ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

কলেজছাত্র হত্যা : প্রেমিকা এ্যামির জবানবন্দি

গাজী হানিফ মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:৫৩, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কলেজছাত্র হত্যা : প্রেমিকা এ্যামির জবানবন্দি

খোরশেদ আলম

নরসিংদী প্রতিনিধি : নরসিংদীতে হত্যাকাণ্ডের সাত দিন পর কলেজছাত্র খোরশেদ হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক এ্যামি আক্তারকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

 

সোমবার নরসিংদী থানা পুলিশ এ্যামি আক্তারকে এক দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন জানালে বিজ্ঞ আদালত তা মঞ্জুর করেন।

 

গত ২৪ সেপ্টেম্বর এ্যামি আক্তার স্বপ্রণদিত হয়ে আদালতে একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। তার এই জবানবন্দী স্থানীয় জনগণ, অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ আইনজীবীদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা পাচ্ছে না। তাদের মতে এ্যামির এই জবানবন্দী হত্যাকাণ্ডের রহস্যকে আরো ঘনীভূত করেছে।

 

এ্যামি আক্তার তার জবানবন্দীতে বলেছে, খোরশেদ তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করার চেষ্টা করলে সে একটি বটি দিয়ে তাকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। এ সময় বটির কোপ খোরশেদের গলায় লেগে যায়। এতে খোরশেদের গলা থেকে রক্তক্ষরিত হতে থাকলে সে তার উড়না দিয়ে গলার ক্ষত চেপে ধরে। এতেও রক্ত বন্ধ হয়নি। কিছুক্ষণ পর এ অবস্থায়ই খোরশেদ মারা যায়।

 

এরপর পাশেরই তার মায়ের বাসা থেকে একটি চাপাতি এনে খোরশেদের দেহ ছয় খণ্ডে খণ্ডিত করে মাথা ও চার হাত-পা একটি প্যাকেট করে। আর মূল দেহটি কম্বলে জড়িয়ে একটি ব্যাগে ভর্তি করে সারা রাত চৌকির নিচে লুকিয়ে রাখে। পরদিন ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে চার হাত-পা ও মাথা ভর্তি ব্যাগটি একটি ইজিবাইকে উঠিয়ে পুরানপাড়া এলাকার হাড়িধোঁয়া নদীর পাড়ে ফেলে দেয়। পরে আরেকটি ইজিবাইক ডেকে মূল দেহভর্তি ব্যাগটি নিয়ে সোনাতলা এলাকায় গিয়ে হাড়িধোঁয়া নদীর পানিতে ফেলার সময় সে স্থানীয় লোকজনের হাতে ধরা পড়ে যায়।

 

এ্যামি আক্তারের এই বক্তব্য স্থানীয় জনগণ ও নিহতের স্বজনরা বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না। তারা বলছেন, এ্যামি আক্তারের উচ্চতা সাড়ে চার ফুট। পক্ষান্তরে নিহত ছাত্র খোরশেদ আলমের উচ্চতা কমবেশী ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। অর্থাৎ খোরশেদ আলম একজন বিশালদেহী যুবক। তাকে বটি দিয়ে কোপ মেরে এ্যামি আক্তারের একার পক্ষে হত্যা করা কোনো ক্রমেই সম্ভব নয়। তা ছাড়া হত্যাকাণ্ডের পর ঠান্ডা মাথায় তার হাত-পা ও মাথা কেটে আলাদা করে ব্যাগে ভর্তি করে চৌকির নিচে লুকিয়ে রাখা এবং পরদিন ইজিবাইকে উঠিয়ে লাশটিকে হাড়িধোঁয়া নদীতে ফেলে দেওয়া কোন পেশাদার খুনী ছাড়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।

 

 

এ্যামি আক্তার বলেছে, বটি দিয়ে গলায় কোপ দেয়ার পর সে উড়না দিয়ে তার ক্ষতস্থান চেপে ধরে। তবে নিহতের ভাই মো. মজিবুর রহমান জানান, যদি তা-ই হয় বটির কোপে আহত হওয়ার পর খোরশেদের নিজের জান বাঁচানোর জন্য চিৎকার করার কথা। কিংবা পাল্টা এ্যামি আক্তারকে আক্রমণ করার কথা। তার চিৎকার আশেপাশের লোকজনের শোনার কথা। এসবের কিছুই ঘটেনি। এ্যামি আক্তার প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে পরিকল্পিতভাবে কিংবা কারো শিখিয়ে দেওয়া বক্তব্য অনুযায়ী সে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে বলে স্থানীয় আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

 

আইনজীবীরা আরো বলেন, এ্যামি আক্তার কোনো পেশাদার খুনীচক্র দিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করিয়ে থাকতে পারে। এখন পেশাদার খুনীদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সে স্বেচ্ছায় এই সাজানো বক্তব্য দিয়ে থাকতে পারে। এ্যামি আক্তার একটি শক্তিশালী পেশাদার খুনীচক্রের সদস্য। তাকে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ না করলে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে না। প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যাবে। আড়ালে থেকে যাবে একটি ভয়াবহ পেশাদার খুনীচক্র। জনগণের স্বার্থে পুলিশ আরো বেশী তৎপর হয়ে ঘটনা গভীরে প্রবেশ করতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে নরসিংদী শহরের গাবতলী এলাকায় জনৈক ফখরুদ্দিনের ভাড়াটিয়া বাড়ীতে নরসিংদী সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শেষ বর্ষের পরীক্ষার্থী রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষা গোপীনাথপুর গ্রামের মৃত অহেদ আলীর ছেলে খোরশেদ আলমকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে এই কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক এ্যামি আক্তার।

 

এরপর লাশটি ছয় খণ্ড করে দুটি ভাগ করে একভাগ ভর্তি প্যাকেট পুরানপাড়া হাড়িধোঁয়া নদীতে ফেলে দেয় এবং অপর ভাগ সোনাতলা এলাকার হাড়িধোঁয়া নদীতে ফেলতে গিয়ে জনগণের হাতে ধরা পড়ে। জনগণ তাকে পুলিশে সোপর্দ করার পর দীর্ঘ সাত দিন কেটে গেলেও পুলিশ তাকে রিমান্ডে নেয়নি। সোমবার পুলিশের কথিত মতে হত্যাকাণ্ডের আলামত উদ্ধার করার জন্য এক দিনের জন্য রিমান্ড নিয়েছেন।

 

 

 

রাইজিংবিডি/নরসিংদী/২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫/গাজী হানিফ মাহমুদ/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়