ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

জনসংখ্যা বৃদ্ধি: সমস্যা থেকে সম্ভাবনা

অলোক আচার্য || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ১৫ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
জনসংখ্যা বৃদ্ধি: সমস্যা থেকে সম্ভাবনা

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্য এমন দেশ যেমন রয়েছে, তেমনি অতিরিক্ত জনসংখ্যা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে এমন দেশের সংখ্যাও কম নয়। তবে সব দেশই জনসংখ্যাকে সম্পদে রূপান্তর করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বিষয়টি সহজ নয়।

এর কারণ হলো, প্রতিটি দেশের সামর্থ সমান নয়। তাছাড়া যেসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি সেসব দেশ উন্নত নয়। দারিদ্র্য দূর করতেই দেশগুলো যখন হিমশিম খায়, তখন জনসংখ্যা বৃদ্ধির কাজটি মোকাবিলা করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসচেনতা এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাব থাকে যা জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধের অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। এদের অনেকেই আবার সব কিছু ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিতে চান।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে আমাদের কোনো সুখবর না থাকলেও, গত ডিসেম্বরে জনসংখ্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখা যায়, জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, চলতি শতাব্দীর শেষে জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধি শূন্য পর্যায়ে আসবে। ২১০০ সালে প্রতি নারীর গড় সন্তান নেওয়ার হার দাঁড়াবে ১ দশমিক ৯ জনে। বর্তমানে এই গড় দুই দশমিক পাঁচ। ১৯৫০ সালে বিশ্বে জনসংখ্যা ছিল আড়াইশ কোটি। বর্তমানে জনসংখ্যা ৭৭০ কোটি।

প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, আগামীতে জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি বাড়বে আফ্রিকায়। এশিয়ার জনসংখ্যা ৪৬০ কোটি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির দিক থেকে এশিয়ায় মধ্যে দ্রুতদের তালিকায় রয়েছে ভারত। ২০১৭ সালে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে ২০৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা হবে ৯৮০ কোটি। বলা যায় একটা বিশাল জনসংখ্যা নিয়ে ধরণী এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ‘মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস অব বাংলাদেশ’-এর তথ্যমতে ২০২০ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৬ কোটি ৭৪ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ৩৮ লাখ এবং নারী ৮ কোটি ৩৬ লাখ। গত বছর জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৫৭ হাজার। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার এবং নারী ৮ কোটি ২৭ লাখ। এই জনসংখ্যার বোঝা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। যদিও বিশ্বে এমন দেশও আছে যেখানে জন্মহার এবং মৃত্যুহার সমান। অর্থ্যাৎ জিরো পপুলেশন কান্ট্রি। তবে এই সংখ্যা হাতে গোনা। অন্য দেশগুলোতে কম-বেশি বিভিন্ন হারে জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে।

পৃথিবীর অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় এশিয়া মহাদেশে জনসংখ্যার পরিমাণ বেশি। ভৌগলিক কারণও এ জন্য খানিকটা দায়ী। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং চীনে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বসবাস করে। ২০২৭ সালেই ভারতের জনসংখ্যা খুব দ্রুত চীনকে অতিক্রম করবে। বাংলাদেশও জনসংখ্যার অবস্থানগত দিক দিয়ে জনবহুল দেশের কাতারে অবস্থান করছে। এবং ঘনবসতীপূর্ণ রাজধানী হিসেবে আমাদের তিলোত্তমা নগরী ঢাকার নাম বিশ্বের কয়েকটি শহরের পরেই শোনা যায়। বহু দিন ধরেই এ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে যে, এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তবে উন্নয়ন কার্যক্রম কতটা ফলপ্রসূ হবে? সত্যিই জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে উন্নয়নের ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রয়েছে। উন্নয়নের স্বাদ প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমিয়ে আনার পাশাপাশি জন্ম ও মৃত্যুহারে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

প্রতি বছর ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন করা হয়। জনসংখ্যা দেশের সম্পদ নাকি বোঝা- বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত। জনসংখ্যা দারিদ্র্য সৃষ্টি করে কিনা নির্ভর করে জনসংখ্যাকে কীভাবে তৈরি করা হয় তার ওপর। যেমন প্রতিটি মানুষ যদি শিক্ষা লাভের আওতায় আসে, প্রযুক্তি জ্ঞানের অধিকারী হয় এবং আত্ননির্ভরশীল হওয়ার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয় তাহলে সে নিজেকে সম্পদ হিসেবেই গড়ে তোলে। প্রতিটি মানুষই একজন সম্পদ। এ জন্য তাকে পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে হবে। সবসময় রাষ্ট্রের এই সক্ষমতা পুরোপুরি থাকে না। ক্রমে তা অর্জন করতে হয়। বিশাল জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যদি বাসস্থানের সুযোগ, কাজের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি, আবাদী জমি রক্ষা, পুকুর ডোবা ভরাট থেকে বিরত থাকাসহ নানা পদক্ষেপ নিতে না পারলে সমাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য সবকিছুই প্রয়োজন যা একজন নাগরিক রাষ্ট্রের কাছে দাবি করতে পারে। ক্রমেই সেই চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। আজ যেমন পথশিশুরা অবহেলায় বা অনাদরে বড় হচ্ছে, যাদের এই সমাজে শিক্ষা থেকে সবকিছু পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তা পাচ্ছে না। এ ধরনের অধিকার না পাওয়াদের সংখ্যাও বাড়তে থাকবে। যা আমাদের দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করবে। শুধু তাই নয়, সমাজে তখন বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে, অস্থিরতা বাড়তে পারে, দ্বিধাগ্রস্থ যুবকের সংখ্যা বাড়তে পারে যারা আমাদের দেশের সম্পদ হতে পারতো। কিন্ত তাদের সেই মেধা, সেই যোগ্যতা কাজে না লাগাতে পারলে জনসম্পদ রূপান্তর করা কঠিন।

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে সফল করতে হলে সবার মধ্যে চাই সচেতনতা। সচেতন না হলে কোনো কার্যক্রমই ফলপ্রসু হবে না। ব্যর্থতার আবর্তেই সব ঘুরপাক খাবে। ১৫-১৬ কোটি মানুষের এই দেশে ইতোমধ্যেই জনসংখ্যার অতিরিক্ত বৃদ্ধিজনিত কারণে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাল্যবিবাহ রোধ করা জরুরি। যদিও গ্রামাঞ্চলে বিষয়টি আশঙ্কাজনক হারে রয়ে গেছে। পত্রিকায় এ ধরনের বিয়ে ঠেকানোর খরব চোখে পড়ে। আবার চোখে পড়ে জেএসসি বা এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে অনেকেই অনুপস্থিত থাকে কেবল বাল্য বিয়ের কারণে। প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে সঠিক ধারণা গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে। কারণ কুসংস্কার এবং অজ্ঞানতা থেকে মানুষকে বের করতে না পারলে সপ্ন অধরাই থেকে যাবে। আমাদের সম্পদ সীমিত। এ দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমি মনে করি সবচেয়ে বড় সম্পদ এই আমরা- মানুষ। আমি আবারো জোর দিয়ে বলছি- প্রতিটি মানুষই বড় সম্পদ। এই সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে। করতে হবে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর।

 

ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়