ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

এশিয়ান প্যারাডাইজ ফ্লাই কেচার

খোকন থৌনাউজাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৩, ৫ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এশিয়ান প্যারাডাইজ ফ্লাই কেচার

খোকন থৌনাউজাম : বৃহস্পতিবার, দুপুরের কড়া রোদের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম আজকেও আরেকবার ঢুঁ মেরে আসব কি না ফরেস্টে। গতকাল ভিমরাজের কাঙ্ক্ষিত শটটা মিস করা উচিত হয়নি। এরকম সুযোগ বারবার আসে না।

লিটল লিও ব্যস্ত ছুটাছুটি করছে ঘরময়। দুপুর থেকেই তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। সাইকেল চালানোটা বেশ ভালোই রপ্ত করে নিয়েছে অল্পদিনে। আগ্রহটাও তুঙ্গে। ইদানীং লক্ষ্য করছি হেলমেট ছাড়াই সাইকেল চালায়। বেশ কায়দা করে হেলমেট ঝুলিয়ে রাখে হ্যান্ডেলের সাথে। ব্যাপারটা যে আমার খুব অপছন্দের সেটা হয়ত ভুলে যায় প্রায়ই।



ফরেস্টে চোখ কান খোলা রাখতে হয়, অনুভূতি শক্তি হতে হয় তীক্ষ্ম। আলো ছায়ার ক্যামোফ্লেজে মিস হয়ে যায় কয়েক হাত দূরেই বসে থাকা কোনো বনবাসী। কথাটা মনে হতেই বিরক্তির বলিরেখা ফুটে ওঠেছিল বোধয় কপালে। আমার দিকে হঠাৎ চোখ পড়তেই ব্যস্ত হাতে হেলমেট চাপিয়ে নিল মাথায়। লিটল লিও প্রস্তুত, বের হবে এক্ষুনি।

ফোন বাজতেসে.. এগিয়ে দেখি নাজমুল ভাই। কানে চেপে ধরতেই উত্তেজিত গলা ‘খুকন ভাই! প্যারাডাইজ পাওয়া গেসে! অর্জুনায়! ছাত্তার ভাইয়ের বাড়িতে! যাবেন নাকি! লন যাই! হ্যালো! খুকন ভাই! হ্যালো!’

এদিকে বরফের মত জমে আছি আমি। ঘোর কাটিয়ে ওঠতেই আমিও চেঁচাতে লাগলাম। ‘কন কি!’ কখন খবর আসছে! ‘কি অবস্থা এখন! এখনো আছে নাকি!’ কয় জোড়া! কখন যাবেন! আমারে ছাড়া যাইয়েন না!



রাত ১২টা ২০মিনিটে হানিফে চড়ে বসলাম। নাজমুল ভাইও চলে আসলেন কমলাপুর। স্ট্যান্ডিং টিকিটে নীলসাগরে ভাসতে ভাসতে যমুনা সেতুর পূর্বপাড়ে পৌঁছালাম। তখন প্রায় দুপুর ১২টা। সিওএনজিতে অর্জুনা ৩৫-৪০ মিনিটের পথ।

সাত্তার ভাই অপেক্ষা করছিলেন ওনার কলেজেই। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করেই ছুটে গেলাম ওনার বাড়ির দিকে।



এক জোড়া ঝুটি শালিক দেখলাম বাসা বেধেছে কাঁঠাল গাছে। আরেক পাশে দেখলাম দুই জোড়া কাঠশালিক। ব্যস্ত ভঙ্গিতে মুখে খাবার নিয়ে ছুটাছুটি করছে। এরা বাসা বানায় গাছের গায়ে গর্ত খুঁড়ে। কমলা দামা বাসা বেঁধেছে আরেকটু সামনেই। ডিমে তা দিচ্ছে। এরা বেশ সাহসী, হয়ত এই সময় সব মা-পাখিরাই অনেক সাহসী হয়।

দোয়েল, লেজ ঘুরানি, রাজন, ছোট সোহেলী, উদয়ী ধলা চোখ, টুনটুনি, তিলা ঘুঘুসহ শত শত পাখির আনাগোনায় মুখরিত অদ্ভুত শান্তিময় একটা বাড়ি। গত বছর ব্রোঞ্জ ফিংগের ছবি এখান থেকেই প্রথম বারের মত পেয়েছিলাম। কয়েক হাত দূরে বসে অনেক সময় নিয়ে ফটোসেশন করেছিল ব্রোঞ্জ সুন্দরী। পাখিরা বুঝতে পারে তাদের সেফ জোন।



প্রায় আড়াইটার দিকে দেখা পেলাম আমাদের সেই বহু কাঙ্ক্ষিত স্বর্গীয় পাখি, এশিয়ান প্যারাডাইজ ফ্লাই কেচার। অন্তত তিন জোড়া!

মেঘলা আকাশ, অপর্যাপ্ত আলো, উচু ক্যানোপী কিছুই দমাতে পারেনি আমাদের। বুঝতে পারছিলাম এতো অল্প আলো আর এত দূরত্বে ছবি ভাল হবে না। তবুও আমাদের সাটার টেপায় কোনো ক্লান্তি ছিল না।

সব সময় যে ওয়াও টাইপ ছবি হতেই হবে এমন কোনো কথা নাই। কিছু কিছু পাখি দেখেও শান্তি পাওয়া যায় অনেক। আমার জন্য তো সেটা আরো হাজার গুণ বেশি ছিল। সেদিনই দ্বিতীয়বার দেখছি, প্রথম দেখেছিলাম সাতছড়ি ক্ষণিকের জন্য।



কলেজের পাশেই ছাত্তার ভাইয়ের একরুমের ছোট্ট একটা গেস্টরুম। খুবই সস্তায় সেখানে থাকা খাওয়ার ব্যাবস্থা করেছিলেন। ‘অস্ত্র জমা দিয়েছি, ট্রেনিং জমা দেইনি’ এই কথাটাই প্রমাণ করতেই যেনো রাতে নাজমুল ভাই হাতে তুলে নিলেন হারমোনিয়াম। চলল অনেক্ষণ।

পরদিন ভোর থেকে আবারো দুপুর অবধি ঘুরাঘুরি করে আর দেখা পাইনি। কিন্তু ছাত্তার ভাইয়ের আতিথিয়েতা আর এক সাথে তিন জোড়া প্যারাডাইজ দেখতে পাওয়ার সুখানুভূতিতে দুলতে দুলতে বাড়ির পথে রওয়ানা দিলাম। আবার অন্তত ১৩ ঘণ্টার যাত্রাপথ অথচ ক্লান্তি যেনো গায়েই লাগছে না! আশ্চর্য!

লেখক : ফটোগ্রাফার ও পরিবেশবাদী। শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পরিবেশ সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। বার্ডস ফটোগ্রাফি তার নেশা।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ জুন ২০১৮/হাসনাত/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়