ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে পলি অপসারণ শুরু

বি এম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৬, ২৯ আগস্ট ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে পলি অপসারণ শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর : যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে পলি অপসারণ শুরু হয়েছে। আজ সোমাবর ওই এলাকায় পলি অপসারণ কাজের উদ্বোধন করেন যশোর-৫ আসনের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য।

 

তবে, আপদকালীন হিসেবে এই পলি অপসারণ করে বন্যা কবলিত এলাকার পানি নিষ্কাশন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

তবে অভয়নগর, কেশবপুরের হরিহর, ভদ্র ও শ্রীহরি নদীর পলি অপসারণ কাজ এখনো শুরু হয়নি। মঙ্গলবার নাগাদ ওই এলাকায় পলি অপসারণ কাজ শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে ভবদহ স্লুইচ গেট এলাকায় পলি অপসারণে তিনটি উভচর (এমফিভিয়েন) মেশিন আনা হয়। 

 

দুই দফার ভারি বর্ষণে যশোরের মণিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগর উপজেলার প্রায় ৪০০ গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবতের জীবনযাপন করছে। খাবার, সুপেয় পানি, পয়নিষ্কাশন, যোগাযোগ, ফসল, মাছের ঘের, পুকুর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংকট বেড়েই চলেছে। এর ফলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়। সর্বশান্ত মানুষের হাহাকার নিবারণের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জনপদের পানি নিষ্কাশন জরুরি বলে মনে করছেন বানভাসিরা। হাজার হাজার পরিবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে রাস্তাসহ প্রায় ২০০টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।  

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ১৯৬১ সালে ভবদহ অঞ্চলে যশোর জেলার মনিরমাপুর উপজেলার আড়পাতা, বিল কপালিয়া, অভয়নগর উপজেলার দামুখালী, ভবানীপুর, দত্তগাতি, বারান্দী, চুমড়ডাঙ্গা ও খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার কাটেঙ্গা, চেঁচুড়ি, বরুণাসহ ৫২ বিলের পানি নিষ্কাশনে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়। বর্ষা মৌসুমে ৫২ বিলের বৃষ্টির পানি ভবদহ স্লুইস গেট দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। ১৯৮৬ সালে স্লুইস গেটে পলি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এরপর ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় ভবদহ অঞ্চলের বিলপাড়ের কুলটিয়া, মশিয়াহাটি, মহিষদিয়া, পোড়াডাঙ্গা, সুজাতপুর, ডুমুরতলা, হাটগাছা, সুন্দলীসহ কয়েক শত গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়ে।

 

সোমাবর পলি অপসারণ কাজের উদ্বোধন করেন যশোর-৫ আসনের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য। এ সময় হাজার হাজার উৎসুক জনতা ভবদহ স্লইচ গেট এলাকায় ভিড় করে। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু, পৌর মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসান, অভয়নগর উপজেলা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক, ইউপি চেয়ারম্যান বিষ্ণুপদ দত্ত, মশিয়ূরর রহমান, আবুল হোসেন, প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান, সিরাজুল ইসলাম, মিনতি রানী বিশ্বাস প্রমুখ।

 

পলি অপসারণ স্থলে উপস্থিত জলাবদ্ধতার শিকার মণিরামপুরের কাটেঙ্গা গ্রামের হাফিজুর রহমান, নজরুল ইসলামসহ অনেকে বলেন, ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়ার ভদ্রা নদী সংলগ্ন কেওড়াতলা পর্যন্ত পলি অপসারণ করা হলে তাদের বাড়ি-ঘরে জমে থাকা পানি নেমে যাবে।

 

দত্তাগাতি গ্রামের নিরঞ্জন হালদার বলেন, ড্রেজিং শুরু হয়েছে। কাজটুকু শতভাগ স্বচ্ছতার মধ্যে হলে দুর্গত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কমবে।

 

এ প্রসঙ্গে ভবদহ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মতলেব সরদার বলেন, এটি সাময়িকভাবে বন্যাকবলিত মানুষের উপকারে আসবে। দীর্ঘমেয়াদী সুফল আনায়নে টিআরএম’র বিকল্প নেই।

 

জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, পলি অপসারণের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এটি স্বল্প মেয়াদী কাজ। এতে বন্যাকবলিত মানুষ সাময়িক উপকৃত হবে। স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে টিআরএম’র বাস্তবায়ন জরুরি। পরবতীতে সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

 

অপরদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড কেশবপুরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবদুল মোতালেব জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে পলি অপসরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হরিহর, আপার ভদ্রা, বুড়ি ভৈরব নদের সংযোগ স্থল থেকে দক্ষিণে ৮ কিলোমিটার কাশিমপুরে শ্রীনদীর সংযোগ স্থল পর্যন্ত ড্রেজিং করে পলি অপসরণ করা হবে। এ জন্য একটি ড্রেজিং মেশিন আনা হয়েছে। সেটি প্রস্তুত করা হচ্ছে। আশা করছি কাল (মঙ্গলবার) থেকে কাজ শুরু হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/যশোর/২৯ আগস্ট ২০১৬/বি এম ফারুক/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়