ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বেড়েছে কর্ম-উপযোগিতা, কর্মসংস্থানের সুযোগ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৪, ২৮ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বেড়েছে কর্ম-উপযোগিতা, কর্মসংস্থানের সুযোগ

কেএমএ হাসনাত: সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি-কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের উন্নয়ন ও দক্ষতাবর্ধক প্রশিক্ষণ খাতে প্রতিবছর বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। ফলে, জনগণের দক্ষতা ও কর্ম-উপযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে ঋণের প্রাপ্যতা সহজ করার ফলে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান ও আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেড়েছে।

কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি যৌক্তিকভাবে সম্প্রসারণ করেছে অর্থবিভাগ। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল পৌঁছে যাচ্ছে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠির কাছে। আবার, উপবৃত্তি কার্যক্রমের মাধ্যমে রচিত হচ্ছে ভবিষ্যৎ মানবসম্পদের ভিত। ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে শিক্ষা, প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৮ গুণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৪ দশমিক ৬ গুণ। 

উপকারভোগীর দোরগোড়ায় সরাসরি সেবা পৌঁছে দিতে জি টু পি (গভর্মেন্ট টু পারসন) পদ্ধতির মাধ্যমে ভাতা বিতরণের কাজ শুরু হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় উপকারভোগীরা বাড়িতে বসেই নিজ নিজ পছন্দের ব্যাংক অথবা মোবাইল ফোনের হিসাবে তাদের জন্য নির্ধারিত সহায়তা বা ভাতা প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে পেয়ে যাচ্ছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ১৭ মে ৭টি উপজেলায় মাতৃত্বকালীন ভাতা বিতরণ কার্যক্রম পাইলট ভিত্তিতে শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৭ জুলাই বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা এবং প্রতিবন্ধী ভাতার উপকারভোগীদের মাঝে ভাতা বিতরণের মাধ্যমে এ কর্মসূচি ব্যাপকভাবে চালু করেন।

এ কার্যক্রমের লক্ষ্য হচ্ছে, পর্যায়ক্রমে সব ভাতাভোগীকে এই পদ্ধতির আওতায় আনা এবং নির্বিঘ্নে ও সহজে সব উপকারভোগীর কাছে ভাতা পৌঁছে দেওয়া। উল্লেখ্য যে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি, উপকারভোগী নির্বাচনে দ্বৈততা হ্রাসসহ বরাদ্দকৃত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘সামাজিক সুরক্ষার জন্য সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

সামাজিক খাতে অর্থ বরাদ্দ এবং তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। ২০০৫ সালে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা ভোগ করত যা ২০১৬ সালে ২৮ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

জাতীয় বাজেটে নারী ও শিশু উন্নয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে জেন্ডার বাজেট এবং ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর থেকে শিশু বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। লক্ষ্য করার বিষয় হল ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় কম মাথাপিছু আয় নিয়েও বাংলাদেশ সামাজিক সূচকে তাদের চেয়ে অনেক বেশি সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে। সহ¯্রাব্দের উন্নয়ন অভীষ্ট ছিল ২০১৫ সালের মধ্যে দারিদ্র্য হার ২৯ শতাংশে নামিয়ে আনা। এ ক্ষেত্রে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক দ্রুতগতিতে দারিদ্র্য হ্রাস করা সহজ হয়েছে।

দারিদ্র ও চরম দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালে ছিল যথাক্রমে ৪০ দশমিক শূণ্য শতাংশ ও ২৫ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২০১৬ সালের মধ্যে যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ ও ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে দারিদ্র ও চরম দারিদ্র্যের হার আরো কমে হয়েছে যথাক্রমে ২১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ১১ দশমিক ৩ শতাংশ।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রত্যাশিত গড় আয়ুস্কাল ৭২ দশমিক ৮ বছর, যেখানে ভারত ও পাকিস্তানের গড় আয়ুস্কাল যথাক্রমে ৬৮ দশমিক ৮ ও ৬৬ দশমিক ৬ বছর। 

বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু-মৃত্যুও হার (প্রতি হাজার জীবিত জন্মে) ২০০৫ সালের ৩৬ জনের তুলনায় ২০১৭ সালে ৩১ জনে নেমে এসেছে, একবছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার ২০০৫ সালের ৪৮ জন থেকে ২০১৭ সালে ২৪ জনে নেমে এসেছে।

মাতৃ-মৃত্যুর হার (প্রতি হাজার জীবিত জন্মে) ২০০৫ সালের ৩ দশমিক ৪৮ জন থেকে ২০১৭ সালে ১ দশমিক ৭২ জনে নেমে এসেছে। ২০১৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু-মৃত্যুর হার ছিল যথাক্রমে ৭৮ দশমিক ৮ ও ৪৩ জন। একইভাবে এক বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে শিশু-মৃত্যু হার ছিল ভারতে ৩৪ দশমিক ৬ এবং পাকিস্তানে ৬৪ দশমিক ২ জন।

বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে জিডিপি’র অনুপাতে বরাদ্দ ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় কম। কম বরাদ্দ নিয়েও মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন, ২০১৮ অনুসারে বাংলাদেশের স্বাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ। ভারতে ৬৯ দশমিক ৯ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ৫৭ দশমিক শূণ্য শতাংশ।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ নভেম্বর ২০১৮/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়