ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কদর বেড়েছে রাখাইনদের তাঁত শিল্পের

বিলাস দাস || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৭, ২৩ জানুয়ারি ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কদর বেড়েছে রাখাইনদের তাঁত শিল্পের

নিজেদের দোকানে বিক্রয়কর্মীর কাজ করছেন এলাখিন রাখাইন (ছবি : বিলাস দাস)

বিলাস দাস, পটুয়াখালী : শীত মৌসুমে পোশাক তৈরির ধুম পড়েছে কুয়াকাটার রাখাইন পল্লীগুলোতে। দিন-রাত পরিবারের সবাই মিলে মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করছেন বাহারি ডিজাইন ও নানা রঙের পোশাক। আর এই পোশাক কিনতে ভিড় করছে এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকরা।

 

কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র সাড়ে সাত কিলোমিটার দূরে মিশ্রিপাড়ার রাখাইন পল্লী। যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটরসাইকেলও টমটম ব্যবস্থা। মিশ্রিপাড়ার পৌঁছে বিশাল আকারের বৌদ্ধ মন্দিরের নজর কাড়া সৌন্দর্য অবলোকন করতে না করতেই দৃষ্টি কাড়বে বৌদ্ধ বিহারে দক্ষিণ পাশ জুড়ে অবস্থিত রাখাইন পল্লিগুলো।

 

প্রতিটি টোন অথবা বসত ঘরের সামনে রয়েছে পোশাক তৈরির নানা সরঞ্জাম আর একটি করে দোকান।

 

দোকানগুলোতে সাজানো রয়েছে তাদের তৈরি নানা ডিজাইনের বাহারি রঙের পোশাক। বেশির ভাগ সময় এরা বিকেলের দিকে পোশাক তৈরি করে থাকেন।

                       বাবা বাখেন রাখাইনের সঙ্গে তাঁতের কাজ করছেন এলাখিন রাখাইন (ছবি : বিলাস দাস)

 

তবে পোশাক তৈরিতে সুতাসহ নানা উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিতে হতাশ হয়ে পড়ছেন রাখাইন পল্লির তাঁত শিল্পীরা। রাখাইনদের পুরনো ঐতিহ্য নিয়ে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

 

মিশ্রিপাড়ার আদিবাসী বাখেন রাখাইন (৪৫)। র্দীঘ দুই যুগ ধরে তাঁত শিল্প পেশায় জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। রাখাইন পল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, বসত ঘরের সামনে চাংএ বসে একটি লাল রঙের চাদর তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি। তার পাশেই কাজে সহযোগীতা করছেন তার দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে এলাখিন রাখাইন। বাখেন রাখাইনের আদি ও মাতৃ ভাষা বুঝতে না পারায় পোশাক কথা হয় এলাখিনর সঙ্গে।

 

এলাখিন জানায়, তারা শাড়ি, লুঙ্গি, চাদর, টি-শার্টসহ উপযোগী ও মানসম্মত পোশাক তৈরি করে থাকে। এলাথি বলে, ‘একটি শাড়ি বুনতে একজনের সময় লাগে চার দিন। খরচ হয় চার থেকে সাড়ে চারশ টাকা। আর ওই তৈরি শাড়িটি বিক্রি করা হয় মাত্র ছয়শ টাকায়।’

 

এলাখিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, ‘একটি মানুষের দৈনিক পারিশ্রমিক ন্যুনতম তিন থেকে চারশ টাকা। কিন্তু শাড়ি তৈরির উপকরণ ও পরিশ্রম দিয়ে ওই শাড়িটি বিক্রি করলে মাত্র দেড় থেকে দুইশ টাকা লাভ হয়। এলাখিন আরো জানায়, আগের থেকে বর্তমান বাজারে পোশাক তৈরি উপকরণের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে লাভের চেয়ে লোকসানের ভার বেশি বহন করতে হচ্ছে।

 

পাশেই নীল রঙের কাপড় তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন মেমোং রাখাইন। তিনি বলেন, ‘শীত মৌসুমে আমাদের এখানে ক্রেতাদের ভিড় একটু বাড়ে। তবে পণ্যের উপযুক্ত মূল্য পাই না। বাইরের অনেক দোকানের চেয়ে আমাদের পোশাকের মান অনেক ভাল। কিন্তু মূল্য তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম। আমাদের তৈরি পোশাক দোকানীরা কিনে নিয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন। অথচ আমরা সেই মূল্যটা পাচ্ছি না।’

তিনি দাবি করেন, ‘পোশাক তৈরি উপকরণের মূল্য যদি তাদের নাগালে রাখা হয়, তাহলে এই আদিবাসী রাখাইন পরিবারগুলো এই কুয়াকাটায় টিকে থাকবে। অন্যথায় রাখাইনদের ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে কুয়াকাটা থেকে।’

 

 

 

রাইজিংবিডি/পটুয়াখালী/২৩ জানুয়ারি ২০১৫/বিলাস/সনি

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়