ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মৌসুম আসার আগেই বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২৮, ২৪ মার্চ ২০২৪  
মৌসুম আসার আগেই বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা

ফাইল ছবি

মৌসুম আসার আগেই দেশে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা এর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং বর্ধিত বর্ষা মৌসুম; ভাইরাসজনিত রোগের বাহক এডিস মশার জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করছে। সে কারণেই বাড়ছে ডেঙ্গুরোগী।

ইতোমধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গুরোগীদের ভিড় দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী এবং তাদের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বর্তমান বছরের ২২ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৬১৬ জন। একই সময়ে ডেঙ্গুতে মারা গিয়েছেন ২১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭৫৪ জন, আর ঢাকার বাইরে ৮৬২ জন।

চলতি ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যু গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বলেও জানায় সংস্থাটি।

গত ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসাবে দেশের ২৪ বছরের ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙেছে। ২০২৩-এর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৪৮৪ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এসব রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ৬৭৮ জন।
 
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিনিয়ত তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, ভারী বৃষ্টিপাতসহ অন্যান্য উপাদানের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। আর এই পরিবর্তন ডেঙ্গুর ধারক-বাহক এডিস মশার প্রজননের জন্য আদর্শ পরিস্থিতি তৈরি করছে। এডিস মশা ক্রমে এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। ফলে ইতোমধ্যে সারা দেশে মশার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
 
বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ুকে ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজননের সঙ্গে বৃষ্টি এবং তাপমাত্রার সম্পর্ক রয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
 
বাংলাদেশে সাধারণত মে-জুন থেকে বৃষ্টি বাড়তে শুরু করে এবং এ সময় তাপমাত্রাও অনেক বেশি থাকে। ডেঙ্গু সংক্রমণের শুরু থেকে পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিবছরই মে-জুন থেকে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং সেটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় আগস্ট কিংবা সেপ্টেম্বর মাসে।
 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাসার বলেন, ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিনিয়ত প্রচুর নির্মাণ কাজ হচ্ছে। নির্মাণাধীন ভবনের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে-পাত্রে অনেক দিন পানি আটকে থাকে। সেখানে এডিস মশা প্রতিনিয়তই ডিম ছেড়ে বংশ বৃদ্ধি করে। যার ফলে দেশে পুরো বছর মশার বংশ অবাধে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডেঙ্গু বৃদ্ধি পাচ্ছে মৌসুম শুরু হওয়ার আগে থেকেই। এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি সবার সচেতনতার কথাও জানান তিনি। 

এ বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরে সাধারণত কিউলেক্স ও এডিস এই দুই ধরনের মশা। কিউলেক্স মশা আমাদের অনেক বিরক্ত করে, কামড় দেয়। তবে কিউলেক্স মশার কামড়ে মানুষের মৃত্যু হয় না। কিন্তু এডিস মশার কামড়ে মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি আছে। এই ভয়ানক এডিস মশা মানুষের বাসা-বাড়ি, অফিস আদালতের জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে জন্মে।

মেয়র আতিক বলেন, সিটি কর্পোরেশন তাদের যা যা করণীয়, সবই করছে। পাশাপাশি এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য যার যার ঘর, বাড়ি, অফিস, আদালত তাদেরই কিন্তু দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ আমাদের পক্ষে দেখা অসম্ভব কারও বাড়ির ছাদে পানি জমে আছে কি না, কারও ছাদে, বারান্দায় নারিকেলের খোসা, রঙের কৌটা, অব্যবহৃত টায়ার পড়ে আছে কি না। ভবনের বেজমেন্টে গাড়ির গ্যারেজে পানি জমে আছে কি না, সেটি দেখা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। সকল নাগরিককে আরও বেশি সচেতন হলেই কেবল ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে।
 
আগে বিচ্ছিন্নভাবে রাখলেও ২০০০ সাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখছে নিয়মিত। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ড্যাশবোর্ডে দেখা গেছে, এর মধ্যে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ১৬ হাজার ৪৮৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে এক হাজার ৬৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। 
 
২০২২ সালে পুরো বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬০ হাজার ৬৩১ জন, মারা গেছেন ২৮১ জন। আর চলতি বছরে (২০২৪) এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৯৮১ জন, যাদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
 
২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে মারা যায় ১৬৪ জন, পরের বছর সেটা কমে আসে সাত জনে। ২০২১ সাল থেকে মৃত্যুর এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৫ জনে। ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৮১ জন। এরপরে ২০২৩ সালে সব রেকর্ড ভেঙে ডেঙ্গুতে মৃত্যু দেড় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছরে ডেঙ্গু সংক্রমণের শঙ্কা নিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষের মধ্যে ক্রমান্বয়ে আতঙ্ক বাড়ছে।

ঢাকা/এনএইচ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়