ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

দীপ হাতে মানবসেবায় এক রমণী

নূর মোহাম্মদ নূরু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৭, ১২ মে ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দীপ হাতে মানবসেবায় এক রমণী

শিল্পীর তুলিতে আঁকা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল

নূর মোহাম্মদ নূরু : ‘দ্য লেডি ইউথ দ্য ল্যাম্প’ খ্যাত আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত, লেখিকা এবং পরিসংখ্যানবিদ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। তিনি জীবনের সবটুকু সময় ব্যয় করেছেন মানুষের সেবায়। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে আহত সৈন্যদের পরিচর্যার মাধ্যমে নার্সিংয়ে তার অবদানের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘকাল ধরে ইউরোপের আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল ফ্রান্স, ব্রিটেন ও কিংডম অব সার্ডিনিয়ার সাথে রাশিয়ার। ১৮৫৩ সালে সেই দ্বন্দ্বই যুদ্ধে রূপ নেয়। এটি ইতিহাসে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ নামে পরিচিত। তিন বছরের সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবতার সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে বহু সেনা টাইফয়েড ও কলেরায় আক্রান্ত হয়েছিল। নাইটিঙ্গেল সেনাদের পরম যত্নে সেবা দিয়ে সারিয়ে তুলেছিলেন। এ কারণে বহু মনীষী তাকে ‘ঈশ্বরের দূত’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন।

১৮৫৪ সালে তুরস্কের বিরুদ্ধে রাশিয়া যুদ্ধ ঘোষণ করে। আত্নীয়-স্বজনের সব বাঁধা উপেক্ষা করে ফ্লোরেন্স তুরস্কের হাসপাতালে সুপারিনটেন্ডেন্ট পদে যোগ দেন। ফ্লোরেন্স ছিলেন এই হাসপাতালে সেবার প্রতিমূর্তি। দিনরাত অকাতরে তিনি রোগীর সেবা করে যেতেন। রোগীরা তার নাম দিয়েছিল ‘দীপ হাতে রমণী’। তিনি নারীমুক্তির জন্যও পূর্ণ মাত্রায় সোচ্চার ছিলেন। যুদ্ধের পর তিনি বহু দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। আজ এই মহীয়সী নারীর ১৯৫তম জন্মবার্ষিকী। ১৮২০ সালের আজকের দিনে তিনি ইতালির ফ্লোরেন্সে জন্মগ্রহণ করেন। নার্সিং পেশার পাইওনিয়ার ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিনে আমাদের শুভেচ্ছা।

নাইটিঙ্গেলের বিশ্বাস ছিল, মানবসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে তার ডাক এসেছে। ক্ষুধামুক্ত উন্নত জনস্বাস্থ্যের অধিকারী ভারতের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। ১৮৫৫ সাল থেকে তিনি নার্সিং ট্রেনিং স্কুল গড়ে তোলার জন্য তহবিল সংগ্রহে মনোযোগী হন। তার এ স্বপ্নপূরণ হয় ১৮৬০ সালে। সে বছর তিনি লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে নার্সিংকে সম্পূর্ণ পেশারূপে প্রতিষ্ঠিত করতে ‘নাইটিঙ্গেল ট্রেনিং স্কুল’ দেন। বর্তমানে এটি ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল স্কুল অব নার্সিং’ নামে পরিচিত। ১৮৬৭ সালে ডা. এলিজাবেথ ব্ল্যাকওয়েলের সঙ্গে যৌথভাবে নিউইয়র্কে চালু করেন ‘উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ’। পরবর্তী সময় তিনি ভারতবর্ষের গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর গবেষণায় মনোযোগী হন। তার এই গবেষণা ভারতবর্ষে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়নেও তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। ১৮৫৯ সালে তিনি ‘রয়্যাল স্ট্যাটিসটিক্যাল সোসাইটির’ প্রথম সারির সদস্য নির্বাচিত হন।

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল আর্ত মানবতার সেবা ছাড়াও বিভিন্ন সময় নার্সিং বিষয়ে বই লিখেছেন। ‘লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ নামে খ্যাত এই মহীয়সী নারী কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ অসংখ্য পদক আর উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। ১৮৮৩ সালে রানী ভিক্টোরিয়া তাকে ‘রয়েল রেডক্রস’ পদক প্রদান করেন। প্রথম নারী হিসাবে ‘অর্ডার অব মেরিট’ খেতাব লাভ করেন ১৯০৭ সালে। ১৯০৮ সালে লাভ করেন লন্ডন নগরীর ‘অনারারি ফ্রিডম’ উপাধি। এ ছাড়াও ১৯৭৪ সাল থেকে তার জন্মদিন ১২ মে পালিত হয়ে আসছে ‘ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং ডে’ হিসেবে। যার মাধ্যমে সম্মান জানানো হয় এক নারীকে যিনি কর্মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছেন- নার্সিং পেশার চেয়ে যেখানে সেবাটাই মূল কথা। বলা যায়, তার হাত ধরেই পেশা হিসেবে নার্সিং পরবর্তীকালে বিকশিত হয়।

নারীমুক্তির জন্য পূর্ণ মাত্রায় সোচ্চার, আধুনিক নার্সিং পেশার জননী এই মহীয়সী নারী ১৯১০ সালের ১৩ আগস্ট ৯০ বছর বয়সে লন্ডনে নিজ বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় দেহত্যাগ করেন। যুদ্ধাহতের সেবায় প্রাণপাত করা এই নারীর কথা আজীবন মনে রাখবে পৃথিবীর মানুষ।

লেখক : গণমাধ্যম কর্মী।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ মে ২০১৫/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়