ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পাঁচ কারণে প্রতিবন্ধীরা বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ২৪ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাঁচ কারণে প্রতিবন্ধীরা বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : পাঁচ কারণে প্রতিবন্ধী কন্যাশিশু ও নারীরা বেশি যৌন নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হচ্ছে বলে দাবি করেছে বেসরকারি সংস্থা সীড। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য সাতটি প্রস্তাবও করেছে সংস্থাটি।

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় যৌন নির্যাতনের কারণ ও প্রতিকারের প্রস্তাব তুলে ধরে সীড।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বিশেষ করে শিশু ও নারীদের সঙ্গে সংঘটিত সহিংসতা, নির্যাতন ও নিপীড়নমূলক আচরণের বিরুদ্ধে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।

প্রতিবাদ সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সীডের প্রোগাম অফিসার এ কে এম বদরুল হক। বক্তব্য রাখেন এর চেয়ারপারসন রঞ্জন কর্মকার।

নির্যাতনের পাঁচ কারণের মধ্যে রয়েছে- প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী কন্যাশিশু ও নারী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজে থেকে বিষয়গুলো সবার সামনে তুলে ধরতে পারে না। নিউরো-ডেভেলপমেন্ড প্রতিবন্ধী (অটিজম, সেরিব্রাল পালসি, ডাইনস সিনড্রোম ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী) কন্যাশিশু ও নারী অর্থাৎ যাদের শারীরিক, স্নায়বিক বা বুদ্ধিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির পরিমাণ অনেকে গুণ বেড়ে যায়। পরিবার এসব ঘটনা গোপন রাখতে চায়।

অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের দ্বারা সহিংসতা বা যৌন নির্যাতন সংঘটিত হয়। যার প্রতিকার না করে প্রতিবন্ধী নারী বা শিশুটিকেই দায়ী করে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়।

আইন ও বিচার প্রক্রিয়ার জটিলতা এবং আইনি সহায়তা সম্পর্কে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তার পরিবার এবং তাদের নিয়ে কাজ করা কর্মীদের জানার অভাব।

প্রতিবন্ধিতার সঙ্গে অর্থনৈতিক সক্ষমতার একটি সম্পর্ক আছে। যা ন্যায় ও  সুবিচার প্রাপ্তির পদক্ষেপ গ্রহণের বড় বাধা।

সামাজিক ও পারিপার্শ্বিকতায় অনেক সময় পরিবার আপোস করে এবং আইনি সহায়তা থেকে বিরত থাকে। ফলে দোষীদের শাস্তি না হওয়ায় একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে।

সীডের চেয়ারপারসন রঞ্জন কর্মকার বলেন, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে যৌন নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হওয়ার কারণগুলো শনাক্ত করা হয়েছে।

তিনি জানান, ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়েছে নারীর প্রতি সহিংসতা বিলোপের সার্বজনীন ঘোষণা এবং এর কাঠামোগত রূপরেখা। কিন্ত প্রায় ২৫ বছর পর আজও দেখা যায়, সারা বিশ্বে প্রতি তিন জন নারীর মধ্যে একজন কোনো না কোনোভাবে শারীরিক ও যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছে।

সীডের প্রোগাম অফিসার এ কে এম বদরুল হক প্রবন্ধে জানান, প্রতিবন্ধী শিশু ও নারীদের প্রতি সহিংসতা বিষয়ে সিএসআইডি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯২ শতাংশ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার। মানসিক নির্যাতনের হার নারীর ক্ষেত্রে ৭৮ শতাংশ এবং কন্যাশিশুর ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ। শারীরিক নির্যাতনের হার উভয় ক্ষেত্রেই ৮২ শতাংশ। যৌন নির্যাতনের হার নারীর ক্ষেত্রে ৩২ শতাংশ এবং কন্যাশিশুর ক্ষেত্রে ৩৭ শতাংশ।

প্রতিবন্ধীদের নির্যাতন প্রতিরোধে কয়েকটি প্রস্তাব দেয় সীড। সেগুলো হচ্ছে- আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি অন্তর্ভুক্তকরণ। প্রতিবন্ধী সহায়ক আইনজীবী প্যানেল তৈরি। স্থানীয় সরকার এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যারা গ্রাম্য সালিশ পরিচালনায় সংযুক্ত থাকেন তাদের প্রতিবন্ধী সংবেদনশীল করার কার্যক্রম গ্রহণ। সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমের ব্যাপক প্রচার এবং তথ্যপ্রাপ্তি সহজীকরণ। প্রতিবন্ধীদের প্রতি ঘটিত সহিংসতা, যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনের ঘটনাগুলোর তথ্য সংরক্ষণ এবং তথ্যভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় বের করা। বিচার কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া। সাক্ষ্য ও অন্যান্য বিচারিক কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী বিশেষজ্ঞের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ। নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিশেষ চাহিদাকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুলাই ২০১৭/সাওন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ