ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

এমিরেটস এয়ারলাইনসের কাণ্ড!

উদয় হাকিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৩০ আগস্ট ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এমিরেটস এয়ারলাইনসের কাণ্ড!

এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি বিমান

উদয় হাকিম, সেন্ট কিটস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) থেকে : রাত সাড়ে নয়টায় ফ্লাইট। ঢাকা থেকে দুবাই। সেখান থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দর। এরপর এন্টিগা হয়ে সেন্ট কিটস। লন্ডন পর্যন্ত এমিরেটসের ফ্লাইট। বাকি পথ পাড়ি দিতে হয় ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে।

 

সন্ধ্যা ৭টার কিছু আগে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে চলে এলাম। সিকিউরিটি স্ক্যানিংয়ে জিজ্ঞেস করল লাগেজে এগুলো কী?  বললাম, মোবাইল ফোনসেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিয়ে যাচ্ছি।

 

বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট সিরিজের স্পন্সর ওয়ালটন। খেলোয়াড়দের প্রাইজ হিসেবে এগুলো নিয়ে যাচ্ছি। স্ক্যানিংয়ে দুজন ছিলেন। একসঙ্গে বলে উঠলেন, গুড।

 

এমিরেটস কাউন্টারের বিজনেস ক্লাস ডেস্কে এক মহিলা। দুটো বোর্ডিং পাস দিলেন। ঢাকা টু দুবাই। দুবাই টু লন্ডন। কিন্তু বাকি বোর্ডিং পাস? ভদ্র মহিলা যেন আকাশ থেকে পড়লেন। বুঝলেন না কিছুই। আমি টিকিট দেখিয়ে বললাম, লন্ডন থেকে এন্টিগা...। টিকিট দেখলেন অনেকক্ষণ। বললেন, বুঝলাম না টিকিটের কিছুই। বুঝিয়ে দেন তো। আমি বোঝালাম। উনি বুঝলেন না। এদিকে প্যাসেঞ্জার লাইন লম্বা হয়ে যাচ্ছে। বললেন, বিমানে ওঠার সময় আমি থাকব। সেখানে জিজ্ঞেস করবেন।

 

আমি লাগেজ কালেক্ট করব কোত্থেকে? বললেন, লন্ডন থেকে। কেন একই বিমানবন্দর দিয়ে যাচ্ছি। লাগেজ তো সোজা গন্তব্যে চলে যাবে। ভদ্র মহিলা বুঝলেন না। চলে এলাম ইমিগ্রেশনে। এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে ওঠার সময় উনাকে আর দেখলাম না।

 

দুবাই হয়ে গ্যাটউইকে আরামেই এলাম। বিজনেস ক্লাস বেশ উপভোগ্যই বলা চলে। গ্যাটউইকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ কাউন্টার থেকে আবার বোর্ডিং পাস নিলাম। লাগেজ কোত্থেকে নেব? কাউন্টার থেকে বললেন, শুরুতেই ভুল করেছেন। ঢাকা থেকেই সব বোর্ডিং পাস নিলে লাগেজ সরাসরি চলে যেত সেন্ট কিটসে। এখন ইমিগ্রেশন পার হয়ে আবার ঢুকতে হবে। কি আর করা।

 

এদিকে একই ফ্লাইটে বিসিবি পরিচালক ও সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয় আছেন সস্ত্রীক, আছেন ক্রিকেটার শুভাগত হোম, রবিউল শিপলু, শফিউল ইসলাম সুহাস। তাদের লাগেজ অবশ্য সরাসরিই যাচ্ছে। যদিও দুবাই এসে তারা হিথ্রোর বদলে গ্যাটউইকের টিকিট নিয়েছেন! কপাল আমার!

 

ইমিগ্রেশন পার হয়ে লাগেজ বেল্টে গেলাম। ছোট বেল্ট বলে দুটোতে লাগেজ আসছে। দুটোর দিকেই খেয়াল রাখলাম। অপেক্ষা। সব লোক চলে যাচ্ছে। কিন্তু আমার লাগেজ পাচ্ছি না। ব্যাপার কী? ওদিকে কানেকটিং ফ্লাইটের সময় হয়ে গেছে। ভেতরে অস্থিরতা বাড়ছে। লাগেজ নেই। যাবে কই। কী করব এখন? বাইরে বৃষ্টি। ভেতরে এসির ঠান্ডা বাতাস। তার মধ্যে ঘামছি!

 

হঠাৎ দেখলাম বড় পলিথিনের ভেতর একটা ছেঁড়া ব্যাগ। তাতে মালপত্র এলোমেলো। এটা তো আমার না? হ্যাঁ তাইতো! কিন্তু এ রকম কেন? ফাঁকা ময়দানে কেবল দুজন আমরা। বাংলাদেশ থেকে আসা এক মহিলা অপেক্ষা করছেন লাগেজ নিতে কেউ আসবে, তারপর যাবেন। জিজ্ঞেস করলেন ব্যাগের এ অবস্থা কেন? কি বলব?

 

একপাশে টেনে নিয়ে পলিথিন খুললাম। ভেতরে চেইন কিছুটা খোলা। প্রথমে ওপরের দিকের চেইন কোনো কিছু দিয়ে খুলে ফেলেছে। পরে দেখেছে এটা মূল চেইন না। ব্যাগ বড় করার জন্য। পরে নিচের দিকের চেইন খুলে ফেলেছে। মালপত্র, কাপড়চোপড় সবকিছু লন্ডভন্ড, তছনছ। বেশির ভাগ জিনিসপত্র ব্যাগের বাইরে। স্যুভেনির মগ, ওয়ালটনের ওয়ালেট, টি-শার্ট, জামাকাপড় সব এলোমেলো। দ্রুত দেখার চেষ্টা করলাম কী কী নেই। অন্য সবকিছু এলোমেলো, কিছু নষ্ট হলেও সংখ্যায় ঠিক আছে। নেই কেবল চারটা মোবাইল ফোন সেট! সবচেয়ে দামি যে চারটি!


হাহুতাশ করার সময় নেই। দ্রুত বেরোতে হবে। নইলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফ্লাইট মিস করব। চেইন ঠিক করে মালপত্র ব্যাগে ভরে দে ছুট। হঠাৎ সামনে পড়ল ইমিগ্রেশন পুলিশ। মনে হলো ওদের ব্যাপারটা জানানো দরকার। ওরা দেখিয়ে দিল অভিযোগ ডেস্ক। ওখানে অভিযোগ করো।


অভিযোগ ডেস্কে দুজন বসা ছিলেন। মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। সাদা কাগজে পুরো নাম ঠিকানা, ফোন নম্বর লিখতে বললেন। ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে বললেন। কিন্তু মিনিট দশেক পর কিছু কাগজ ধরিয়ে দিলেন। বললেন, থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে হবে। এই কাগজ সঙ্গে নিয়ে যাও। কোন থানায় যাব? বললেন, তোমার যে থানায় ইচ্ছে! লন্ডনে, দুবাইতে না ঢাকায়? কোথায় পুলিশের কাছে যাব? সেটাও নাকি তারা জানেন না!

 

ভেবেছিলাম যাওয়ার পথে অভিযোগটা করে যাই। কি লাভ? শুধু সময় নষ্ট। আবার সিকিউরিটি চেকিং, ইমিগ্রেশন, লাগেজ ড্রপ। সব করে উঠলাম ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে। ক্যারিবিয়ান সাগর আর আটলান্টিকের ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। কখন শেষ হবে এই পথ!

 

এন্টিগা এলাম। সুন্দর দ্বীপ। এখানে ফ্লাইটের ৯০ শতাংশ যাত্রী নেমে গেল। ভয় আমার। আবার না আমার লাগেজ এখানেই থেকে যায়! এন্টিগা থেকে সেন্ট কিটস ১৫ মিনিটের আকাশপথ। তার জন্য বিমানে বসে থাকলাম ৫০ মিনিট। আবার উড়াল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দ্বীপগুলো একেকটা আলাদা রাষ্ট্র। আলাদা বিমানবন্দর, ইমিগ্রেশন।

 

সেন্ট কিটস বিমানবন্দরের অ্যারাইভাল লাউঞ্জে এক ভদ্র মহিলা আমার নাম লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে। হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলেন। পাসপোর্ট দিলাম। উনিই ইমিগ্রেশনে সিল মেরে আনলেন। আমি ভিআইপি কক্ষে অপেক্ষা করছিলাম। টানা ৩২ ঘণ্টার জার্নি। ক্লান্ত।

 

সেন্ট কিটসে লাগেজ তাড়াতাড়িই পেলাম। অবশ্যই অক্ষত। ১০ মিনিটের পথ টিম হোটেল ম্যারিয়ট। সেখানেই আমার থাকার ব্যবস্থা। ১০ মিনিটের জন্য ২০ ডলার ভাড়া। বুঝলাম এ শহর খুব এক্সপেনসিভ।

 

রাতে দুর্জয় ভাই, বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার হাবিবুল বাশার সুমন ভাই, বাংলাদেশ থেকে আসা তিন সাংবাদিক, টোটাল স্পোর্টসের মঈনুল ভাই, তানভির ভাই দাওয়াত খেতে গিয়েছে আমিরুল আলম সাহেবের বাসায়। বাংলাদেশের হাটহাজারীতে তার বাড়ি। থাকেন সেন্ট কিটসে। ওখানে ঘুরেফিরে সবাই জানতে চাইছেন আমার লাগেজ প্রসঙ্গ। দুর্জয় ভাই, সুমন ভাইসহ সবার ধারণা, এটা ঢাকা থেকেই হয়েছে। তাদের বিস্ময় এমিরেটস এয়ারলাইনস এমন একটা কাণ্ড করতে পারল!

বিষয়টা কাকতাল। এমন একটা ঘটনার জন্য কী না কে জানে, ওই ফ্লাইটের বিজনেস ক্লাসের  যাত্রীদের একটা করে গিফট বক্স দেয় এমিরেটস। আমাকে দু’বার সাধলেও ওদের গিফট বক্স নিই নি।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ আগস্ট ২০১৪/সন্তোষ/এএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়