ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘সত্য বলায় ফজলুল হক মণি ছিলেন আপোশহীন’

নৃপেন রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ৪ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘সত্য বলায় ফজলুল হক মণি ছিলেন আপোশহীন’

নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণির স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, তিনি সবসময় অপ্রিয় সত্য কথা বলতেন। সত্য কথা বলার ব্যাপারে তিনি ছিলেন আপোশহীন। তিনি যা বিশ্বাস করতেন, তা লিখতেন।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডি কলাবাগান মাঠে শহীদ শেখ ফজলুল হক মণির ৭৮তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। শেখ ফজলুল হক মণির ছেলে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, প্রাক্তন যুবলীগ নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ প্রমুখ।

বঙ্গবন্ধুর বোনের ছেলে শেখ ফজলুল হক মণির রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বাঙালি জাতির প্রত্যেকটি আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন মণি ভাই। আমরা সত্তরের নির্বাচন করলাম কিন্তু তিনি করলেন না। তিনি নির্বাচন পরিচালনা করলেন। ৫৫ নম্বর পুরানা পল্টন আওয়ামী লীগ অফিসে বসে।’
 
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু জানতেন কোনোদিনই পাকিস্তান আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা দেবে না। ওরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না, আর আমারও লক্ষ্য আমাদের স্বাধীনতা। আমি বিচ্ছিন্নতাবাদী হবো না, আমি চাই ওরা হোক আক্রমণকারী। আমি হই প্রতিরোধ সৃষ্টিকারী।

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর তোফায়েল আহমেদ আরো বলেন, কত লোক কতো কথা বলে। ইয়াহিয়া খান একটা নাম উচ্চারণ করেছিলেন সেটা হল বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেছেন, আমার ভুল হয়েছে, আওয়ামী লীগকে আগেই আমার নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল। আওয়ামী লীগের নেতাদের গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ব্যক্তি জীবনে অনেক অনেক ঋণী। তিনি শুধু আমাকে রাজনীতি শিখিয়েছেন তা নয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নয় মাস ভোলা থেকে আমার পরিবার-পরিজন নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। আমার স্ত্রী আর ছোট মেয়ে, তখন তার বয়স দুই বছর। আমার স্ত্রী গ্রামে গ্রামে থাকতেন। কিন্তু মণি ভাই, কখনো ভুলেননি। তিনি আমার স্ত্রীকে প্রত্যেক মাসে তিন হাজার টাকা পাঠাতেন। সেই স্মৃতি ভেসে ওঠে।

যুবলীগ প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শেখ মণির অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট মণি ভাইকে কেন হত্যা করা হয়েছিল? আমরাও তো ছিলাম। কিন্তু মণি ভাই প্রতিরোধ গড়তে পারে। সেজন্য তাকে সস্ত্রীক হত্যা করেছে।

তিনি আরো বলেন, মণি ভাইয়ের শেষ কথা হয়, ১৪ আগস্ট রাত ১২টায়। যখন মণি ভাই বাকশালের সাধারণ সম্পাদক হয়ে গেলেন। আর আমাকে জাতীয় যুবলীগে সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই সংগঠন নিয়ে তার সাথে আমার শেষ কথা হয়।

তিনি বলেন, আজকে মণি ভাই নেই। তার কথা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি খুব সাহসী লোক ছিলেন। ভয়-ভীতি তার মধ্যে ছিল না। আর তিনি লক্ষ্যে খুব অটল ছিলেন। তিনি অনেক কিছু লিখেছেন। অনেক সময় অপ্রিয় সত্য কথা বলতেন। তাৎক্ষণিক হয়ত কারো ভাল লাগত না। কিন্তু কথাগুলো সঠিক সত্য ছিল। এসব কথা বলার ব্যাপারে উনি ছিলেন আপোশহীন। তিনি যা বিশ্বাস করতেন। তিনি তা লিখতেন। তার লেখার তুলনা হয় না।

শেখ মণির কলাম লেখার প্রশংসা করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমাদের দেশের বরণ্য ব্যক্তি আব্দুল গাফফার চৌধুরী, অনেক সময় মণি ভাই লিখতেন, আব্দুল গাফফার চৌধুরী জবাব দিতেন। আবার আব্দুল গাফফার চৌধুরী লিখতেন মণি ভাই জবাব দিতেন। মণি ভাইয়ের লেখার কোনো তুলনা হয় না। তিনি ইচ্ছা হলে মন্ত্রী হতে পারতেন। তিনি ইচ্ছা করলে এমপি হতে পারতেন। ৭০’র নির্বাচন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি বেছে নিয়েছিলেন এটা।

মণি ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি এবং শেখার মতো মানুষও ছিলেন উল্লেখ করে বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন। বঙ্গবন্ধুকে মণি ভাই তার বিশ্বাসী কথা বলতেন, তারপরে উঠতেন। মামা, এইটা হওয়া উচিত। এটা ভুল, এটা অমুক...ইত্যাদি। বঙ্গবন্ধু তাকিয়ে শুনতেন। আমরা সবাই তার কাছে ঋণী। তিনি একটা যুব সংগঠন করে গেছেন।

তোফায়েল আহমেদ আরো বলেন, স্মৃতির পাতায় অনেক কথা ভেসে ওঠে। মণি ভাই আপনি যেখানেই আছেন, আপনি ভাল থাকেন। আপনি আমাদের কাছ থেকে শারীরিকভাবে চলে গেছেন কিন্তু আপনার কোনোদিনই মৃত্যু হয়নি। আপনি বেঁচে আছেন। বেঁচে থাকবেন বাংলাদেশের মাটিতে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ ডিসেম্বর ২০১৭/নৃপেন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়