ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সহায়-সম্বল বেচে বিশ্ব ভ্রমণ

তৈয়বুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ১৩ জুন ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সহায়-সম্বল বেচে বিশ্ব ভ্রমণ

তৈয়বুর রহমান : গ্যারেট গি, যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহর অধিবাসী। বয়স ২৩। বিয়ে করেছেন ২৫ বছরের জেসিকাকে। ছোট্ট দুই মেয়েকে নিয়ে তাদের সংসার। বড়টির বয়স তিন, নাম ডরোথি। ছোট মেয়ে ম্যানিলা, বয়স মাত্র তিন। একদিন কি যে হলো সহায়-সম্বল সবকিছু বিক্রি করে দিয়ে স্ত্রী ও কন্যাদের নিয়ে বের হয়ে পড়েন বিশ্ব ভ্রমণে।

ভীষণ অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ তিনি। আক্ষরিক অর্থে পরিবারের সকলে, স্ত্রী জেসিকা তো বটেই, এমন কি, ছোট ডরোথি ও ম্যানিলাও বাদ যায় না। আসলে গ্যারেট কানায় কানায় পরিপূর্ণভাবে নিতে চান জীবনের স্বাদ। কোনো কিছু বাদ দিতে চান না, পৃখিবীর যা কিছু দেখা সম্ভব তার সবকিছু দেখতে চান। উপভোগ করতে চান তিমি মাছের সঙ্গে সাঁতার কাটা, দেখতে চান কচ্ছপের ডিম পাড়া।

এরই মধ্যে বহু দেশ ঘুরেছেন গ্যারেট-জেসিকা পরিবার। ইন্টারনেটে পোস্ট করেছেন বিভিন্ন দেশে তাদের ঘুরে বেড়ানোর সুন্দর সুন্দর ছবি। সেই ছবি দেখলে আপনার মনে হতেই পারে পৃথিবীটা কী সুন্দর, সার্থক হয়েছে গ্যারেট ও জেসিকার জন্ম নেয়া। কখনো আঁৎকে উঠতে হয় ভয়ে। আবার ডরোথি ও ম্যানিলাকে নিয়ে তাদের খেলা দেখলে শিউরে উঠতে হয়। ভয় শূন্য হৃদয়েও সঞ্চার হয় ভয়ের।


গত নয়মাস ধরে তারা ভ্রমণ করছেন। এরই মধ্যে গেছেন অ্যান্টিগুয়া, টোঙ্গা, ফিজি, হাওয়াই, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, থাইল্যান্ডসহ আরও অনেক দেশে, ইচ্ছা আছে আরও অনেক দেশ, অনেক সংস্কৃতি দেখার।

পৃথিবী ভ্রমণে বের হওয়ার আগে স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি বিক্রি করে দেন গ্যারেট, অর্থ জমা রাখেন ব্যাংকে। এরপর হাঁটতে থাকেন পৃথিবীর পথে পথে। বিভিন্ন দেশ থেকে মাঝে মধ্যে চিত্তাকর্ষক সব ঘটনার কথা তুলে ধরেন ইন্টারনেট, ফেনবুক ও ইউ-টিউবে। কোনো কিছুই আর অজানা থাকে না ইন্টারনেট ও ইউ-টিউব ভিউয়ারদের। এমন কি, জানা হয়ে যায় ডরোথী আর ম্যানিলার অ্যাডভেঞ্চারের কথাও। ধীরে ধীরে অতি-পরিচত হয়ে ওঠে পরিবারটি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের অনুসারীর সংখ্যা এখন ৯৩ হাজার।


২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করার সময় তারা মনে করেছিলেন, পাঁচ মাস তারা ভ্রমণ করবেন। কিন্তু এখন তারা বলছেন, দেশে ফেরার কোনো পরিকল্পনাই নেই তাদের।

নিজেদের কথা বলতে গিয়ে জেসিকা বলছেন, ‘ভ্রমণ করতে সব সময়েই আমাদের ভালো লাগে। কিন্তু এর আগে মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের সব চেয়ে লম্বা সফর ছিল সফর ছিল মাত্র এক সপ্তাহের।’


বাবা-মা’র মতো মেয়ে দু’টোও কম অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় নয়, ভীষণ ডানপিটে তো বটেই। গোসল করার সময় দুষ্টুমি করতে গিয়ে থাইল্যান্ডে একবার পড়ে গিয়ে থুতুনি কেটে যায় ডরোথির। কয়েকটি সেলাই দিতে হয়েছিল তার।

‘মেয়েদের জন্ম নেয়ার আগে আমি ও আমার স্বামী যখন ভ্রমণে বের হতাম, তখন যেভাবে অ্যাডভেঞ্চার করতে চাইতাম, সেভাবেই করতাম, যেভাবে ঝুঁকি নিতে চাইতাম, সেভাবেই নিতাম,’ বলেন জেসিকা। বিয়ের পরের দিনগুলো কথা স্মরণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, তখন ভ্রমণের সময় আমরা খরচ কমানোরও চেষ্টা করতাম। কখনো কখনো ঘুমাতাম চেয়ারে হেলান দিয়ে। এমন কি, দরিদ্র এলাকাতেও যেতাম ঘুমানোর জন্য।


গ্যারেট-জেসিকা উভয়েই বলছেন, ‘সন্তান হওয়ার পর তারা মনে করেছিলেন, তাদের ঘুরে বেড়ানোর অভ্যাস কমে যাবে। কিন্তু কমে তো নাই, বরং আরও বেড়ে গেছে। ছোট্ট হলে কি হবে, মেয়েরাও ভ্রমণে মজা পায়। দেখতে চায় নতুন নতুন জায়গা। তাই ভ্রমণ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেই আমরা।’

‘পরিবারের সবাইকে নিয়ে নতুন জায়গা দেখতে এবং সেখানকার মানুষের সঙ্গ উপভোগ করতে সব সময়ই ভালো লাগে আমাদের। আর ভ্রমণকে আরও আনন্দদায়ক করে তুলেছে মেয়েরা। প্রতিটি ঘটনা তারা দেখছে, মজা পাচ্ছে, কখনো হাত তালি দিয়ে উপভোগও করছে। আর আমাদের কাছে এসব ঘটনা স্মৃতি হয়ে থাকছে। তাই ভ্রমণ চালিয়ে যতে চাই। আমরা সত্যিই ভালোবাসি ভ্রমণ’, এভাবেই প্রকাশ করেন তারা তাদের অভিব্যক্তি।


তবে জেসিকা স্বীকার করেন যে ভ্রমণ মেয়েদের শরীরের উপর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে। তবে সব সময় নয়, বিশেষ করে ঘুরে বেড়ানোর সময়ে। তার কথায়, ‘চাপ সৃষ্টি হয় ভ্রমণের দিন। মেয়েরা বিমানে খুবই ভালো থাকে, লম্বা ভ্রমণেও তারা ক্লান্তি অনুভব করে না। কিন্তু এরপরই তারা কেমন জানি ঝিমিয়ে পড়ে।’

‘ভ্রমণের সময় ভালো মন্দ, দুই রকমই দিন কেটেছে আমাদের,’ বলেন জেসিকা, ‘থাইল্যান্ডে একটা দিন খুবই খারাপ কেটেছে আমাদের। গোসল করতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে ডরোথির চিবুক কেটে যায়। আমরা তাড়াতড়ি তাকে হাসপালে নিয়ে যাই। থাইল্যান্ডের ডাক্তার ও নার্সরা খুব যত্ন নেন তার। তবে দিনের শেষটা আমাদের ভালোই গেছে।’

নিজেদের ভালো মন্দ কথা বলেতে গিয়ে জেসিকা বলেন, ‘ডমিনিকায় গ্যারেট একবার জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।’ তারপরও জেসিকা জোর দিয়ে বলছেন, ‘ভালো দিনের সংখ্যা খারাপ দিনের চেয়ে অনেক অনেক বেশি।’


‘কোইকেস দ্বীপে ছোট্ট ম্যানিলা একবার একটি লোকের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়েছিল। লোকটি বিচ বরাবর ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছিল। তা দেখে হাত তালি দিয়ে ম্যানিলার কি হাসি, কথা বলতে বলতে অতীত হাতরাতে থাকেন জেসিকা। টোঙ্গায় সঁতার কাটার সময় গ্যারেট একবার একটি তিমির লেজ ছুয়েছিলেন তিনি।

নিজের ও স্বামীর আনন্দময় দিনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘একবার বোরা বোরায় নৌকার উপর কাটিয়েছিলাম দশদিন। ডোমিনিকায় সাঁতার কেটেছিলাম তিমির সঙ্গে। এরপর দেখেছিলাম কচ্ছপের ডিম পাড়া।’

গ্যারেট ও জেসিকার বিয়ে হয় ২০০৯ সালে। তারা তাদের সঙ্গে ভ্রমণে যোগ দেয়ার বন্ধুদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ভ্রমণের মাধ্যমে অনেক জ্ঞান অর্জন করা যায়। জেসিকা প্রত্যাশা করছেন, তার মেয়েরাও জ্ঞান আহরণ করবে। ছড়িয়ে দিবে মানুষের মধ্যে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/ ১৩ জুন ২০১৬/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়