ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

দিনটি কেবলই লাল-সবুজের

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৯, ২৬ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দিনটি কেবলই লাল-সবুজের

ছবি: শাহীন ভূইয়া

হাসান মাহামুদ : শামসুর রাহমান লিখেছেন, ‘স্বাধীনতা তুমি/রবি ঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।...স্বাধীনতা তুমি/অন্ধকারে খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক’। মুক্তিযুদ্ধ ছিল এক প্রবল সৃষ্টিশীল সময়। বাঙালির সৃজনশীলতার শতমুখী স্ফুরণ ঘটেছিল উত্তাল দিনগুলোতে। এসব সৃষ্টি মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, বিশ্ব জনমত গঠনে ভূমিকা রেখেছে।

এখন সময় স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগের। স্বাধীনতাকে একক আবেগে, সম্মিলিত উচ্ছ্বাসে নানান রঙে রাঙানোর। আজ ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহঙ্কারের দিন।

হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল এ বদ্বীপের মানুষ। দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় মহান স্বাধীনতা।

স্বাধীনতার ৪৭তম বছরে তাই পথে-প্রান্তরে বিজয়ের গান বাজছে, তরুণ-তরুণীরাও সেজেছে লাল-সবুজে। এমনকি ভার্চুয়াল মাধ্যমেও আজ লাল-সবুজের আধিক্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বদলে গেছে গুগলের ডুডলও।

আজ ভোরের সূর্যোদয়ের মাধ্যমে বাঙালি জাতির জীবনে সূচনা ঘটে আরো একটি ঝলমল উৎসব দিনের। মহার্ঘ্য স্বাধীনতার ৪৩তম দিবস। জাতির বীরসেনানীদের রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের সূচনা দিন। গৌরব ও স্বজন হারানোর বেদনার এ দিনে বীর বাঙালি সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করেছিল। তাই আজ গৌরব ও অহঙ্কারের দিন।

এবার এক ভিন্ন আবহে, প্রেক্ষাপটে জাতির সামনে এসেছে স্বাধীনতা দিবস। হঠাৎ করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠা জঙ্গিবাদ দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শক্ত হাতে এসব উগ্রবাদ দমনে রাখলেও মাঝে মধ্যেই জঙ্গিবাদ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে আজ স্বাধীনতা দিবসেও সিলেটে একটি বাড়িতে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

আমাদের মহার্ঘ স্বাধীনতা অর্জন পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ পথ। করতে হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম, বিসর্জন হয়েছে এক সাগর রক্ত। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পরেই ভাষার প্রশ্নে একাত্ম হয় বাঙালি। ১৯৪৮, ’৫২ পেরিয়ে ’৫৪, ’৬২, ’৬৬-এর পথ বেয়ে আসে ১৯৬৯। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে কেঁপে ওঠে জেনারেল আইয়ুবের শাসন। জনতার সাগরে উন্মাতাল স্রোতধারা। শত ষড়যন্ত্র ও সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সত্তরের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু বাঙালির হাতে শাসনভার দেওয়ার বদলে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে করতে থাকেন কালক্ষেপণ। প্রস্তুত হয় হিংস্র কায়দায় বাঙালি হত্যাযজ্ঞ। তবে ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণেই পাওয়া যায় দিকনির্দেশনা। আক্ষরিক অর্থেই তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। সেই প্রবল প্রদীপ্ত আন্দোলনের জোয়ারে ধীরে ধীরে বাঙালির হৃদয়ে আঁকা হয় একটি লাল-সবুজ পতাকা, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের ছবি।

 



যাঁদের রক্ত ও সম্ভ্রমের মূল্যে আমরা পেয়েছি মহামূল্যবান এ স্বাধীনতা, তাদের কাছে মহামূল্য ঋণ গভীর কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করার দিন আজ। মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতি আজ উৎসবের পাশাপাশি গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর বেদনায় স্মরণ করছে মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদকে। স্মরণ করছে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী তার সহকর্মী জাতীয় নেতাদের। জাতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে বীরাঙ্গনা আর শহীদমাতাদের।

সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহান এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে। সব ভবনে ও শহরের প্রধান সড়কগুলোতে উড়ছে জাতীয় পতাকা। সকালে ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে দলমত নির্বিশেষে সেখানে হাজির হয় লাখো মানুষ। ভোরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণের পরই সাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

রোববার সূর্যোদয়ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন হয়। একই কর্মসূচি পালন করে অন্যান্য দলও।

সকাল সাতটায় বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। এ ছাড়া সকাল ১১টায় টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের নেতা-কর্মীরা। শ্রদ্ধা নিবেদনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, শ্রম ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ। বিকেলে স্বাধীনতা দিবসের র‌্যালির আয়োজন করে বিএনপি।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণীতে মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও বীরত্বগাথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ এবং শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে রেডিও, টেলিভিশন, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সংবাদপত্রে বিশেষ নিবন্ধ ও অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হচ্ছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ মার্চ ২০১৭/হাসান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়