ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

রোজাদারকে দয়া ও রহমতের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে

আসিফ খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ১৪ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোজাদারকে দয়া ও রহমতের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে

আসিফ খান : মাহে রমজান দয়া ও করুণার মাস। দয়া ও রহমত হচ্ছে আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহ। স্বয়ং রাব্বুল আলামিন মানুষকে রহম করেন এই মাসে। তিনি যাকে ইচ্ছা তার অন্তরে এই রহমত দান করেন। তাই রোজাদারকেও অন্যের প্রতি দয়া ও রহমতের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।

রাসূলে করিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহ দয়ালু লোকের ওপর রহমত নাজিল করেন। আল্লাহ নিজেও দয়ালু এবং মেহেরবান। তিনি বান্দাদের দয়া প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারাও যেন ধৈর্য এবং দয়ার উপদেশ দান করে।

রমজান মাসে রোজাদার মুসলমান একজন অভাবির দুঃখ সরাসরি অনুভব করতে পারেন।  তাই রোজাদার হবেন দয়ালু মনের। ক্ষুধা, পিপাসা ও কষ্টের দাবি হচ্ছে, অন্য মুসলিম ভাইয়ের অভাব দূর করা। কিন্তু আমাদের কারো কারো মনে এই দয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করা যায় না। এর কারণও আছে। অতিরিক্ত গুনাহ ও নাফরমানীর কারণে অন্তরে মরিচা পড়ে। ফলে তা কঠোর বা পাষাণ হৃদয়ে পরিণত হয়। আল্লাহ ইহুদীদের পাপের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘তাদের অন্তর শক্ত হয়ে গেছে পাথরের মতো, কিংবা এর চাইতেও বেশি।’ –(সূরা বাক্বারা)

আবার অতিরিক্ত ভোগ বিলাসের কারণেও অন্তর শক্ত হয়ে যায়। সে জন্যই রমজানের আগমন, যেন মানুষের ক্ষুন্নিবৃত্তি ও ভোগবিলাসের ওপর লাগাম দিতে পারে।

রমজানে সব পর্যায়ের লোকের ওপর দয়া ও মেহেরবানীর অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পিত হয়। সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের জনগণের সঙ্গে নম্রতা ও দয়া প্রদর্শন করা উচিত। এ প্রসঙ্গে হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন- ‘হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মার শাসনকর্তা নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের সঙ্গে কঠোর ব্যবহার করে তুমিও তার প্রতি কঠোরতা করো; আর যে শাসনকর্তা তাদের সঙ্গে নরম ব্যবহার করে তুমিও তার প্রতি নরম ব্যবকহার করো। -(মুসলিম)

রাব্বুল আলামিন অসীম ও মহান দয়ালু। তাই তাঁর বান্দা যদি দয়া প্রদর্শন করে তিনি তাতে খুশি হন। আল্লাহ হযরত মূসা (আা.) ও হারুনকে (আ.) ফেরাউনের কাছে দাওয়াতের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা তার সঙ্গে সদয় ব্যবহার ও নরম কথা বলবে। সম্ভবত সে হেদায়েত গ্রহণ ও আল্লাহকে ভয় করতে পারে।’ (সূরা তা-হা)

প্রত্যেককে যার যার অবস্থান থেকে দয়া ও সদয় আচরণ করা উচিত। পিতা সন্তানের সঙ্গে সদয় আচরণ করবেন। তাদের সঙ্গে কঠোর ব্যবহার করলে তার পরিণতি মন্দ হয়। নবী করিম (সা.) বলেছেন, কোনো জিনিসের নম্রতা তাকে সুন্দর বানায় এবং নম্রতা প্রত্যাহার করা হলে তা মন্দে পরিণত হয়।’ –(মুসলিম ও আবু দাউদ)

শিক্ষক ছাত্রের সঙ্গে নরম ও ভদ্র ব্যবহার করবেন, দয়া ও মেহরবানী প্রদর্শন করবেন। পরবর্তীতে ছাত্ররাও শিক্ষক হয়ে দয়াবান হবেন। অনুরূপভাবে, নামাজে মুসল্লির প্রতি দয়াবান হবেন ইমাম। নামাজে তিনি দীর্ঘ কেরাত পড়ে তাদের কষ্ট দেবেন না। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কেউ যদি নামাজের ইমাম হও, তাহলে নামাজ সংক্ষিপ্ত করবে। কেননা তাদের মধ্যে রয়েছে বয়োবৃদ্ধ লোক, রোগী, কম বয়সী ও এমন লোক যার হয়তো কোনো কাজ রয়েছে।’ (বোখারি ও মুসলিম)

একবার হযরত মোয়াজ (রা.) নামাজ দীর্ঘ করায় রাসূল (সা.) তাকে তিনবার বলেন- ‘হে মোয়াজ! তুমি কি ফেতনা ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী?’ (বোখারি ও মুসলিম)

সাহাবায়ে কেরাম অভাবি ও গরীবদের প্রতি দয়া ও সহানুভূতি প্রদর্শন করতেন। আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.) কোনো ফকির মিসকিন ছাড়া ইফতার করতেন না। তিনি ইফতারের জন্য কোনো গরীব লোক না পেলে সেই রাতে না খেয়ে থাকতেন। খানা খাওয়ার সময়  কোনো গরীব লোক সাহায্য প্রার্থনা করলে নিজের ভাগের খাবারটুকু তিনি দান করে দিতেন। একবার ইমাম আহমদ (র.) রোজা ছিলেন। তাঁর ইফতারের জন্য দুটি রুটি তৈরি করা হয়। সে সময় এক ভিক্ষুক আসায় দুটি রুটিই তাকে দিয়ে দেন এবং না খেয়ে রাত কাটিয়ে দেন তিনি।

মোমিন-মুসলমানদের উচিত অনুরূপ শিক্ষা গ্রহণ এবং অভাবি ও গরীব ভাইদের প্রতি দয়া ও সহানুভূতি প্রদর্শন করা। রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে রমজানের প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের তাওফিক দান করুন। -আমিন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ জুন ২০১৬/আসিফ/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়