ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ভৈরবে মাছের আড়তে তিন ঘণ্টা

ফেরদৌস জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫৭, ১৮ জুন ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভৈরবে মাছের আড়তে তিন ঘণ্টা

আড়তে মাছ দেখাচ্ছেন এক বিক্রেতা

ফেরদৌস জামান

অক্টোবরের দুই তারিখ। দুই হাজার তেরো। এ দিন গিয়েছিলাম দেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল ভ্রমণে। সেখান থেকে ফেরার পথে রেলগাড়ি যখন ভৈরব সেতুর উপর দিয়ে কু ঝিক ঝিক ... খটাশ খটাশ শব্দ তুলে পার হচ্ছিল, তখনই একটি পরিকল্পনা এঁটেছিলাম- অল্প দিনের মধ্যেই ভৈরবে মাছের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখব। সহযাত্রী ফয়সাল ভাই এতে আপত্তি করেননি, বরং অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। কারণ যান্ত্রিক নগর জীবনে ব্যস্ততার মাঝে ফাঁক ফোকোড় পেলেই নতুন জায়গা, নতুন নতুন মানুষ ও নানান বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করতে প্রায়ই হাওয়া হয়ে যাওয়া তার অভ্যাস।

মাত্র ক’দিন বাদে অর্থাৎ সেই মাসেরই তেরো তারিখ দুজনে মিলে রওনা দিলাম। বিমানবন্দর স্টেশনের প্লাটফর্মে ঠিক সময় মতো রেলগাড়ি ঢুকে পড়ল। তার আগে অবশ্য মাইকে কিছু একটা ঘোষণা করা হলো। কিন্তু সেটা রেলগাড়ি আসার খবর নাকি উপস্থিত যাত্রীদের মধ্যে বাতাসা বিতরণের সংবাদ, ঠিক বুঝতে পারলাম না। যাকগে, সে দিয়ে আমার কোনো দরকার নেই। হাজার মানুষের ভিড় ঠেলে গাড়িতে উঠে বসলাম নির্দিষ্ট আসনে। এগিয়ে চললো জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস।


আমরা ক্রেতা বা বিক্রেতা কোনোটাই নই, কেবল একের পর এক ছবি তুলছি আর মানুষের সঙ্গে কথা বলছি, জানার চেষ্টা করছি নানান কিছু। দুই কিশোর সুশান্ত ও নয়ন যেন এমনতর মানুষ জীবনে প্রথম পেয়েছে। স্বাগ্রহে ঘুরে দেখালো বাজারের প্রতিটি গলি। ব্যস্ত বাজারে কেউ টুকরি ভরে বয়ে আনছে মাছ। কেউ লাঠি দিয়ে ধুম ধাম শব্দে বরফের চাক ভাঙায় মগ্ন।  আবার কেউবা মাছের স্তুপের পাশে দাঁড়িয়ে ক্রেতা আকর্ষণে বয়ান করে যাচ্ছে মাছের গুণ ও মান। বোয়াল, রুই, গজার, শোল থেকে শুরু করে বাইন, টেংরা, পুঁটি, বাইলা এবং বাহারী রং এর বউ মাছসহ হরেক প্রজাতির মাছ দেখলাম। এতো দিন জানতাম ইলিশ কেবল সমুদ্র এবং পদ্মাতেই মেলে। ভৈরব গিয়ে সে ভুল ভাঙলো।


পরিমাণে কম হলেও হাওরের জলেও ইলিশ পাওয়া যায়। স্তুপ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বাছাই করে আলাদা করার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের অধিকাংশই দেখলাম নারী ও শিশু। অন্য কাজের পাশাপাশি খণ্ডকালীন হিসেবে তারা মাছের আড়তে শ্রম বিক্রি করে। বিনিময়ে মেলে কিছু বাড়তি টাকা এবং কখনও কখনও খাওয়ার জন্য যৎসামান্য গুঁড়ো মাছও তারা পায়। আড়তের মাছ বিক্রেতা থেকে শুরু করে শ্রমিক- সকলেই খুশি। সুতরাং ছবি তোলার সুযোগটা হাতছাড়া করলাম না। তাদেরও দেখলাম আগে থেকেই পোজ দিয়ে বসে আছে। ব্যস্ততার মাঝেও আড়তদারদের  অনেকেই ভালোবাসার দাবি জানিয়ে বললেন, ভাই, অনুগ্রহ করে আমার দোকানে এক কাপ চা খাবেন! তিন ঘণ্টার বাজার ভ্রমণে কমপক্ষে দশ দোকানের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে হয়েছে।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ জুন ২০১৫/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ