উত্তরায় ৩ লাশ : ‘হাতাশা থেকে আত্মহত্যা’
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : রাজধানীর উত্তরার উত্তরখানের ময়নারটেকের বাসায় মা ও দুই সন্তানের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে পারছে না পুলিশ। তবে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলছেন, তারা আত্মহত্যা করেছেন।
গত রোববার রাতে জাহানারা বেগম মুক্তা, তার মেয়ে তাসফিয়া সুলতানা মিম ও তার ছেলে মুহিব হাসানের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাক্তার সোহেল মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পুরো ঘটনাটি আত্মহত্যা। আগে মা ও মেয়ে ফাঁস নিয়ে এবং পরে ছেলে নিজেই গলা কেটে আত্মহত্যা করেন। এমনটিই আপাতত মনে হচ্ছে। তারপরও বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলোর রিপোর্ট পেলে বিষয়টি আরো নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
অবশ্য এর আগে সোমবার সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে ৭২ ঘণ্টা আগে তাদের হত্যা করা হয়েছে। হত্যার অনেক আলামত এই সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে।’
বুধবার দুপুরে উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার হাফিজুর রহমান রিয়েল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বাসার দরজার ছিটকিনি ভেঙে তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ভেতরের কক্ষ থেকে একটি চিরকুট মিলেছে। চিরকুটটি মোবাইলফোন দিয়ে চাপা দেওয়া ছিল। এ ছাড়া, বাসার আশপাশেও ঠিকমতো তল্লাশি করা হয়েছে বাইরে থেকে কেউ ভেতরে প্রবেশ করেছিল কিনা। তাও খতিয়ে দেখা হয়। কিন্তু বুধবার দুপুর পর্যন্ত এমন কোনো আলামত মেলেনি। এ কারণে আপাতত ধরে নেওয়া হচ্ছে তারা আত্মহত্যা করেছেন। তাদের রেখে যাওয়া চিরকুটের সূত্র ধরে কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
নিহতের দেবর হাসান উল্লাহ বলেন, ‘আমার ভাবি জাহানারা বেগম মুক্তা গৃহিণী ছিলেন। ছেলে মুহিব হাসান বেকার আর মেয়ে তাসফিয়া সুলতানা মিম শারীরিক-বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। আমার ভাই সরকারি কর্মচারী ছিলেন। দুই বছর আগে হার্ট অ্যাটাকে ভাই মারা যান। তারপর থেকে পেনশনের টাকায় মুক্তার পরিবার চলছিল। এ ছাড়া, আত্মীয়-স্বজনরাও সাধ্যমতো পাশে দাঁড়াতেন। তাদের তেমন কোনো আর্থিক সংকটও ছিল না। ভাতিজির বয়স ২০ বছর। সে প্রতিবন্ধী ছিল। তাকে নিয়ে পরিবারের সবাই উদ্বিগ্ন থাকতেন। তার ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিবারটি হতাশাগ্রস্তও ছিল। কারও সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ ছিল না। অতিরিক্ত হতাশা থেকে ওই তিনজন আত্মহত্যা করতে পারেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিহত জাহানারার বাড়ি কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বাড়িকান্দি গ্রামে। স্বামী ইকবাল হোসেনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা জগন্নাথপুর গ্রামে। ইকবাল হোসেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়নে বোর্ডে চাকরি করতেন। তিনি মারা যাওয়ার পর থেকেই দুই সন্তানকে নিয়ে জাহানারা ঢাকার কাফরুলে তার বোনের বাসার পাশে থাকতেন। আড়াই মাস আগে তারা তিনজনই ভৈরবে চলে যান। সেখান থেকে পুনরায় ঢাকায় এসে উত্তরখানের ময়নারটেকে বাসা ভাড়া নেন। চলতি মাসের ৫ তারিখে তারা ময়নারটেকের ভাড়া বাসায় উঠেন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ মে ২০১৯/মাকসুদ/সাইফুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন