ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

এশিয়া জয় করলেন ঈশ্বরদীর তরুণ প্রকৌশলী তপন

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এশিয়া জয় করলেন ঈশ্বরদীর তরুণ প্রকৌশলী তপন

পাবনা প্রতিনিধি : মাছ চাষে স্মার্ট প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে এশিয়া জয় করেছেন পাবনার ঈশ্বরদীর তরুণ সফটওয়্যার প্রকৌশলী শফিউল আলম তপন।

দক্ষিণ কোরিয়ায় এশিয়ার বৃহত্তম বার্ষিক উদ্ভাবনী মেলায় একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে তপনের উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তিটি ছিল একমাত্র কৃষিভিত্তিক উদ্ভাবন। তপন ঈশ্বরদীর সাঁড়াগোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ঈশ্বরদী পৌরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর শামসুল আলমের একমাত্র ছেলে।

সদ্য শেষ হওয়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কোরিয়ার আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে কোরিয়ার ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন ও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইনভেনটরস অ্যাসোসিয়েশন এশিয়া মহাদেশভিত্তিক এই উদ্ভাবনী মেলার আয়োজন করে। মেলাটি হয় সে দেশের গ্যাংনাম শহরে।

পৃথিবীর ৩৩টি দেশের ৬০৬টি উদ্ভাবনের মধ্য থেকে বাছাইয়ের পর মাত্র ৪০টি উদ্ভাবনী প্রকল্প প্রদর্শনের জন্য স্থান পায় মেলায়। এর মধ্যে বাংলাদেশি তরুণ সফটওয়্যার প্রকৌশলী শফিউল আলম তপনের ব্যতিক্রমী উদ্ভাবনটি ব্যাপক সাড়া ফেলে সেখানে।

শফিউল আলম তপন জানান, কোরিয়া ইনভেনশন প্রমোশন অ্যাসোসিয়েশন-কাইপা ও কোরিয়া প্রডাকটিভিটি সেন্টার-কেপিসির আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকারী হিসেবে তার এই উদ্ভাবনটি বৃত্তি লাভ করেছে এবং প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ পুরস্কার লাভ করেছে। বাণিজ্যিক বিবেচনায় শফিউলের উদ্ভাবিত প্রকল্পটির স্বত্বও রাখবে কোরিয়া। বাংলাদেশের জন্য এটি অনন্য অর্জন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

গত কয়েকদিন ধরে ঈশ্বরদীর ছেলে তপনের এমন সাফল্যের খবর চাউর হলে এলাকায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। কয়েকদিন আগে চ্যানেল আইতে তাকে নিয়ে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানে একটি প্রতিবেদন প্রচার হলে ব্যাপকভাবে ঈশ্বরদীতে সাড়া পড়ে। এই গ্রামের ছেলে তপন কোরিয়াতে পৃথিবীর ৩৩টি দেশকে পেছনে ফেলেছে, এমন খবরে সাঁড়াগোপালপুরসহ ঈশ্বরদীতে তপনের পরিবারে, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও এলাকাবাসী দারুণভাবে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন।

কোরিয়ার এই বিশাল আয়োজনে বাংলাদেশের শফিউল আলম তপনের এই কৃষিভিত্তিক উদ্ভাবন ছিল একমাত্র। পৃথিবীতে মাছ উৎপাদনে বিশাল সাফল্যের বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য এটি বড় রকমের সুখবর বলে মনে করেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ।



তিনি বলেন, ‘উদ্ভাবক শফিউল এ মেলায় প্রতিনিধিত্ব করছেন বাংলাদেশের এ প্রজন্মের উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া অগণিত তরুণের। এখনো সে দেশে প্রদর্শিত হচ্ছে শফিউলের উদ্ভাবনী প্রটোটাইপটি। প্রকল্পটির প্রটোটাইপ দেখে বুঝে ওঠার উপায় নেই, এর উপযোগিতা বা বিশেষত্ব কত বড়।’

এসব সম্পর্কে শফিউল আলম তপন জানান, তার বাবা কৃষক, দাদাও কৃষক ছিলেন। তিনি উঠে এসেছেন এক কৃষকের পরিবার থেকেই। পাশাপাশি শৈশব-কৈশোরে বিটিভিতে প্রচারিত ‘মাটি ও মানুষ’ তাকে জুগিয়েছে কৃষি নিয়ে স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণা। তিনি ও তার স্ত্রী তানিয়া চৌধুরী দুইজনই সফটওয়্যার প্রকৌশলী। দুইজনের গবেষণার ফল একটি স্মার্ট ডিভাইস। যেটি অ্যারেটর (মাছের পুকুরে পানি কাটার দুটি প্রপেলারের সমন্বয়ে একটি যন্ত্র, যা অক্সিজেন তৈরিতে সাহায্য করে) হিসেবে কাজ করবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। পাশাপাশি খাদ্য সরবরাহ, অক্সিজেন সরবরাহ ও পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ, মাছের গতিবিধি সম্পর্কেও ধারণা দেবে। অটোচার্জিং ব্যবস্থা থাকায় যন্ত্রটি ব্যবহারেও সুবিধাজনক। প্রযুক্তির ধারাবাহিক বিবর্তনের হাত ধরেই এসেছে সফটওয়্যার প্রকৌশলী শফিউল আলম তপনের এ প্রকল্প।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় পদক প্রাপ্ত ঈশ্বরদীর মৎস্যজীবী আশরাফ আলী খান বলেন, ‘শফিউল আলম তপনের এ আবিষ্কার সময়োপযোগী। ঈশ্বরদীর মৎস্যচাষীরাও গর্বিত শফিউলের এ সাফল্যে।’

তপন জানান, কোরিয়ার গবেষণা, উন্নয়ন এমনকি বাণিজ্যিক খাতে এ উদ্ভাবনটি পেয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। বিশেষ করে কোরিয়ার ফিশারিজ ইনফরমেশন অ্যান্ড কন্ট্যান্ট টেকনোলজি অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক পার্ক ইয়ং জন এ কাজটিকে দেখছেন বিশাল এক বৈজ্ঞানিক সাফল্য হিসেবে।

তিনি জানান, বাংলাদেশি এই তরুণের এ আবিষ্কার দক্ষিণ কোরিয়া, বাংলাদেশসহ বিশ্বের মাছ চাষিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামী বছরের মাঝামাঝি যন্ত্রটি পেটেন্ট পেয়ে যাবে। তারপর শুরু হবে বাণিজ্যিক উৎপাদন।

হুন্দাই কার্ড ব্যাক স্টুডিও নামের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন ঈশ্বরদীর এই তরুণ আইসিটি বিশেষজ্ঞ শফিউল আলম তপন।




রাইজিংবিডি/পাবনা/১৪ জানুয়ারি ২০১৯/শাহীন রহমান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়