ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আজকের শিশু নেতৃত্ব দেবে কাল

খান মো. শাহনেওয়াজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২২, ২৮ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আজকের শিশু নেতৃত্ব দেবে কাল

ভবিষ্যত প্রতিনিধি (ছবি : টিচ ফর বাংলাদেশ)

খান মো. শাহনেওয়াজ : দুই বোন জুঁই ও যুথি। দু`জনের আচরণ পুরো আলাদা। দুবোনের মধ্যে ছোট যুথি। আত্মীয়ার বিয়ের দাওয়াত পেয়েছেন, নতুন জামা কেনার জন্য দু`জনকে নিয়ে মা গেলেন মার্টে। এ দোকান ও দোকান ঘুরে জামা পছন্দ হলো। মা দুজনকে দুটো জামা কিনে দিলেন। কিন্তু দোকানে আরো দুটো জামা পছন্দ হয়ে গেলো, দামটাও নাগালের মধ্যেই। মা ভাবলেন, জামা দুটো কিনে রাখা যায়, লাগেই তো। দুই মেয়েকে তিনি বললেন, এই দুটো জামাও নিয়ে নেই। সামনে আরো দু তিনটে পারিবারিক অনুষ্ঠান আছে।

 

মায়ের কথা শুনে জুঁই বলেই ফেললো, এখন এই জামা নেওয়ার কোন দরকার আছে মা! পারিবারিক অনুষ্ঠানে একেবারে নতুন জামাই পড়তে হবে তা তো না। এত দাম দিয়ে এখন জামা নেওয়ার দরকার নেই। 

 

সঙ্গে সঙ্গে যুথি বলে উঠলো, মা তুমি এগুলো নিতে পারো। আপু না নিক, আমি তো পেতে পারি। অনুষ্ঠানে নতুন জামা পড়ার মজাই আলাদা। দামটা কম, তুমি নিয়ে নাও মা। এমন দামে এই জামা আর পাওয়া যাবে না। দেখতেও সুন্দর, কি গর্য়াস দেখো। তুমি নাও মা, আমার জন্য।

 

এই হোলো দুই মেয়ে। বড়জন ভাবছে খালি তো কিনলেই হলো না। মায়ের সংসার আছে। আর ছোট জনের সে ভাবনা মোটেও নেই। নতুন জামা তার পেলেই হলো। দুই মেয়ের আচরণের এই পার্ক্য মাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। ‍তিনি সিদ্ধান্ত নেন বাড়তি জামা তিনি নেবেন না।

 

এ ধরনের আচরণের মেয়ে বা ছেলে অনেক পরিবারেই দেখা যায়। তারা জিনিষ কেবল চায়, বাবা-মা, ভাই-বোন ও পরিবারের অন্য সদস্যদের কথা ভাবে না। তারা কেবল পেতে চায়, নিজেরটা ষোল আনা বুঝে নিতে চায়। অনেক থাকার পরও তারা নতুন আরো চায়। বলা যায় তারা আনহ্যাপী চাইল্ড।

 

এই শিশুদের চাহিদা ও চাওয়া যখন পুরণ না হয় তখন তারা ধীরে ধীরে হতাশগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আনহ্যাপী মনোভাব তাদেরকে একা করে ফেলে এবং তারা বিকল্প খুঁজতে শুরু করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই শিশুরা অন্ধকার জগতের দিকে ধাবিত হয়।

 

এখানেই দরকার সেই মেয়ে বা ছেলের প্রতি মা-বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের বাড়তি মনোযোগ। বকাঝকা না করে বন্ধুর মতো তাদের পাশে দাঁড়ানো দরকার। ঘরে বন্দির মত অবস্থায় না রেখে তাদের মুক্ত আলোয় নিয়ে যাওয়া দরকার। পরিবারের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্ তাদের বোঝানো দরকার। পরিবারে তাদেরকে গুরুত্বপূর্ করে তোলা দরকার। নিজেরা তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অন্যের সহযোগিতা নেওয়া দরকার। তাদেরকে বোঝানো দরকার যে, পরিবারে তারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্, তাদের মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রতি তাদেরও খানিক দায়িত্ব আছে।

 

আনহ্যাপী শিশুদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের বাড়তি মনোযোগ ও বাড়তি যত্ন জরুরি। তাদের মনের গঠন, গড়ন, অনুভুতি সম্পর্ নজর রাখাও আবশ্যক। শরীরিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক গতিতে হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পর্ জানা দরকার।

 

অনেক কিছু করেও, অনেক কিছু দিয়েও আনহ্যাপী শিশুদের খুশি করা কঠিন। একটা অতৃপ্তি তাদের মনে সবসময়ই লেগে থাকে। অনেকক্ষেত্রে সারা জীবনই তাদের ভেতরে সেটা রয়ে যায়।  বড় হয়েও তারা হতাশার মাঝে বিচরণ করে হয় আনহ্যাপী পার্সন।  

 

অল্পতেই সন্তুষ্টি- এই গুণে শিশুদেরকে গুণি করে তোলার চেষ্টা শুরু থেকেই করা উচিত। আনন্দ মেলে এমন জায়গায় বেড়ানো শিশুদের মানসিক বিকাশে সহায়ক হয়। নতুন পরিবেশ, নতুন আবহাওয়া সব সময়ই শিশুদের আনন্দ দেয়। আর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো যে, এর মধ্য দিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়। মা-বাবার প্রতি বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা একবার সৃষ্টি হলে তা ভাঙা খুবই কঠিন! তাই প্রতিটা বাবা-মায়ের দায়িত্ব ছেলে-মেয়েদের বন্ধু হয়ে তাদের মনের কাছাকাছি চলে যাওয়া। সম্ভব হলে তাদের গোপনীয় বিষয়গুলোও জেনে নেওয়া। তারা যেন ভাবতে পারে মা-বাবাই তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু। আর তা হলেই শিশু তার মানসিক সঙ্কটের সমাধানে মা-বাবার সাহায্য নিতে এগিয়ে আসবে। সে জানবে, এই পৃথিবীতে কেবল মা ও বাবাই তার মঙ্গলের জন্য নিঃস্বার্থভাবে বুক পেতে দেবেন।

 

দিন বদলে যাচ্ছে, বদলাচ্ছে মানুষের মানসিকতা। এই পরিবর্ন চিরন্তন, একে ঠেকানো সম্ভব না। শিশু তার বাবা মায়ের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই ছেলে-মেয়েদের ব্যাপারে শতভাগ মনোযোগ দেওয়া মা-বাবার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব । শাসন, ভালবাসা ও স্নেহে শিশুকে আদর্ ও দায়িত্বশীল করে  গড়ে তোলা জরুরি। আজ যে শিশু সেই নেতৃত্ব দেবে কাল।      

 

লেখক : সাংবাদিক।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ আগস্ট ২০১৫/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়