ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মায়েদের বুঝি ছুটি থাকে না

কবি স্বরলিপি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৬, ১৪ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মায়েদের বুঝি ছুটি থাকে না

মায়ের সঙ্গে কল্যাণ কোরাইয়া

কল্যাণ কোরাইয়া : মা, যেকোনো সন্তানের জন্যই নির্ভরতার স্থান। পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ, কষ্টকে অতিক্রম করতে মা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলে যেন আরেকটি পৃথিবী পাওয়া যায়।

আমার মা পেশায় গৃহিণী। তিনি পরিবারের প্রতিটি বিষয়ের পরিচালক, নিয়ন্ত্রক, পরামর্শদাতাও। সংসারে সুখ যেমন আছে, আছে কষ্টও। দুঃখের দিনেও মাকে পরম ধৈর্য ধরে থাকতে দেখেছি। বড়জোর মা একটু চুপ হয়ে যান। কিন্তু কখনো রেগে-চিৎকার করেন না। নামের সঙ্গে তার আচরণের দারুণ মিল। মায়ের নাম শান্তি অঞ্জলি কোরাইয়া।

মাকে দেখে মনে হয়, মায়েরা বুঝি এমনই হয়। ছোট সময় থেকে মায়ের কাছে যা বায়না করেছি সঙ্গে সঙ্গে কোনো কিছু পাইনি। মা একটু সময় নিতেন। হয়তো প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর চেষ্টা করতেন। কিন্তু ঠিকই দিতেন। সঙ্গে যোগ করে দিতেন ছোট খাটো দু’একটি শর্ত। এই যেমন- এক ঘণ্টা বেশি পড়তে হবে।

সরাসরি বাবার কাছে কিছু চাওয়া হতো না। আগে মায়ের কাছে চাইতাম। মা বলতেন, বাবার সঙ্গে কথা বলে তারপর দেবেন। আর বাবাকেও দেখেছি কোনো কাজ করতে গেলে মায়ের পরামর্শ নিতেন, এখনো নেন।

মায়ের যেন ছুটি নেই। মাকে দেখে মনে হয়, মায়েদের বুঝি ছুটি থাকে না। ছোট ছোট কাজ করে চলেছেন তো চলেছেনই।

আমার দুই বোন আর আমি। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন মা-বাবা আর আমি একসঙ্গে থাকি। প্রায় দিন বাসায় ফিরতে দেরি হয়। রাত বারোটা-একটা বাজে। মা জেগে থাকেন। আমার খাওয়া দাওয়া শেষ হলে, আমি ঘুমাতে যাই; তারপর মায়ের ঘুমের সময় হয়।

এদিকে প্রতিদিন সকালে আমার বাবা মর্নি ওয়াকিংয়ে বের হন। বাবার সঙ্গেই মা ঘুম থেকে উঠে যান। সকালে উঠে নাস্তা রেডি করেন। কিছু সময় পেপার পড়েন। টেলিভিশন দেখেন। বিশেষ করে পুরোনো দিনের কোনো সিনেমা, গান, নাচ হলে মনোযোগ দিয়ে দেখতে দেখেছি। আমার যেদিন শুটিং থাকে না সেদিন বেলা সাড়ে এগারোটা-বারোটার দিকে ঘুম থেকে উঠি।

মা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে আবার একটু ঘুমিয়ে নেন কিন্তু এমন হয় না যে, আমি খাওয়ার সময় মা পাশে থাকেন না। এই হলো আমার মা।

কখনো কোনো বিষয় নিয়ে যদি রেগে যাই, একটু জোরে কথা বলি মা ভেতরে ভেতরে অনেক কষ্ট পান। কিছু বলেন না। রাতে বাসায় ফেরার পর কাছে আসেন না সত্য তবে দূর থেকে দেখেন। পুরো বাসাটা নিশ্চুপ হয়ে যায় যেন। মায়ের কাছে গিয়ে ‘স্যরি’ বলি। মা বলেন, তিনি রাগ করেননি। এমনই আমার মায়ের অভিমান।

ঈশ্বরের পরে যদি কেউ থাকে সেতো মা, আর বাবাও। বাবাকে বাদ দিলে আমি অসম্পূর্ণ হয়ে যাই!

মায়ের কাছ থেকে ধৈর্য ধারণের শিক্ষা পেয়েছি। মাকে দেখে শিখেছি সব প্রতিকূল পরিস্থিতি কীভাবে কাটিয়ে উঠতে হয়। মা আমার পাঠশালাও। মাঝে মাঝে ফেল করি। আবার ঘুরে দাঁড়াই।

মা-বাবা মাঝে মধ্যে ঢাকার বাইরে যান। যে কয়দিন ঢাকার বাইরে থাকবেন সেই কয়দিনের খাবার তৈরি করে দিয়ে যান। কাজ শেষে বাসায় ফিরে মনে হয় মায়ের চলাফেরার শব্দ পাচ্ছি না। খাবার টেবিলের খাবার পরে আছে মা নেই। মনে মনে বলি মা বেঁচে থাকুক অন্তরে। অনন্তকাল মাকে যেন কাছে পাই।

মায়ের বয়স হয়েছে, মাঝে মধ্যে অসুস্থ হন। ওষুধপত্র কিনে দিই। এক সময় মা যেমন আমার কী লাগবে বুঝে যেতেন এখন আমি বোঝার চেষ্টা করি। যেখানে যাই কিছু পছন্দ হলে মায়ের জন্য নিয়ে আসি।

এবার মা দিবস উপলক্ষে মায়ের জন্য শাড়ি কেনা হয়েছে, আমার বোনেরাও অনেক কেনাকাটা করেছেন। মা দিবসে আমরা সবাই একত্রিত হবো।

মায়ের উদযাপনটা হয়তো হবে আমাদের ঘিরে। সবাইকে একসঙ্গে পাওয়ার আনন্দ। সব ভাইবোনকে একসঙ্গে পেলে মায়ের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি চিকচিক করে ওঠে। ওই চেহারা ওই রূপ বড় বেশি নিষ্পাপ।

অনুলিখন : স্বরলিপি




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ মে ২০১৭/শান্ত/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়