ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সবুজের মায়া ছেড়ে ইট-পাথরের শহরে ফিরছে মানুষ

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৬, ১৯ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সবুজের মায়া ছেড়ে ইট-পাথরের শহরে ফিরছে মানুষ

ছবি : শাহীন ভূইয়া

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রুবেল হোসেনের ক্ষেত্রে প্রতিবারই ঘটে এমন ঘটনা। ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেলে ঢাকা আসতে আর মন চায় না। মা-বাবা আর স্বজনের ছেড়ে আসতে মন কাঁদে। সঙ্গে গ্রামের ছায়া সুনিবিড় সবুজের মায়া তাকে ইট পাথরের শহরের আসতে নিরুৎসাহিত করে। কিন্তু তারপরও প্রয়োজনে তাকে ঢাকা আসতেই হলো।

ঈদের দুদিন পর মঙ্গলবার রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে দাড়িয়ে মধুর এই সমস্যার কথা জানালেন রুবেল। শুধু রুবেল নয়, রাজধানীতে প্রয়োজনের তাগিদেই তাই সব মায়া একপাশে রেখে কর্মমুখী মানুষ ফিরছে তার চিরচেনা শহরে।
 


একটি জাতীয় দৈনিকে কাজ করেন শফিকুল ইসলাম। নড়াইলে গ্রামের বাড়ি থেকে ঈদ শেষে মঙ্গলবারই ফিরেছেন ঢাকায়। ‘আরো কিছুদিন থাকতে পারলে ভালো লাগতে’-এই আক্ষেপের কথা শুনিয়ে বলেন, ‘আসলে আমরা যারা ঢাকায় জীবিকার প্রয়োজনে থাকি, সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে আমরা বাধ্য থাকি। সেজন্য ইচ্ছে থাকলেও সময়মতো আসতে হয়।’

‘এখানে অনেক ক্ষেত্রে চাইলেও মনকে প্রধান্য দেওয়া যায় না। তবে একটু সময়ে জন্য হলেও পরিবারের সদস্যদের কাছে থাকতে পারা অনেক আনন্দের। এজন্যই দুদিন পর ফিরে আসতে হবে জেনেও শত কষ্ট করে সংগ্রাম করে ফিরে যাই গ্রামে মায়ের কোলে।’
 


ঈদের ছুটি শেষে গতকাল সোমবার ছিল প্রথম কর্মদিবস। মঙ্গলবার দ্বিতীয় কর্মদিবস হলেও বাস, ট্রেন বা লঞ্চে ফিরে আসার সেই জনস্রোত নেই। যারা একান্তই ছুটি নিয়ে যাননি তারাই ফিরে আসছেন। আর যাদের বাড়তি ছুটি রয়েছে তারা ফিরবেন আগামী শুক্র, শনিবার-এমনটাই জানাচ্ছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

ঈদে ঘরমুখো মানুষের যে ভিড় থাকে স্টেশনগুলোতে তার ছিটেফোঁটাও চোখে পড়েনি মঙ্গলবার। এখন পর্যন্ত ঢাকার রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা। রাজধানীর অফিসপাড়া মতিঝিল, শাহবাগ, হাতিরঝিল, উত্তরা, ফার্মগেট, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকার চিত্র দেখা গেছে এখনো অনেকটা নিষ্প্রাণ।
 


ঢাকা প্রবেশ পথের একটা অংশ মহাখালী বাস টার্মিনালে ঢাকামুখী মানুষের তেমন খুব বেশি ভিড় নেই। একই চিত্র যাত্রাবাড়ী, গাবতলী এলাকায়ও। তেমন চাপ নেই কমলাপুর রেল স্টেশনেও। তবে চিত্রটা পাল্টে যেতে পারে শুক্রবার। অর্থাৎ রোববারের আগে ফিরে পাচ্ছে না ঢাকার চিরচেনা রূপ এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার মতিঝিলের বিভিন্ন অফিসের কার্যালয়ে দেখা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ও কাজকর্মও খুবই কম। যারা অফিসে এসেছেন তারা একে অপরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি এবং গল্প গুজব করে সময় কাটাচ্ছেন।
 


গাবতলীয় বাস টার্মিনালের সোহাগ পরিবহনের ম্যানেজার মঈন উদ্দিন জানান, এখন পর্যন্ত ঈদ শেষে ফিরে আসা যাত্রীদের যে হার দেখা যাচ্ছে সেটি বেশি না। সম্ভবত শুক্রবার ও শনিবার ঢাকামুখী মানুষের চাপ লক্ষ্য করা যাবে।

তিনি জানান, প্রতি বছরই ঈদের একদিন পর বা দুদিন পরও অনেকে ঢাকা ঢাড়েন। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের পর এই হার মোটামুটি ব্যবসায়িক দিক থেকে সন্তোষজনক বলে জানালেন এই পরিবহন কর্মকর্তা।  

এদিকে রাজধানীর লঞ্চ টার্মিনালেও কাঙ্ক্ষিত জনস্রোতের দেখা মেলেনি। ঈদ শেষে অতৃপ্তি নিয়েই ফিরছেন ঢাকা ছেড়ে যাওয়া নগরবাসী। ১০ বছরের ছোট্ট মিমি গ্রামের দাদাবাড়ি খুব মিস করেছে। ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে জানায়, দাদাবাড়ি ছেড়ে আসতে তার ভালো লাগেনি। তার বাবা ফাহিম আহম্মেদ জানালেন, আরো কিছুদিন থাকতে চেয়েছিল মিমি। খোলা মাঠ উঠানে দৌড়াদৌড়ি করেছে সারাদিন। এসব তো সে ঢাকায় পাবে না। এজন্যই তার মন খারাপ। কিন্তু ঢাকায় কাজ থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি। তাই ফিরে আসার সময় কেঁদেছে খুব।
 


একই চিত্র রাজধানীর কমলাপুরের রেল স্টেশনের। ঈদ শেষে কর্মজীবী মানুষের পদচারণা পড়তে শুরু করেছে। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে পেরে খুশি একটি বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা মোসাদ্দেক হোসেন। তিনি জানান, খুব ভালো ঈদ কেটেছে। বাড়তি ছুটি না থাকায় তাকে ঈদের দুদিন পরই ফিরতে হয়েছে।

এদিকে ফিরতি পথে কোনো প্রকার যানজট বা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা। তারা বলছেন, খুব ভালোভাবেই ঢাকা ফিরতে পেরেছেন তারা। বিভিন্ন রুটে চলাচলরত বাস ড্রাইভাররা জানালেন, রাস্তায় বেশ ফাঁকা থাকায় তারা কোনো ঝক্কি-ঝামেলা এবং যানজট ছাড়াই ফিরতে পারছেন রাজধানীতে।          

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ জুন ২০১৮/রেজা/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়