সময়ের আগেই শেষ হচ্ছে বইমেলা, কী ভাবছেন তারা
মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম
সারাদেশে একসপ্তাহের জন্য ‘কঠোর লকডাউন’ শুরু হচ্ছে ১৪ এপ্রিল থেকে। এই লকডাউনকে কেন্দ্র করে নির্ধারিত সময়ের একদিন আগেই বইমেলা শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই প্রসঙ্গে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘আগামী ১২ এপ্রিল শেষ হচ্ছে বইমেলা।’ বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন লেখক-পাঠক-প্রকাশকরা।
এবার বইমেলা নিয়ে শুরুতে ছিল দোটানা। বইমেলা হবে কি না, সে ভাবনায় প্রকাশক, লেখক, পাঠক ও আয়োজকদের মধ্যে ছিল অনিশ্চয়তা। তবে, শেষপর্যন্ত ফেব্রুয়ারি বদলে মার্চের ১৮ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই মেলার উদ্বোধন করেন।
১৮ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর শুক্র ও শনিবারে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা। এরপর সময়ে বদল আসে। ৩টা থেকে ৮টা, ৩ টা থেকে সাড়ে ৬টা, সবশেষে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত করা হয় মেলার সময়সূচি।
বারবার মেলার সময় পরিবর্তন নিয়ে বেকায়দায় পড়েন পাঠক দর্শনার্থীরা। ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রকাশকরা। এই অসন্তোষ ও ক্ষোভের ভেতর নতুন সিদ্ধান্ত এলো মেলা শেষ হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের একদিন আগে। এই প্রসঙ্গে ম্যাগনাম ওপাস-এর কর্ণধার আনোয়ার ফরিদী বলেন, ‘আমরা প্রকাশকরা অক্টোবর থেকে বলেছিলাম, ফেব্রুয়ারিতেই মেলা করার জন্য। বাংলা একাডেমি না শুনে মার্চে করলো। বারবার সময় পরিবর্তন করে বাংলা একাডেমি আমাদের সঙ্গে খেলা খেলেছে। ফলে পাঠক মেলায় আসেনি।’
ইংলিশম্যান-এর স্বত্বাধিকারী আনিসুর রহমান বলেন, ‘বাংলা একাডেমি নিজেরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। অসময়ে মেলা করেছে। তারপরও বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা রাখলে প্রকাশক, পাঠক সবারই সুবিধা হতে।’
মেলায় আগত পাঠক ইয়াকুব রানা বলেছেন, ‘একদিন আগে মেলা শেষ করে ভালো করেছে। করোনায় মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। তবে, এবার মেলার সময়টা নির্ধারণ করা ঠিক হয়নি।’
লেখক রয় অঞ্জন বলেন, ‘প্রাণের মেলার মধ্যে এবার প্রাণ ছিল না। পাঠক, লেখক, প্রকাশক সবার প্রাণই ওষ্ঠাগত এবার। মেলা শেষ হলে প্রকাশকদের উদ্যোগে অনলাইনে হলেও বই বিপণনের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি অনুদান না পেলে বই ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস হয়ে যাবে।’
সাংবাদিক গিয়াস আহমেদ বলেন, ‘যে সময় মেলা চলছে, এ সময় মেলার তেমন উপযোগিতা আছে বলে মনে হচ্ছে না। মেলায় পাঠক নেই, ক্রেতা নেই। চারিদিকে খা খা করছে। বর্তমান পরিস্থিতেতে মেলা একদিন কমানো সঠিক সিদ্ধান্ত।’
লেখক, সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিমের মতে, ‘জনস্বাস্থ্য সবার আগে। সে হিসেবে মেলা একদিন আগে বন্ধ করার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। মেলার সময়ের ব্যাপারে বার বার সিদ্ধান্ত বদল খুব অপেশাদারী মনে হয়েছে। করোনার মধ্যে যে উদ্দেশ্যে মেলা খোলা রাখা হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। পাঠকের সমাগম হয়নি।’
পাঠক মুনীরা ফেরদৌসী বলেন, ‘ঈদের পর পরিস্থিতি ভালো হলে প্রকাশকরা সবাই মিলে একটা ভার্চুয়াল মেলার ব্যবস্থা করতে পারে। বাংলা একাডেমি একটা দায়সারা মেলা শেষ করেছে। এবার প্রকাশকদের পালা। পাঠকরা করোনার ভয়ে মেলায় আসতে ও বই কিনতে পারেনি।’
মেলায় আগত আইনজীবী মাইদুল ইসলাম পলক বলেন, ‘অফিসের কাজ শেষ করে মেলায় ঢুকতে ঢুকতে সময় শেষ। পাঠক হিসেবে এবার একদম হতাশ। করোনা সর্বক্ষেত্রে বিশাল একটা ধাক্কা দিয়েছে।’
/এনই/
আরো পড়ুন