পেয়েছেন ৩ উইকেট। নাঈমের শিকার ১। রান আউটে শেষ হয় জিম্বাবুয়ের ইনিংস।
মুমিনুলের সরাসরি থ্রোতে বাংলাদেশের জয়
তাইজুলের বল অলতো টোকোয় মিড উইকেটে পাঠিয়েছিলেন মাসেকেসা। সেখানে মুমিনুল ফিল্ডিংয়ে ছিলেন। একটু দৌড়ে বল হাতে নিয়েই থ্রো করেন স্টাম্পে। বল আঘাত করে স্টাম্পে।
সরাসরি থ্রোতে মাসেকেসা রান আউট। জিম্বাবুয়ে অলআউট। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আম্পায়ার টিভি আম্পায়ারের সাহায্য চান। ফল পাল্টায়নি সেখানেও। মুমিনুলের সরাসরি থ্রোতে নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের দারুণ এক জয়।
উইকেট প্রাপ্তির মিছিলে তাইজুল
প্রথম দুই উইকেট নেওয়ার পর তাইজুল আড়াল হয়ে যাচ্ছিলেন মিরাজের দুর্দান্ত বোলিংয়ে। এক প্রান্ত থেকে টানা বোলিং করে উইকেটের ঝুলি পূর্ণ করছিলেন মিরাজ। তাকে পাশ কাটিয়ে এবার আলোর দেখা পেলেন তাইজুল। যোগ দিলেন উইকেট প্রাপ্তির মিছিলে।
এনগাভারা তার বল উড়াতে গিয়ে ক্যাচ দেন ডিপ মিড উইকেটে। সেখানে হাসান মাহমুদ সহজেই ক্যাচ নিয়ে তাকে তৃতীয় উইকেটের স্বাদ দেন।
শতরানে জিম্বাবুয়ে হারাল নবম উইকেট। বাংলাদেশের জয়ের জন্য চাই ১ উইকেট।
এনগাভারার ক্যাচ ছাড়লেন সাদমান
ইনিংসের শুরুতে দ্বিতীয় স্লিপে দাাঁড়িয়ে দারুণ এক ক্যাচ নিলেও এবার তার হাত ফসকে বেরিয়ে গেল রিচার্ড এনগাভারার ক্যাচ। মিরাজের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন এনগাভারা। দুই হাত পেতে দিলেও বল অতিদ্রুত যাওয়ায় জমেনি।
মিরাজের ৫ উইকেট, উড়ছে বাংলাদেশ
ওপেনিংয়ে নেমে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে একাই লড়াই চালাচ্ছিলেন বেন কারান। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে টুকটাক রান যা করার তিনিই করছিলেন। জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং শিবিরে ধস নামানো মিরাজ তাকেও টিকতে দিলেন না।
হাফ সেঞ্চুরি থেকে ৪ রান দূরে থাকতে কারান আউট হলেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। মিরাজের আর্ম বলে কারান ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করেছিলেন। সেখানে বল তার ব্যাটে আলতো চুমু খেয়ে যায় জাকের আলীর নির্ভরযোগ্য গ্লাভসে।
মিরাজ পেয়ে গেলেন ৫ উইকেটের স্বাদ। ব্যাট হাতে সেঞ্চুরির পর বল হাতে ৫ উইকেট। সব মিলিয়ে সিরিজে এখন পর্যন্ত ১৫ উইকেট।
৮ উইকেটে জিম্বাবুয়ের রান ৯৮। এখনো তারা ১১৯ রানে পিছিয়ে। ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে অতিথিরা।
মিরাজের আরেকটি উইকেট, ইনিংস পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে জিম্বাবুয়ে
অফস্পিনার মিরাজকে খেলতেই পারছেন না জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। তার ঘূর্ণিতে একের পর এক ব্যাটসম্যান হতাশ করে ফিরছেন ড্রেসিংরুমে। এবার মিরাজের শিকার ওয়েলিংটন মাসাকাদজা।
মিরাজের হাওয়ায় ভাসানো বল টার্ণের বিপরীতে খেলতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দেন ওয়েলিংটন। সেখানে তাইজুল আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন। সহজ ক্যাচ নিয়ে মিরাজকে চতুর্থ উইকেটের স্বাদ দিলেন।
৭ উইকেটে জিম্বাবুয়ের রান ৯৪। এখনো তারা ১২৩ রানে পিছিয়ে।
৮ বলে মিরাজের ৩ উইকেট
এক প্রান্তে টানা বোলিং করে যাওয়ার সুফল পাচ্ছেন মিরাজ। ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে চাপে রেখেছেন ব্যাটসম্যানদের। আগের ওভারে জোড়া উইকেটের পর এবার নতুন ওভারের দ্বিতীয় বলে উইকেটের দেখা পেলেন।
জিম্বাবুয়ের উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান তাফাদজওয়া সিগা মিরাজের শর্ট বল ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে শর্ট লেগে ক্যাচ দেন। সেখানে রিফ্লেক্সে দারুণ ক্যাচ নেন এনামুল হক বিজয়। আট বলে মিরাজের এটি তৃতীয় উইকেট।
জিম্বাবুয়ে হারাল ষষ্ঠ উইকেট। ৬ উইকেটে তাদের রান ৮৩। এখনো তারা ১৩৪ রানে পিছিয়ে।
মিরাজের জোড়া আঘাতে ব্যাকফুটে জিম্বাবুয়ে
কারান ও আরভিন লড়াই করে দলের হাল ধরেছিলেন। ৪৭ রানের জুটি গড়েছিলেন।বাংলাদেশ খোঁজে ছিল উইকেটের। তাদের মনোবলে চিড় ধরানোর। সেই কাজটাই করলেন মিরাজ।
ধারাবাহিক বোলিংয়ে মনোযোগ নষ্ট করলেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক আরভিনের। স্লগ করতে গিয়ে বল মিস করে বোল্ড হলেন আরভিন। ৫৬ বলে ২ চারে ২৫ রান করে থামলেন আরভিন। তাতে জিম্বাবুয়ে হারাল চতুর্থ উইকেট। মিরাজ পেলেন প্রথম উইকেট।
ওভারের প্রথম বলে আরভিনকে ফেরানোর পর শেষ বলে মিরাজের শিকার ওয়েসলি মাধভেরে। তার ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে এলবিডব্লিউ হন মাধভেরে। রিভিউ নিয়ে প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাটসম্যান টিকে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই টিকে যায়।
৫ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে জিম্বাবুয়ে। স্কোরবোর্ডে রান কেবল ৬৯। এখনও তারা ১৪৮ রানে পিছিয়ে।
কারান-আরভিনের ব্যাটে জিম্বাবুয়ের লড়াই
২২ রানে ৩ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে চতুর্থ উইকেটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। অধিনায়ক আরভিন ও ওপেনার বেন কারান জুটি বেধেছেন। দলের রান পঞ্চাশ পেরিয়েছে। এখনো তারা ১৬১ রানে পিছিয়ে।
উইকেটের খোঁজে থাকা বাংলাদেশ ক্রমাগত আক্রমণ চালাচ্ছে। তিন স্পিনার নাঈম, মিরাজ ও তাইজুল চাপে রেখেছে অতিথি ব্যাটসম্যানদের।
সাদমানের দারুণ ক্যাচ, নাঈমের উইকেট
বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারে উইকেটের দেখা পেল বাংলাদেশ। স্পিনার নাঈম হাসান পেলেন উইকেটের স্বাদ। এজন্য ধন্যবাদ দিতে হবে সাদমান ইসলামকে। প্রথম ইনিংসে স্লিপে সামদান ক্যাচ ছাড়লেও এবার ভুল করলেন না।
নাঈমের ঘূর্ণিতে ব্যাট চালিয়েছিলেন উইলিয়ামস। অনেকটা নিচু হওয়া বল দারুণ দক্ষতায় তালুবন্দি করেন সাদমান। দ্বিতীয় স্লিপে ফিল্ডার রেখে বোলিংয়ে পরিকল্পিত আক্রমণ চালিয়েছিলেন নাঈম। নিজেদের পরিকল্পনায় সফল বাংলাদেশ পেল তৃতীয় উইকেটের স্বাদ।
৩ উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ের রান ২২। কারানের নতুন সঙ্গী আরভিন। জিম্বাবুয়ে এখনো ১৯৫ রানে পিছিয়ে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাইজুলের ‘ফিফটি’
প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে এখন পর্যন্ত শিকার ২ উইকেট। ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে উইকেটের ‘ফিফটি’ পূর্ণ করলেন তাইজুল ইসলাম। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে উইকেটের পঞ্চাশ পূর্ণ করলেন তাইজুল।
সব মিলিয়ে বিশ্বের তৃতীয় বোলার হিসেবে এমন কীর্তিতে নাম লিখালেন। তাইজুলের ওপরে আছেন মুত্তিয়া মুরালিধরন ও ওয়াকার ইউনুস। মুরালিধরন ১৪ টেস্টে ৮৭ উইকেট পেয়েছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ওয়াকার ১১ টেস্টে পেয়েছেন ৬২ উইকেট। তাইজুলের ৮ ম্যাচে প্রাপ্তি ৫১ উইকেট।
তাইজুলের জোড়া আঘাতে হাসিমুখে বিরতিতে বাংলাদেশ
দারুণ বোলিংয়ের পুরস্কার পেলেন তাইজুল ইসলাম। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট পাওয়া এই স্পিনার দ্বিতীয় ইনিংসেও শুরুটা করলেন একই ছন্দে। তার করা চতুর্থ ওভারে জোড়া উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে।
ওপেনার বেনেটকে অসাধারণ ডেলিভারীতে স্লিপে তালুবন্দি করান তাইজুল। বল ছোবল দিয়ে বেনেটের ব্যাট ছুঁয়ে যায় স্লিপে সাদমান ইসলামের হাতে। এক বল পর, তার বল ছেড়ে এলবিডব্লিউ হন উইলচ। তার স্ট্রেইট ডেলিভারী উইলচের প্যাডে আঘাত করে। আম্পায়ার বাংলাদেশের আবদনে সাড়া দেননি। আত্মবিশ্বাসী আবেদনের পর বাংলাদেশ রিভিউ নেয়। তাতেই মেলে সফলতা। তিন লাল দাগে বাংলাদেশ পায় দ্বিতীয় উইকেটের স্বাদ।
চা-বিরতির আগে জিম্বাবুয়ের আর কোনো বিপদ হয়নি। ২ উইকেটে ১৭ রান নিয়ে তারা বিরতিতে গেছে। এখনো তারা ২০০ রানে পিছিয়ে।
জিম্বাবুয়েকে চাপে রেখে বোলিংয়ে বাংলাদেশ
লিডের পাহাড়ে চাপা পড়েছে জিম্বাবুয়ে। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সেই চাপ আরো বাড়িয়ে তুলেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। তাতে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে অতিথিরা। ৫ ওভারের খেলায় কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬ রান তুলেছেন বেনেট ও কারান। এখনও ২১১ রানে পিছিয়ে তারা।বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২১৭ রানের লিড নেয়।
মাসেকেসার ৫ উইকেট, মিরাজের আউটে বাংলাদেশের লিড ২১৭
লেগ স্পিনার মাসেকেসার বল এগিয়ে এসে উড়াতে চেয়েছিলেন সেঞ্চুরিয়ান মেহেদী হাসান মিরাজ। বলের লাইনেই যেতে পারেননি। উইকেটে পড়ে দেয় ছোবল। বাকি কাজটুকু সারেন উইকেট কিপার।
মিরাজের স্টাম্পডে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেল ৪৪৪ রানে। ১০৪ রানে থামলেন তিনি। ১৬ বল খেলে কোনো রান না করে অপরাজিত থাকলেন হাসান মাহমুদ। প্রথম ইনিংসে ২১৭ রানের বিশাল লিড পেল বাংলাদেশ। এর আগে প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ে করেছিল ২২৭ রান।
অভিষিক্ত মাসেকেসা দারুণ সময় কাটালেন ২২ গজে। দু্যতি ছড়িয়ে প্রথম সুযোগেই পেলেন ৫ উইকেট। এছাড়া ১টি করে উইকেট নেন মুজারাবানি, মাসাকাদজা, মাধভেরে ও বেনেট।
ক্যারিয়ার সেরা ১০৪ রান করে থামলেন মিরাজ। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই মাঠেই ১০৩ রান করেছিলেন। ১১ চার ও ১ ছক্কায় আজকের ইনিংসটি সাজান ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে তার লড়াইটা ছিল দুর্দান্ত। যেখানে তাইজুল, তানজিম ও হাসান রেখেছেন বিরাট অবদান। তাতে বাংলাদেশের রানও গেছে চূড়ায়। ৮ টেস্ট পর দলীয় রান চারশ ছাড়িয়েছে।
সেঞ্চুরির ফুল ফোটালেন মিরাজ
টেস্ট ক্যারিয়ারের একমাত্র সেঞ্চুরিটি ২০২১ সালে চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পেয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। চার বছর পর আবার একই মাঠে সেঞ্চুরির ফুল ফোটালেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দল যখন খাদের কিনারায় ছিল, তখন ব্যাটিংয়ে নেমে অসাধারণ ইনিংস উপহার দিলেন। লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দারুণ লড়াই করে পেয়েছেন তিন অঙ্কের স্বাদ।
এই ইনিংস খেলার পথে টেস্ট ক্যারিয়ারে দুই হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন মিরাজ। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে দুইশ উইকেট ও দুই হাজার রানের অসাধারণ ডাবলও ছুঁয়েছেন। এবার সেঞ্চুরিতে দিনটি রাঙিয়েছেন রংধনুর সাত রঙে।
ম্যাচ পরিস্থিতি বিবেচনায় যেভাবে ব্যাটিং করার প্রয়োজন ছিল সেভাবেই এগিয়েছেন মিরাজ। বাজে বল শাসন করেছেন। ভালো বল সমীহ করেছেন। তাতেই পেয়েছেন পুরস্কার। টেস্ট সেঞ্চুরির জন্য তাকে চার বছর অপেক্ষা করতে হলেও মাঝে মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৯৭ রান করেছিলেন ২০২৪ সালে। একই সালে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮১ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
স্পিনার মাধভেরের বল ফাইন লেগে পাঠিয়ে এক রান নিয়ে শতক পূর্ণ করেন মিরাজ। ১৪৩ বলে পৌঁছেছেন তিন অঙ্কে। এর আগে ফিফটি ছুঁয়েছিলেন ৭০ বলে।
মনোযোগ হারিয়ে উইকেট বিলিয়ে এলেন তানজিম
টেস্ট ক্রিকেটে নিজের প্রথম ইনিংসে বেশ ভালো ব্যাটিং করছিলেন তানজিম হাসান সাকিব। প্রতিপক্ষকে কোনো সুযোগ না দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ফিফটির দিকে। তুলে নিয়েছিলেন ৪১ রান। কিন্তু হঠাৎ মনোযোগ হারিয়ে ডেকে আনলেন বিপদ।
স্পিনার মাধভেরের বল রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন শর্ট লেগে। নিজের আউটে তানজিম নিজেই বিরক্ত। ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে ব্যাট গিয়ে আঘাত করেন প্যাডে।
তার আউটে বাংলাদেশ হারাল নবম উইকেট। ভাঙল মিরাজ ও তার নবম উইকেটে করা ৯৬ রানের জুটি। ৯ উইকেটে বাংলাদেশের রান ৪৩৮। উইকেটে মিরাজের নতুন সঙ্গী হাসান মাহমুদ।
মিরাজের ছক্কায় বাংলাদেশের লিড ২০০
পেসার মুজারাবানির শর্ট বল এর আগেও কয়েকবার উড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। ১২১তম ওভারের প্রথম বলে সফল হলেন মিরাজ। ব্যাটে মাঝে লেগে বল স্কয়ার লেগ দিয়ে যায় সীমানার বাইরে। মিরাজ পৌঁছে গেলেন নব্বইয়ের ঘরে। বাংলাদেশের লিড দুইশ ছাড়িয়েছে।
৮ উইকেটে বাংলাদেশের রান ৪২৯। লিড ২০২ রান। মিরাজ ৯৫ রানে ব্যাটিংয়ে। তাকে সঙ্গ দেওয়া তানজিম সাকিবের রান ৩৫। দুজনের জুটি ৮৭ রানের।
বাংলাদেশের দাপট দেখানো এক সেশন
মিরাজের দায়িত্বশীল ইনিংস। তাইজুলের মাটি কামড়ে পড়ে থাকার মানসিকতা। তানজিম হাসান সাকিবের আত্মবিশ্বাসী শুরু। তাতে চট্টগ্রামের সকালের সেশন বাংলাদেশ রাঙিয়েছে দারুণ ছন্দে। দাপট দেখানো একটি সেশন কাটাল বাংলাদেশ। যেখানে রানের ফোয়ারা ছুটল। বাউন্ডারি আসল অনায়েসে। জিম্বাবুয়েকে হতাশায় ডুবিয়ে বাংলাদেশের লিড বাড়ছে তরতরিয়ে।
৮ উইকেটে ৪০৪ রান নিয়ে বুধবার প্রথম সেশনের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ। লিড ১৭৭ রানের। মিরাজ ৭৬ ও তানজিম ২৯ রানে ব্যাটিং করছেন। নবম উইকেটে তাদের জুটি থেকে এসেছে ৬২ রান।
এই সেশনে ২৭ ওভার ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। ৪.১৯ রান রেটে বাংলাদেশ ১ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ১১৩ রান। যা এই টেস্টে এক সেশনে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান। মিরাজের সঙ্গে ৬৩ রানের জুটি গড়ার পর তাইজুল নিজের কাজটা করে সাজঘরে ফিরেছেন। ৪৫ বল ক্রিজে কাটিয়ে ২০ রান জমা করেন। সেখান থেকে তানজিম সাকিব দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন।
দুই হাজার রান, টেস্টের দশম ফিফটির পর মিরাজ সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। দ্বিতীয় সেশনে মাইলফলক ছুঁতে পারে কিনা সেটাই দেখার।
চারশ পেরিয়ে বাংলাদেশের রান, মিরাজ-তানজিম জুটির পঞ্চাশ
আট টেস্ট পর বাংলাদেশের দলীয় রান চারশ পেরিয়েছে। সবশেষ ২০২৪ সালে রাওয়ালপিণ্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫৬৫ রান করেছিল বাংলাদেশ। লম্বা সময় পর ব্যাটিংয়ে স্বস্তির সময় কাটাল বাংলাদেশ। ৮ উইকেটে এখন বাংলাদেশের রান ৪০০। লিড ১৭৩ রানের।
চট্টগ্রামে তৃতীয় দিনের সকাল থেকে দারুণ ব্যাটিং করছেন মিরাজ। তাইজুল তাকে সঙ্গ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। এখন ইনিংস মেরামতের কাজ করছেন মিরাজ ও তানজিম। জমাট জুটিতে তারাও দলের হাল ধরেছেন।
মিরাজ ৭৩ রানে ব্যাটিং করছেন। তানজিমের ব্যাট থেকে এসেছে ২৮ রান। দুজনের জুটির রান ৫৮।
দেড়শ পেরিয়ে বাংলাদেশের লিড
মিরাজের দারুণ ব্যাটিংয়ে চট্টগ্রাম টেস্টে শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশ। তাইজুলের পর তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন তানজিম সাকিব। এরই মধ্যে দলের লিড দেড়শ পেরিয়েছে। ৮ উইকেটে বাংলাদেশের রান ৩৮৫। লিড ১৫৮ রানের। মিরাজ ৬৭ ও তানজিম ১৯ রানে ব্যাটিং করছেন।
মিরাজের দশম ফিফটি
ওয়েলিংটন মাসাকাদজার ফুলার লেন্থ বল মিড অফে পাঠিয়ে দ্রুত ১ রান নিলে মিরাজ। ৪৯ থেকে তার রান পৌঁছে গেল পঞ্চাশে। টেস্ট ক্যারিয়ারে মিরাজ পূর্ণ করলেন দশম ফিফটি। ১৬ রানে দিন শুরু করে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন মিরাজ।
এরই মধ্যে দলের রান সাড়ে তিনশ পেরিয়েছে। বাংলাদেশের লিড যত বড় হবে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ততই বাড়বে। ফিফটি ছোঁয়া মিরাজ ইনিংসটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারেন কিনা সেটা দেখার।
মাসেকেসের ঘূর্ণিতে পরাস্ত তাইজুল
মিরাজকে দারুণ সঙ্গ দেওয়া তাইজুল পথ ভুললেন মাসেকেসের দারুণ এক ডেলিভারীতে। হাওয়ায় ভাসানো ধীর গতির বলে এগিয়ে এসে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন তাইজুল। বল উইকেটে পড়েই দেয় ছোবল। মিস করে স্টাম্পড হন ৪৫ বলে ২০ রান করা তাইজুল।
জিম্বাবুয়েকে দিনের প্রথম সাফল্য এনে দিলেন তরুণ তুর্কী। পেলেন নিজের চতুর্থ উইকেট। ভাঙলেন ৮৪ বলে ৬৩ রানের জুটি।
৮ উইকেটে বাংলাদেশের রান ৩৪২। লিড ১১৫ রানের। মিরাজের নতুন সঙ্গী তানজিম হাসান সাকিব।
মিরাজের দুই হাজার
নামের পাশে ১ হাজার ৯৬৪ রান নিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে মাঠে নেমেছিলেন মিরাজ। দু্যতিময় ব্যাটিংয়ে এরই মধ্যে ক্যারিয়ারের দশম ফিফটি তুলে নিয়েছেন। এই ইনিংস খেলার পথে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে দুই হাজার রান পূর্ণ করেছেন। বাংলাদেশের নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে মিরাজ পেরিয়েছেন দুই হাজার রানের মাইলফলক। ৫৩ টেস্টে ৯৬ ইনিংসে মিরাজ পেরিয়েছেন দুই হাজার রান।
একশ রানের লিড বাংলাদেশের, মিরাজ-তাইজুল জুটির পঞ্চাশ
তাইজুল ও মিরাজের জমাট ব্যাটিংয়ে দ্রুত রান তুলছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে দলের রান তিনশ পেরিয়েছে। লিডও একশ রান পেরিয়ে গেছে। যা নিঃসন্দেহে দলের জন্য স্বস্তির খবর।
মিরাজ আগ্রাসী মনোভাবে ব্যাটিং করে দ্রুত রান তুলছেন। তাইজুলও তাকে দারুণ সঙ্গ দিচ্ছেন। অষ্টম উইকেটে তাদের জুটির রানও পঞ্চাশ পেরিয়েছে।
৭ উইকেটে বাংলাদেশের রান ৩৩০। লিড ১০৩ রানের। তাদের জুটি থেকে এসেছে ৫১ রান। মিরাজ ৩৭ ও তাইজুল ১৪ রানে ব্যাটিং করছেন।
১৬ মিনিট পর খেলা শুরু
১০টা ১৪ মিনিটে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়েছিল। ১০টা ৩০ মিনিটে আবার খেলা শুরু করতে পেরেছেন অফিসিয়ালরা। ১৬ মিনিট বন্ধ ছিল খেলা।
তিনশ পেরিয়ে বাংলাদেশ, বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ
পেসার মুজারাবানির অফস্টাম্পের বাইরের শর্ট বল দেখে চোখ বড় হয়ে গেল তাইজুলের। স্কোরিং শটের সুযোগ হাতছাড়া করলেন না বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কাট করলেন। টাইমিং মিলল। ফাঁকা জায়গা দিয়ে বল চলে গেল বাউন্ডারিতে।
দিনের প্রথম বাউন্ডারি এলো তাইজুলের ব্যাটে। এই চারে ২৯৯ থেকে বাংলাদেশের রান তিনশ পেরিয়ে গেল। লিড ৭৬ রানের।
ওই চারের পর আরো এক বল খেলা হলো। এরপর বৃষ্টির বাগড়া। আপাতত খেলা বন্ধ রয়েছে।
ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গেলেন মিরাজ
আগের দিন ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে এলোমেলো করেছিলেন মাসেকেসা। অভিষিক্ত এই লেগ স্পিনার এবার তৃতীয় দিনের শুরুতেই সুযোগ তৈরি করলেন। দিনের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে মিরাজ তার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন ১৭ রানে। বাড়তি গতি ও বাউন্স থাকায় উইকেটকিপার তাফাদজওয়া সিগা বল গ্লাভসবন্দী করতে পারেননি। ক্যাচ দিয়ে মিরাজ বেঁচে গেলেন শুরুতেই। বড় বিপদ থেকে বাঁচল বাংলাদেশও।
মিরাজ-তাইজুলের ব্যাটে তাকিয়ে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে রান ৭ উইকেটে ২৯১। লিড কেবল ৬৪। স্কোরবোর্ডের এই চিত্রটা আরো সুন্দর হতে পারত। লিডটা আরো বাড়তে পারত। কিন্তু চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলায় হঠাৎ ব্যাটিং ধসে সবকিছুই পাল্টে গেল।
বাংলাদেশের ভরসা এখন মিরাজ, তাইজুল। অপরাজিত এই দুই ব্যাটসম্যান বুধবার তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করেছেন। তাদের পর আছেন হাসান মাহমুদ ও তানজিম হাসান সাকিব। লেজের এই দুই ব্যাটসম্যানও ব্যাটিংয়ে সামর্থ্য রাখেন। শেষ দিকের লড়াইয়ে বাংলাদেশ লিড কোথায় নিয়ে যেতে পারে সেটাই দেখার।
গতকাল শেষ বিকেলে মাত্র ৪ ওভার দ্বিতীয় নতুন বলে খেলা হয়েছে। আজকের সকালে ব্যাটসম্যানদের নতুন বলে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। মুজারাবানি, এনগাভারার পেসের সঙ্গে অভিষিক্ত মাসেকেসার ঘূর্ণিতে টিকে থাকতে হবে দলকে।
ঢাকা/ইয়াসিন