ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

আমেরিকায় কলম্বাসের সঙ্গে দেখা হলো না (দুই)

শিহাব শাহরিয়ার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আমেরিকায় কলম্বাসের সঙ্গে দেখা হলো না (দুই)

শিহাব শাহরিয়ার

জুলাই ৪। আমেরিকার জাতীয় দিবস। সেদিন ঢাকার তরুণ কবি ও আবৃত্তিকার বাচ্চু আমাকে নিয়ে গেলেন ম্যানহাটানে হাডসনের পাড়ে। সে এক অসাধারণ দৃশ্য। বাজি ফুটিয়ে এমন আনন্দ করতে আর কখনো দেখিনি। তবে একটা কথা না বললেই নয়, আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রশংসা না করে পারা যায় না। একদিন সাবওয়েতে ‘ই’ ট্রেনে যাচ্ছি জ্যামাইকা থেকে জ্যাকসন হাইটসে। বেশ কয়েকটি স্টেশন পার হয়ে যেতে হয়। সেদিন একাই ছিলাম। টিকিট নিয়ে ঠিক ঠিক উঠলাম ট্রেনে। স্টেশন গুনে গুনে যাচ্ছিলাম, কিন্তু ভুলে পার হয়ে গেছি কয়েক স্টেশন। ট্রেন থেকে নেমে কিছুটা নার্ভাস হলাম। ভাবছি ডাউন ট্রেনে তিন স্টেশন পিছনে যাবো। সারা স্টেশন ফাঁকা, কারণ সবাই ছুটছে- ওঠানামা করছে দ্রুত। হাঁটতে হাঁটতে একটু এগোতেই দেখা পেলাম উনিশ-কুড়ি বছরের এক যুবকের। তাকে আমেরিকান মনে হলো না। জিজ্ঞেস করতেই জানাল, সেও নতুন। ইন্দোনেশিয়া থেকে পড়াশোনা করতে এসেছে মাসখানেক আগে। সেও ম্যাপ দেখে দেখে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

তার মতো আমিও ম্যাপের দিকে চোখ রাখলাম। ডাউন ‘এ’ না ‘এফ’ ট্রেন হবে বুঝতে পারছি না। মাত্র দেড় থেকে দুই মিনিটের মতো হবে। এরই মধ্যে কোথা থেকে হুট করে জায়েন্ট ফিগারের একজন পুলিশ এসে আমার সামনে দাঁড়াল। কিছুটা ভয়ও পেলাম। কারণ নাইন-ইলেভেন তারিখটি মাথায় এলো। আমাকে সিসি ক্যামেরায় দেখে কোনো সন্দেহ করল কি না? আমি জিজ্ঞেস করার আগেই, ভারী গলায় ভদ্র ভাষায় আমাকে ইংরেজিতে যা বলল, তার বাংলা দাঁড়ায়- স্যার, আমি আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?


সেখানে কবিতা পাঠ ও খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। নিউইয়র্ক থেকে গেছি অনন্যা প্রকাশনীর মালিক মনিরুল হক, মহিউদ্দিন খোকন, নিউইয়র্ক প্রবাসী টনি ও আমি। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক শিল্প-সাহিত্য নিয়ে আলোচনা, মত বিনিময় হলো,  তারপর খাওয়া দাওয়ার পালা। এরপর নিজাম আমাদের নিয়ে গেল তার বাড়িতে। ওর বউ শিলা নানা রকমের খাবার আয়োজন করে রেখেছে আমাদের জন্য। আমরা সারারাত তাস খেলে পার করলাম আর ফাঁকে ফাঁকে চলল খাবার। স্মরণীয় এক আনন্দময় রাত কাটল ভার্জিনিয়ায়। কবি নির্মলেন্দু গুণের মতো করে বলতে ইচ্ছে করছে- ভার্জিনিয়ায় তাস খেলার রাত।

পরদিন সকালে ফিরে যাচ্ছি নিউইয়র্কে। সকালের আলোয় ভার্জিনিয়া দেখে আমরা অভিভূত হলাম। কত দৃশ্যনন্দন হতে পারে শহর। নিজাম আমাদের ওয়াশিংটন ডিসির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পথে গাড়ি থামিয়ে নিয়ে গেল ডালাস এয়াপোর্টের পাশে স্পেস মিউজিয়ামে। মিউজিয়ামের বাইরের খোলামেলা ও নান্দনিক বিল্ডিং দেখলে সকলেরই ভালো লাগবে।

টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকলাম। এটি একটি বিষয়ভিত্তিক জাদুঘর। এখানে পৃথিবীর প্রথম বিমানের অংশ থেকে সদ্য তৈরি বিমানের মডেল এবং যাবতীয় জিনিস নিদর্শন হিসেবে প্রদর্শিত হচ্ছে। জাদুঘরের কর্মী বলেই জাদুঘরটি দেখে ভালো লাগল। এরপর ডিসিতে এসে হোয়াইট হাউসের সামনে কিছুক্ষণ ঘুরে গেলাম ভয়েস অব আমেরিকার অফিসে। সেখানে কথাশিল্পী দিলারা হাশেম বহু বছর কাজ করছেন, যিনি নিউইয়র্কে বইমেলায় আমাকে দাওয়াত দিয়ে এসেছিলেন যে, আমি যেন সময় বের করে তার ওখানে যাই। তো সেই কারণেই যাওয়া। দিলারা আপা বিনয়ী মানুষ। আমাদের ঘুরে ঘুরে সমস্ত স্টুডিও দেখালেন এবং পরিচয় করিয়ে দিলেন সকলের সাথে। এদের মধ্যে রোকেয়া হায়দার ও ইকবাল বাহার চৌধুরী এই দু’জনকে আগে থেকেই চিনি। বাকি বাঙালি ও আমেরিকান স্টাফদের সাথেও পরিচয় হলো। সবশেষে আমার একটি পাঁচ-ছয় মিনিটের সাক্ষাৎকার নিলেন দিলারা হাশেম।


দেখা হলো না নায়াগ্রা। কারণ কানাডা যাওয়ার জন্য ভিসা নিতে ম্যানহাটানে গিয়ে আবেদন করলাম কিন্তু ভিসা পেলাম না। অবশ্য তরুণ কবি হাসানআল আবদুল্লাহ আমার সঙ্গে দাঁড়ানো কবি বিশ্বজিৎ চৌধুরী ও প্রকাশক মনিরুল হককে ভিসা পেতে সহযোগিতা করলেন এবং তারা ভিসা পেলেনও। কী কারণে জানি হাসান আমাকে সহযোগিতা করলেন না। যাহোক এবারের যাত্রায় হলো না, হয়ত ভবিষ্যতে হবে। আর দেখা হলো না কবি শহীদ কাদরীর সঙ্গে। কারণ তিনি সিরিয়াস শারীরিক অসুস্থতায় হাসাপাতালে দৌড়াদৌড়ি করছেন। বাংলা কবিতার তিন পাণ্ডব রাহমান, মাহমুদ আর কাদরী। আগের দুজনকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে, কিন্তু কাদরী ভাইয়ের সঙ্গে এখনো দেখা হয়নি। বাংলা কবিতার এই বর্ষীয়ান কবির সঙ্গে দেখা হলে ভালই হতো। যদিও আমেরিকা যাবার আগে ঢাকা থেকে আমি ফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি, অথচ... অথচই।

আর কলম্বাসেরও দেখা পেলাম না। দেখা পেলাম না আব্রাহাম লিংকনের। দেখা পেলাম না অ্যালেন গিন্সবার্গের। দেখা পেলাম না জর্জ হ্যারিসনের। এই অতৃপ্তি নিয়েই আমাকে ফিরে আসতে হলো আমার প্রিয় স্বদেশের মাটিতে। মনে মনে বললাম, আবার গেলে দেখা হবে নিশ্চয়ই। এই যে আশা, সেই আশাই তো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। আমিও সেই আশায় রইলাম। (শেষ)




 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ সেপ্টেম্বর ২০১৫/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়