ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করল ইয়াং ফাউন্ডারস স্কুল

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৫, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করল ইয়াং ফাউন্ডারস স্কুল

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : প্রযুক্তিভিত্তিক অলাভজনক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইয়াং ফাউন্ডারস স্কুল (ওয়াইএফএস) ঢাকায় তাদের প্রথম বুটক্যাম্প সফলভাবে শেষ করেছে। সম্প্রতি দুই দিনব্যাপী আয়োজিত এই বুটক্যাম্পের লক্ষ্য ছিল উদ্যোক্তা কার্যক্রম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়া। দুনিয়াজুড়ে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়াইএফএস একটি স্বীকৃত বৈশ্বিক উদ্যোক্তা প্রোগ্রাম।

এ প্রসঙ্গে পাঠাও লিমিটেডের সিইও হুসেইন এম ইলিয়াস বলেন, ‘পাঠাও নিজেই একটি তরুণ প্রজন্মের স্টার্টআপ, তাই আমরা প্রথমদিকে উদ্যোক্তা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। এক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো সামনে আসে সেগুলোর সঙ্গেও আমরা খুব পরিচিত। পাঠাওতে আমরা আমাদের কর্মীদের মধ্যে মালিকানাবোধ প্রচার করি এবং একইসঙ্গে উদ্যোক্তাদেরও অনুপ্রেরণা দেই। আর তাই, তরুণ উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নে নিরলসভাবে কাজ করে এমন একটি সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্বে আসতে পারা আনন্দের বিষয়।’

বিলি নাভিদ ২০১৬ সালে ওয়াইএফএস হংকংয়ে প্রতিষ্ঠা করেন। বিলি নিজে একজন ‘তরুণ প্রতিষ্ঠাতা’ হিসেবে শুরু করেন। নিজের ১৬ বছর বয়সের আগেই তিনি দুটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

ঢাকায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ক্রেডিট সুইস, আলিবাবা এন্টারপ্রেনার ফান্ড এবং স্থানীয়ভাবে পাঠাও ও ওসিরিস গ্রুপ।

এশিয়ার প্রধান শহরসমূহ যেমন- হংকং, সিঙ্গাপুর এবং শেনঝেনে এএফএস সফলভাবে চালু হওয়ার পর ঢাকার উদ্যোক্তাদের অদম্য মনোভাবের কারণে ওয়াইএফএস ঢাকাকেই পরবর্তী স্টেশন হিসেবে নির্বাচিত করে।

বুটক্যাম্পে শিক্ষার্থীরা লিন স্টার্টআপ, প্রোডাক্ট মার্কেট ফিট এবং কম্পিটিশন অ্যানালাইসিসের মতো খ্যাতনামা স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে নতুন স্টার্টআপ কৌশলগুলো শিখেছেন। তারা তাদের স্টার্টআপ আইডিয়াকে সম্পূর্ণভাবে বিকশিত করার সুযোগ পায় এবং ফান্ড পাওয়ার জন্য তিনজন ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট বিচারকের প্যানেলের সামনে তৈরি পিচগুলোতে উপস্থাপন করে।

বিচারকদের মধ্যে ছিলেন স্টার্টআপ ঢাকার কো-ফাউন্ডার সামাদ মিরালি, আইডিএলসি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের অ্যাসোসিয়েট মাসুদ উল হক এবং বাংলাদেশ এঞ্জেলস এর সিইও নির্ঝর রহমান।

কার্যক্রম সম্পর্কে ওয়াইএফএস এর কর্মকর্তা নাভিদ বলেন, ‘ওয়াইএফএস, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বের প্রথম গ্লোবাল উদ্যোক্তা প্রোগ্রাম। এটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রিয়েল-ওয়ার্ল্ড স্টার্টআপ অভিজ্ঞতা ও সিভি-বুস্টিং দক্ষতা এবং সেই সঙ্গে অনুপ্রেরণীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দিচ্ছে।’

‘প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। আমরা বর্তমানে হংকং, শেনঝেন এবং সিঙ্গাপুরে কাজ করছি এবং এটি আমাদের বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশমূলক কার্যক্রম ছিল। আমরা এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য স্টেশন, যেমন জাকার্তা এবং ব্যাংককে কাজ শুরু করব।’

আমরা বিশ্বের যেকোনো জায়গায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য আমাদের অনলাইন প্লাটফর্ম চালু করার পরিকল্পনা করছি। আমরা পরবর্তী প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অন্যান্য কর্পোরেট, স্কুল, পিতামাতা এবং তাদের সন্তানদের আমাদের আয়োজনে স্বাগত জানাই।’

ওয়াইএফএস এর পূর্ববর্তী বুটক্যাম্পগুলোতে বিজয়ী দলগুলোর ব্যবসায়িক ধারণাগুলোর মধ্যে আছে- বয়স্ক বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য পড়ে যাওয়া প্রতিরোধের জন্য হাঁটার সহায়ক হিসেবে ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) সক্ষম ডিভাইস, যা সঠিক সময়ে তাদের প্রিয়জনকে সতর্ক সংকেত দেবে। আরো রয়েছে একটি অ্যাপ্লিকেশন, যা মানুষের মানসিক সমস্যায় সহায়তা করে। এছাড়াও রয়েছে হাই স্কুল ইন্টার্নশিপের জন্য একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।

ঢাকায় আত্মপ্রকাশের পর ওয়াইএফএস চট্টগ্রামের মতো অন্যান্য শহরগুলোতে পৌঁছানো এবং কার্যক্রমের পাঠক্রম বাংলা অনুবাদের মাধ্যমে সহজ করে তোলার প্রচেষ্ঠা নিচ্ছে।

গত ২৪ মাসে ওয়াইএফএস হংকং, শেনঝেন এবং সিঙ্গাপুরে ১৩০০ এর বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে নয়টি স্টার্টআপ বুটক্যাম্প এবং সাতটি আইডিয়েশন ডে কার্যক্রম সম্পন্ন করে, যার মধ্যে ৫৭% মহিলা শিক্ষার্থী এবং আলিবাবা গ্রুপ, গুগল, ৯গ্যাগ, মাইক্রোসফট, টেকস্টারস, প্রাইসওয়াটারহাউস কুপারস, গোগোভ্যানের মতো কোম্পানি থেকে ৩০০ এর বেশি মেন্টর সংযুক্ত ছিলেন।

বাংলাদেশি মেন্টরদের মধ্যে পাঠাও, ব্রাক সোশ্যাল ইনোভেশন ল্যাব, কমনওয়েলথ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া, প্লান্টিক, সেলিস রকিং সফটওয়্যার এবং আরো কিছু বিখ্যাত স্টার্টআপের শীর্ষ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

মাস্টারমাইন্ড স্কুলের এ লেভেলের ছাত্রী নাফিসা আনোয়ার বলেন, ‘এই বুটক্যাম্পের মাধ্যমে আমি অনেকগুলো জিনিস শিখেছি। কিন্তু আমার মূল শিক্ষা হচ্ছে উদ্যোক্তা প্রবণতা আসলে কিভাবে বেশি মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা যায় এবং সহজভাবে তাদের সমস্যাগুলো সহায়তায় নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ ডিসেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়