ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

শোকাবহ আগস্ট

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের শপথ নিতে হবে

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ১ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের শপথ নিতে হবে

বাঙালির শোকের মাস, বেদনার মাস রক্তঝরা আগস্ট । এ মাসেই জাতির স্বাধীনতার স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জীবন দিতে হয়েছে ঘাতকদের হাতে। তাই ইতিহাসে রক্তের আখরে লেখা শোকাবহ মাস আগস্ট। বাঙালি জাতি যার নির্দেশে একাত্তরে শত্রুর মোকাবেলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এরপর নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজ পতাকা।

সেই জাতির জনককেই জীবন দিতে হলো এদেশেরই কিছু বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘাতকরা সেদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। ইতিহাসের যে কোন বর্বর হত্যাকাণ্ডকে হার মানায় এ ঘটনা। ওই দিন ঘৃণ্য নরপশুরা একে একে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে।

জঘন্যতম এ হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা পাননি বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মণি, বেগম আরজু মণি, কর্নেল জামিলসহ ১৬ জন। শুধু বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় বেঁচে যান। সে দিনের এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ ও চেতনাকে মুছে ফেলার চেষ্টা শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে তারা ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল পাকিস্তানি ভাবধারায়। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। এই আগস্টে তাই নতুন করে শপথ নিতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে আরো এগিয়ে নেয়ার। দেশের মানুষ এই পুরো আগস্ট মাসে গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টে নিহত  শহীদদের।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে এর বিচারের পথ রুদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসার পর কলঙ্কিত সেই অধ্যাদেশ বাতিল এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করা হয়। দীর্ঘ দিনের পাহাড়সম সমস্যার সামনে দাঁড়িয়েও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়। আর নানা চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের চূড়ান্ত রায় হয়। এরপর পাঁচ ঘাতকের ফাঁসি কার্যকর করার মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হয়েছে। তবে জাতি এখনো বঙ্গবন্ধুর বাকি ছয় পলাতক খুনির ফাঁসি কার্যকর করতে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে ।

এই আগস্টেই ঘটেছিল জাতির ইতিহাসের আরও একটি মর্মান্তিক ঘটনা। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো হয়েছিল ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলা। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে চালানো ওই গ্রেনেড হামলা থেকে অল্পের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রাণে বেঁচে গেলেও ঝরে গিয়েছিল মহিলা আওয়ামী লীগ নেতা আইভি রহমানসহ ২৪টি তাজা প্রাণ।

তবে ষড়যন্ত্র যেন এখনো শেষ হয়নি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে এখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিরাজ করছে। দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বদলেছে। ১৫ আগস্টের সাজাপ্রাপ্ত খুনীদের কেউ কেউ এখনও পলাতক। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করার চেষ্টা আরও জোরদার করা প্রয়োজন। শোকাবহ এই আগস্টে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে আরো এগিয়ে নেয়ার শপথ নিতে হবে। একটি সুখী সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কেবল বঙ্গবন্ধুসহ সব শহীদের রক্তঋণ শোধ করা সম্ভব।

 

 

রাইজিংবিডি/১ আগস্ট ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়