ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘আমার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কেউ তাড়া করছে’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ২ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আমার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কেউ তাড়া করছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশের কত গুরুত্বপূর্ণ মামলা বছরের পর বছর ধরে চলছে, কত মামলা ঝুলে আছে। সেগুলো নিষ্পত্তি নিয়ে কোনো তাড়া নেই। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো পেয়েছে রকেটের গতি। যেন কেউ পেছন থেকে তাড়া করছে।

বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশিবাজারে অস্থায়ী আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে দেওয়া বক্তবে তিনি এ কথা বলেন। প্রায় ২৫ মিনিট বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়া।

এর আগে খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত হওয়ার আগেই বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৫ মিনিটে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান এজলাসে ওঠেন। এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) কাছাকাছি চলে এসেছেন যদি একটু সময় দেন। তখন বিচারক বলেন, না আসা পর্যন্ত চ্যারিটেবল মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলুক।

এরপর ওই সময় চ্যারিটেবল মামলায় আসামি পক্ষে রি-কলের সাক্ষী অমল কান্তি চক্রবর্তীকে জেরা শুরু করেন আইনজীবী আমিনুল ইসলাম। বেলা ১১টা ২৫ মিনিটের সময় জেরা চলমান অবস্থায় খালেদা জিয়া আদালতে পৌঁছান। আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া তার বসার অনুমতি নেওয়ার সময় বিচারক বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) একটু জিরিয়ে নিক, এরপর তার আত্মপক্ষ শুনানি হবে। এরপর ১১টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত ওই সাক্ষীকে জেরার পর তা শেষ হলে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, আব্দুর রেজ্জাক খান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার চ্যারিটেবল ও অরফানেজের উভয় মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন স্থায়ীর আবেদন করেন। অন্যদিকে আদালত পরিবর্তনের আবেদন এবং সাক্ষী রি-কলের আবেদন আপিল বিভাগে বিচারধীন অরফানেজ মামলার কার্যক্রম মূলতবির আবেদন দাখিল করেন।

দুদকের পক্ষে আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল জামিন স্থায়ী এবং মূলতবির আবেদনের বিরোধিতা করেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ওই সকল আবেদনের ওপর বিপক্ষে শুনানির পর বিচারক মূলতবির আবেদন নামঞ্জুর করেন এবং জামিন স্থায়ীর আবেদনও নামঞ্জুর করে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেন।

এরপর বিচারক খালেদা জিয়াকে আত্মপক্ষ শুনানির প্রস্তুতি নিতে ১০ মিনিটের সময় দিয়ে এজলাস থেকে নেমে যান। এরপর বেলা ১২টা ৫৭ মিনিটে বিচারক পুনরায় এজলাসে ওঠার পর খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন।

প্রাক্তন এ প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার এবং বিচার বিভাগ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। দেশকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করার নিরলস প্রয়াসে কখনো বিরতি দেইনি। আমি বিরোধীদলীয় নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছি। আত্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলছি না। আমার এই অবস্থান, ভূমিকা ও অবদানের বিনিময়ে বাড়তি কোনো সুবিধা বা মর্যাদা দাবি করার কোনো অভিপ্রায় আমার নেই। আমি নিজেকে আইন ও বিচারের ঊর্ধ্বে মনে করি না। আমি শুধু বলতে চাই যে, একই ধরনের মামলায় অভিযুক্ত হয়েও আরেকজন নেত্রী যেসব সুবিধা ভোগ করেছেন, আমি কখনো আদালতের কাছে তেমন কোনো সুবিধা দাবি করিনি। আমি দেশের একজন সাধারণ সিনিয়র সিটিজেনের প্রাপ্য অধিকারটুকু পেলেই খুশি। আইন সংগতভাবে ন্যায়বিচার ছাড়া আদালতের কাছে আমার আর চাইবার কিছু নেই।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজ আমার প্রতি যে ধরনের আচরণ করা হচ্ছে, তা আমার অবস্থান ও ভূমিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না এবং এর মাধ্যমে আমার প্রতি কোনো বৈষম্য করা হচ্ছে কি না-সেটা আদালতের বিবেচনার বিষয় বলে আমি মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, শেখ হাসিনার হাতে কোনো জাদুর কাঠি আছে। সেই জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতি, অনিয়ম ও চাঁদাবাজিসহ সব মামলা তিনি সরকারের আসার পর একে একে উঠে গেল অথবা খারিজ হয়ে গেল। আমাদের আর কারো হাতে তেমন কোনো জাদুর কাঠি নেই। কাজেই একই সময়ে আমাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো একের পর এক সচল হয়েছে ও গতি পেয়েছে। হয়েছে নতুন নতুন আরো মামলা। দেশের কত গুরুত্বপূর্ণ মামলা বছরের পর বছর ধরে চলছে, কত মামলা ঝুলে আছে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো পেয়েছে রকেটের গতি। যেন কেউ পেছন থেকে তাড়া করছে। শিঘ্রই শেষ করো। তড়িঘড়ি করে একটা রায় দিয়ে দাও বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। কেন, কোন উদ্দেশ্যে এবং কিসের জন্য এত তাড়াহুড়া। এই তাড়াহুড়ায় কী ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে? না কী ন্যায়বিচারের কবর রচিত হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের হাতে জাদুর কাঠি থাকলেও আমরা বলতাম না মামলা প্রত্যাহার করেন। আমরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করতাম। এখনো আদালতের কাছে কেবলই ন্যায়বিচারই প্রত্যাশা করছি। আমরা মনে করি আদালত সকল প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের প্রতি আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচার করবেন।’

খালেদা জিয়া বলেন, ন্যায়বিচারের কথা জোর দিয়ে এতবার বার আমি বলছি এর কারণ, আমার বিরুদ্ধে মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে কী না সে ব্যাপারে দেশবাসীর ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। আমরাও শঙ্কিত। আপনি জানেন, এই মামলাসহ আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভিন্ন মামলার তদন্ত ও বিচারকাজ চলার সময় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য এবং শাসকদলের কোনো কোনো নেতা আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন। আমাকে অভিযুক্ত করে বিরূপ প্রচারণা চালিয়েছেন। যেন তারা মামলার রায় কী হবে তা আগে থেকেই জানেন অথবা তারা তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে মাননীয় আদালতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। তদন্ত ও বিচারাধীন বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের এহেন অপপ্রচার শুধু ন্যায়বিচারকেই প্রভাবিত করে না বরং তা আদালত অবমাননার শামিল। এখানেই শেষ নয়। মামলার রায়ে আমার সাজা হবে এবং আমাকে কাশিমপুর কারাগারে রাখা হবে বলে ইতিমধ্যে কোনো কোনো মন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন। কোনো কোনো মন্ত্রী এবং শাসকদলের কোনো কোনো নেতা প্রায় নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন যে, আমাকে রাজনীতির অঙ্গন থেকে বিদায় করে দেওয়া হবে। আমাকে রাজনীতির অঙ্গন থেকে সরাতে এবং নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে ক্ষমতাসীনরা একটি নীলনকশা প্রণয়ন করেছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সে বিষয়ে ইতিমধ্যে রিপোর্ট, মতামত ও বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের উচ্চ মহলের কার্যকলাপ, তৎপরতা এবং বক্তব্য বিবৃতি থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। আর সেসব কারণে দেশবাসীর মনে ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে যে, আমার বিরুদ্ধে মামলাগুলোয় ন্যায়বিচার হবে না।’

এরপর তিনি বক্তব্য শেষ করে বলেন, আমাকে এখানে শেষ করতে হবে। আমার বক্তব্য শেষ হয় নাই। আরো বক্তব্য আছে পরবর্তী তারিখে দেব।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ নভেম্বর ২০১৭/মামুন খান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়