ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সিপিবির সমাবেশে হামলা: ২২ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক মামলার বিচার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ২০ জানুয়ারি ২০২৩  
সিপিবির সমাবেশে হামলা: ২২ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক মামলার বিচার

২২ বছর আগে রাজধানীর পল্টনে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়েছে। কিন্তু বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার এখনো ঝুলে আছে। মূলত সাক্ষী হাজির না হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মামলাটির বিচার কবে শেষ হবে বলতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। আর সিপিবি মামলাটি পুনরায় তদন্তের দাবি জানাচ্ছে।

২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে দুর্বৃত্তরা বোমা হামলা করে। হামলায় ৫ জন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়। ওই ঘটনার ১৯ বছর পার হত্যা মামলার রায়ে ১০ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম। তবে বিস্ফোরক আইনের মামলাটির বিচারে অগ্রগতি নেই। সম্প্রতি মামলাটি সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২১ এ বদলির আদেশ হয়েছে। এরপর থেকে ওই আদালতেই চলবে মামলার বিচারকাজ।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, মামলাটি পুনরায় তদন্ত হওয়া উচিত। এ ঘটনার পেছনে লম্বা হাত আছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হয়নি। এজন্য আমরা মামলাটি পুনরায় তদন্তের দাবি করে আসছি।

তিনি বলেন, হামলার সাথে দেশি-বিদেশি শক্তি জড়িত। কাজেই মামলা পুনরায় তদন্ত হওয়া উচিত। তাহলে প্রকৃত রহস্য উঠে আসবে। আমরা আগে থেকে বলে আসছি, একটি মামলার রায়ে যে সাজা হয়েছে সেটা প্রকৃত সাজা হয়নি। তারপরও যা সাজা হওয়ার হয়েছে। মামলাটির আরও তদন্ত হোক।

মামলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সালাহউদ্দিন হাওলাদার বলেন, সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় করা বিস্ফোরক আইনের মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। মামলাটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বদলি হয়ে গেছে। আমরা সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু সাক্ষীরা আসেনি। আমাদের চেষ্টার ঘাটতি ছিল না। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় রায় হয়েছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ঈদী আমিন বলেন, বিস্ফোরক আইনের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনা। যে কারণে মামলার বিচারে কোনো অগ্রগতি নেই।

জানা যায়, মামলাতে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর ছলিম উল্যাসহ দুজন সাক্ষ্য দেন। এরপর আর কোন সাক্ষ্য হয়নি। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে মামলার কিছুটা গতি ফিরেছিল। এরপর প্রায় সাড়ে ছয় বছর ধরে সাক্ষী হাজির না হওয়ায় মামলার বিচারকাজ এগোয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি সিপিবির সমাবেশে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায়  ৫ জন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়। ওই ঘটনায় সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলা করেন। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে আসামিদের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি মর্মে তদন্ত শেষে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল। এরপর ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ও ২০০৫ সালের আগস্টে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা হয়। এসব ঘটনায় জঙ্গিরা জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়ার পর ২০০৫ সালে মামলাটি আবার পুনঃতদন্তের আদেশ দেওয়া হয়। মামলাটি পুনঃতদন্তের পর ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর  আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর মৃনাল কান্তি সাহা।  পরের বছর ২১  আগষ্ট আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত ।

২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি হত্যা মামলার রায়ে মুফতি মাঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান ও নুর ইসলামকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় রফিকুল ইসলাম মিরাজ ও মশিউর রহমানকে খালাস দেওয়া হয়। 

আর বিস্ফোরক মামলাটিতে এখন পর্যন্ত ১০৬ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৩০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন- মুফতি আব্দুল হান্নান, মুফতি মাঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মো. মশিউর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিরাজ ও নুর ইসলাম।

আসামিদের মধ্যে মুফতি আবদুল হান্নানের অন্য একটি মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আসামিদের মধ্যে শওকত ওসমান, হান্নান সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ও মাইনউদ্দিন কারাগারে আছেন। অপর ৮ আসামি পলাতক রয়েছেন।

/মামুন/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়