ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

জন্মদিনে রাইজিংবিডিকে যা বললেন যতীন সরকার

ইকবাল হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ১৮ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জন্মদিনে রাইজিংবিডিকে যা বললেন যতীন সরকার

সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন যতীন সরকার


যারা পাছে এলো, আগে গেল, আমি শুধু বসে রইলাম : যতীন সরকার

মার্ক্সবাদী হিসেবে সমাজে তাঁর পরিচয়। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ ঘিরে তাঁর যেমন বক্তব্যের শেষ নেই, তেমনি বর্তমানে যে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র চলছে তাতে কি জনগণের সার্বভৌমত্ব রক্ষিত হচ্ছে?- এ বিষয়েও তাঁর বক্তব্য সুস্পষ্ট। তিনি যতীন সরকার; দার্শনিক, প্রাবন্ধিক, শিক্ষক এবং দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী। ১৯৬০-এর দশক থেকে যতীন সরকার ময়মনসিংহ শহরের সকল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। অসাধারণ বাগ্মিতার জন্য তিনি দ্রুত সকলের প্রিয় হয়ে ওঠেন। কমিউনিস্ট পার্টি এবং শ্রেণী সংগ্রামের প্রতি আজীবন উৎসর্গিত এই প্রবীণ কমরেড মফস্বলে থেকেও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী’র সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১০ সালে তাঁকে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী যতীন সরকারের আজ জন্মদিন। এ আনন্দদিনে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডি’র নেত্রকোনা প্রতিনিধি ইকবাল হাসান।

ইকবাল হাসান: স্যার, কেমন আছেন? শুভ জন্মদিন।  

যতীন সরকার: ধন্যবাদ শুভেচ্ছা জানানোর জন্য। চলে যাচ্ছে সময় কোনো রকম। ২০০৮ সাল থেকে আথ্রাইটিসে ভুগছি। যাকে খাঁটি বাংলায় বাতরোগ বলে। আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত গিরায় গিরায় ব্যথা করে। গত বছর ওরাই (ছাত্র) ঢাকার হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে আমার চিকিৎসা করিয়েছে। ওই হাসপাতালের ডাক্তার টিটু ও অন্যরা আমার দেখাশোনা  করেছে। এই রোগ ভালো হবার নয়। যতদিন বেঁচে থাকব তত দিন এই রোগ থাকবে। তবে ডাক্তাররা বলেছে এ রোগে মারা যাওয়ার আশঙ্কা নেই।

ইকবাল হাসান: পরিবারের অন্যদের সম্পর্কে কিছু বলুন।

যতীন সরকার: আমার পরিবারের সবাই মোটামুটি শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত। আমার স্ত্রী, ছোট ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী শিক্ষকতা পেশায় জড়িত ছিল। এখন সবাই অবসরে চলে গেছে। তবে ছেলে, মেয়ে ও ছেলের বউ ভিন্ন পেশায় আছে। ছেলে সুমন সরকার, তার স্ত্রী বিদেশিনী স্লোভাকিয়ার মেয়ে জুজানা চিকিৎসক। মেয়ে সুদিপ্তা সরকার যুগ্ন জেলা জজ হিসেবে চাকরি করে। ছেলের বউ অর্থপেডিক্সের ডাক্তার। সে বলেছে, আমার যে রোগ তা কোনো দিন ভালো হবে না। এ ভাবেই আমাকে চলতে হবে। গরম একেবারেই সহ্য করতে পারি না। বাসায় বিদ্যুৎ না থাকলে খুব কষ্ট হয়।

ইকবাল হাসান: আপনার পত্রিকায় লেখালেখির শুরুটা কীভাবে হলো?   
 
যতীন সরকার: স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ময়মনসিংহ থেকে সাপ্তাহিক ‘বাংলার দর্পণ’ নামে একটি পত্রিকা বের হয়। ওই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন হাবিবুর রহমান শেখ। তিনি আমার খুব কাছের এবং স্নেহের মানুষ ছিলেন। পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠার সময় আমি তার অফিসে বসতাম। সম্পাদকীয় ও উপ-সম্পাদকীয় লিখতাম। এভাবেই শুরু। তিনি কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। এ প্রসঙ্গে একটি গানের কলি বলতে হয়- ‘যারা পাছে এলো, আগে গেল, আমি শুধু বসে রইলাম।’

ইকবাল হাসান: ভাষা আন্দোলনে আপনি কীভাবে জড়িয়ে পড়লেন?

যতীন সরকার: নেত্রকোনার চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে তখন পড়ি। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে- কায়েদে আযম জিন্নাহর এমন বক্তব্যে নেত্রকোনা শহরও উত্তাল হয়ে ওঠে। তখন এ জেলায় কোনো কলেজ ছিল না। কয়েকটি স্কুল ছিল। তখন ওই সমস্ত স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের নেতৃত্বে মিছিল বের হয়। সেই মিছিলে আমিও যোগ দেই। ১৯৫২ সালে জেলার কেন্দুয়ার আশুজিয়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র হিসেবে আমরা এলাকায় ভাষা আন্দোলনের জোয়ার সৃষ্টির চেষ্টা করি। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের সময় প্রকাশ্যে জনসভায় বক্তৃতা দেই। সে দিনের কথা ভুলবার নয়। তখন সময়টাই ছিল অন্যরকম।


ইকবাল হাসান: উদীচী’র সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলেন?

যতীন সরকার: ১৯৬৮ সালে উদীচীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। শ্রদ্ধেয় সত্যেন সেন ঢাকায় যখন উদীচী প্রতিষ্ঠা করলেন তখন আমরা ময়মনসিংহ শহরে উদীচীর সাংগঠনিক কাজ শুরু করি। কিছুদিনের মধ্যেই ময়মনসিংহে উদীচী’র শাখা গড়ে ওঠে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় উদীচীতেও যুক্ত হয়ে পড়ি। অনেক বছর উদীচী’র সহ-সভাপতির পদে ছিলাম। ২০০৩ সালে সংগঠনের সদস্যরা সবাই মিলে আমাকে সভাপতি বানায়।  

ইকবাল হাসান: আপনার জন্মদিন আজ। দিনটি কীভাবে পালিত হবে?

যতীন সরকার:  ওরাই (ভক্তরা) জন্মদিনের আয়োজন করে থাকে। গত ক’দিন ধরে আমার জন্মদিন নিয়ে ওরা সবাই খুব খাটাখাটুনি করছে। মানুষজনকে দাওয়াত দেয়া থেকে শুরু করে সব কাজ ওরাই করছে। বাসার আশপাশে সাজানো হয়েছে। আমি শুধু বসে বসে দেখছি। অখিল পাল (স্থানীয় ভাস্কর) আমার ভাস্কর্য নির্মাণ করেছে। জন্মদিনে সেটির উদ্বোধন করবে ওরা। আরও সব আয়োজন ওরাই করে যাচ্ছে।

ইকবাল হাসান: এই যে অবসর সময়। কীভাবে কেমন কাটছে আপনার অবসর?

যতীন সরকার: লেখালেখি করে এবং বই পড়ে চলে যাচ্ছে সময়। পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করি এবং বই লিখি। প্রতি বছরই দু’একটি বই প্রকাশিত হয়। এ ভাবেই চলে যাচ্ছে অবসর সময়। ওরা (ভক্তরা) সময় পেলেই চলে আসে। ওদের সাথে বসে গল্পগুজব করে দিন কেটে যায়।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ আগস্ট ২০১৫/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়