বাংলাদেশের বিপক্ষে হার, মরগানের ইংল্যান্ডের ফাইট ব্যাক
লন্ডন থেকে ইয়াসিন হাসান : ধারাভাষ্যে নাসির হুসেন বললেন, 'বাংলাদেশ টাইগার্স নক্টড ইংল্যান্ড লায়ন্স আউট অব দ্য ওয়ার্ল্ডকাপ। ওয়ান অব দ্য গ্রেটেস্ট পয়েন্ট অব বাংলাদেশ হিস্টরি, ওয়ান অব দ্য লোয়েস্ট অব ইংল্যান্ড…।’ বিশ্বকাপ মঞ্চে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়, ইংল্যান্ডের বাজে হারের ব্যাখা এভাবেই দিচ্ছিলেন প্রাক্তন ইংলিশ অধিনায়ক নাসির হুসেন।
অ্যাডিলেডে সেই রাতে বার্ঘের গর্জন টের পেয়েছিল ইংল্যান্ড। জেমস অ্যান্ডারসনকে রুবেল হোসেন যখন বোল্ড করলেন তখন ক্যামেরা খুঁজে বেরাচ্ছিল এউয়ন মরগ্যানকে। ইংলিশ অধিনায়ক রুবেলের বলে তুলে মারতে গিয়ে সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শূন্য রানে। ড্রেসিং রুমে বিমর্ষ হয়ে বাংলাদেশের বিজয় উল্লাস দেখছিলেন মরগান। পাশেই ছিলেন জো রুট। সেদিনের ড্রেসিং রুমের কথা গণমাধ্যমে ভাগাভাগি করেছিলেন স্টুয়ার্ট ব্র্ড, ‘মরগান বলছিল, ‘‘ওহ মাই গড…এটা তো হওয়ার কথা ছিল না’’। আশা করছি এরকম তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাকে তাড়িয়ে বেড়াবে না।’
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে তাদের ক্যাম্পেইন বাজে কেটেছিল। বড় ম্যাচগুলোতে হারের তিক্ত স্বাদ পেয়েছিল ইংলিশরা। বাংলাদেশ ইংলিশ শিবিরে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন। র্যাঙ্কিংয়ে নয় নম্বরে থাকা দল বাংলাদেশের বিপক্ষে হেরে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন ভাঙ্গে।
সেই রাতের পর নতুন ভোরে পুরো ইংল্যান্ড দল নতুন শপথ নিয়ে নতুন মিশনে নামে। চার বছর পর ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ। যে করেই হোক শিরোপা খরা কাটাতেই হবে। কথা মতো কাজ। মরগানকে দীর্ঘ পরিকল্পনায় দেওয়া হয় দায়িত্ব। পুরোনো অধিনায়ক নতুন তত্ত্ব নিয়ে শুরু করে যাত্রা। আগ্রাসন ও অকুতোভয়। নাসির হুসেন শনিবার ডেইলি মেইলে এক কলাম লিখেছেন,‘আক্রমণাত্মক, নির্ভীক ও নির্মম; মরগানের জন্য এ তিনটি বিশেষণ শ্রেয়।’
‘আমরা কি করতে যাচ্ছি, কি পেতে চাচ্ছি তা ঠিক করে নেই বিশ্বকাপের পরপরই। এর জন্য প্রয়োজন ছিল দীর্ঘমেয়াদী অধিনায়কত্ব। ওর ব্যাটিং ছিল দলের প্লাস পয়েন্ট। নতুন করে নিজেকে সে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে পরিচালনার জন্য প্রস্তুত হয়। ’ – বলেছেন ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট দলের নির্বাচক অ্যান্ডু স্ট্রাউস।
অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস ইংল্যান্ড অধিনায়ক থাকার সময়ে মরগানের অভিষেক। স্ট্রাউস দায়িত্ব ছাড়ার পর মরগানের কাঁধে আসে ইংলিশদের দায়িত্ব। ১৫’র বিশ্বকাপ ভালো না হলেও এরপরই পাল্টে যায় সব। খেলোয়াড়দের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে নিজের মতো পারফর্ম করতে তাঁতিয়ে দেন। ব্যাটসম্যানরা পেয়ে যান লাইসেন্স টু কিল এর পারমিশন। বোলারদের হয়ে উঠতে বলেন ভয়ডরহীন। তাতে পুরো দল হয়ে উঠে অকুতোভয়।
ওয়ানডেতে শেষ চার বছরে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইংল্যান্ডের পারফরম্যান্স যতটা ধারাবাহিক ছিল তাতে একটি শিরোপা তাদের প্রাপ্য। হয়তো এবারের বিশ্বকাপ তাদের ভাগ্যেই লিখা আছে। শেষ চারের বছরের পার্থক্য কি? মরগান আবেগী হয়ে বুঝিয়ে দিলেন, ‘পার্থক্য বিশ্লেষণ করা কঠিন, তবুও যদি করতে হয় বলব, আমরা ভালো করার জন্য যথেষ্ট বড় হয়েছি। আমরা জীবনের যে বৃত্তে ঘুরছি, হয়তো সেই বৃত্তের শেষ এখানেই হতে পারে।’
শেষ চার বছরের সফরকে মরগান নিজের ভাষায় বিশ্লেষণ করেছেন এভাবে, ‘আমি বাদ পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি সবাইকে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছি।’ লক্ষ্যে পৌঁছানোর ইচ্ছে এবং তাড়না থাকলে জয় যে একদিন আসবে তা নিশ্চিত। সেই জয়ের থেকে মরগান মাত্র এক পা দূরে। লর্ডসে ইংল্যান্ডের আরো একটি ভালো দিনের অপেক্ষায় মরগান। তাহলেই পেয়ে যাবেন অমরত্বের স্বীকৃতি। হয়ে উঠবেন ইংল্যান্ডের হাজারো তরুণের আইকন। পোস্টারবয় থেকে হবেন বিলবোর্ড তারকা।
‘বিশ্বকাপের ফাইনাল আমার কাছে বিশেষ কিছু। শুধু আমার না, যারা ড্রেসিং রুমে আছে। আজ আমরা ফাইনালে। শেষ চার বছরে আমরা যে পরিশ্রম করেছি তারই ফল এটি। আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানের ক্ষুধা ছিল। আমাদের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল। আমাদের সুযোগ আছে ট্রফি জয়ের।’
‘আমরা নই, পুরো দেশের মানুষ ইংল্যান্ডের শিরোপা জয়ের অপেক্ষায় আছে। তারা যথেষ্ট সমর্থন করছেন। এই দলটির অংশ হতে পেরে আমি বেশ খুশি। আশা করছি সবার প্রত্যাশা মেটাতে পারব। বিশ্বের সেরা দুটি শক্তিশালী দল ভালো ক্রিকেট খেলতে পারবে। প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক ক্রিকেটের মধ্য দিয়ে যাবে বিগ ফাইনাল।’ – বলেছেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক মরগান।
রাইজিংবিডি/লন্ডন/১৩ জুলাই ২০১৯/ইয়াসিন/আমিনুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন