ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অসময়ের তরমুজ চাষে সফল কৃষক সানু মিয়া

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ২৮ জুন ২০২২   আপডেট: ১১:৫৩, ২৮ জুন ২০২২

তরমুজ মৌসুমি ফল। সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বাজারে পাওয়া যায়। কিন্তু হবিগঞ্জে অসময়ে এই তরমুজ চাষ করে ভালো ফলন পাওয়ায় এখন আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন জেলার বাহুবলের কৃষক সানু মিয়া।

বাহুবল উপজেলার ভুলকোট গ্রামের বাসিন্দা সানু মিয়া। বাড়ির সামনের ২০ শতক জমিতে মাচায় সাগর কিং ও মধুমালা নামে দুই জাতের তরমুজ চাষ করেছেন তিনি। মাচার উপর চাষ করা এসব সবুজ (সাগর কিং) ও হলুদ (মধুমালা) রঙের রসালো তরমুজ নেটের ভেতরে ঝুলছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে সানু মিয়া একই জমিতে দুই জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। এজন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম তাকে উন্নতজাতের বীজ সংগ্রহ করে দেওয়া থেকে শুরু করে নিয়মিত দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র ২০ শতক জমিতে সানু মিয়া তরমুজের বীজ রোপণ করেন। প্রায় ৫৫ দিনের মধ্যে তরমুজের ফুল ও ফল আসে। বর্তমানে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ তরমুজ রয়েছে তার জমিতে। এর মধ্যে কোনোটার ওজন ১ কেজি থেকে দেড়কেজি হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর ১৫-২০ দিন পরেই তিনি তরমুজ সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। তরমুজ উৎপাদনে সানু মিয়া প্রাকৃতিক জৈব সার ব্যবহার করেছেন। 

পোকামাকড় নিধনের জন্য তিনি ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়োলো কালার ট্যাপ পদ্ধতি অনুসরণ করেন। এসবই তিনি কৃষি অফিসের পরামর্শে করেছেন। এতে এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে প্রায় ২৫  হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে প্রতিকেজি তরমুজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। সেই হিসেব করে লাভের আশায় সানু মিয়ার মুখে প্রশান্তির হাসি দীর্ঘ হচ্ছে।

সানু মিয়া বলেন, ‘ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করছি। কিন্তু আমি বিকল্প আয়ের সন্ধান করতে থাকি। এই সময় মাচায় তরমুজ চাষ সম্পর্কে কৃষি অফিস থেকে জানতে পারি। এরপর এ বিষয়ে সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়ে অসময়ে এ তরমুজ চাষ করি। এজন্য আমার এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর কিছু দিন পর থেকে তরমুজ বিক্রি করতে পারবো। এভাবে উৎপাদন অব্যাহত থাকলে আশা করছি আমার সব খরচ বাদ দিয়ে কমপক্ষে লাখ টাকা লাভ থাকবে।’

অপর কৃষক সুমন মিয়া বলেন, ‘আমি সানু মিয়ার তরমুজ চাষ দেখেছি। তিনি তরমুজ চাষে প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন বলে তার খরচও অনেক কম হয়েছে। তাই তার অনেক লাভ হবে। সরকারি সহযোগিতা ও পরামর্শ পেলে আগামী মৌসুমে এই পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ আমিও করবো। শুধু আমি না এলাকায় এমন আরও অনেক কৃষক তরমুজের চাষ করবে।’

দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, ‘মোটিভেশনের মাধ্যমেই কৃষক সানু মিয়া অসময়ে মাচায় তরমুজ চাষ করেছেন। প্রায় ২০ দিন পর এসব তরমুজ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করা যাবে। আশা করছি আগামী বছর অফ সিজনে উপজেলা জুড়ে এই জাতের তরমুজ চাষ বৃদ্ধি পাবে।‘ 

তিনি আরো বলেন, ‘দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের কৃষক দিদার হোসেন ও তৌহিদ মিয়া অসময়ে তরমুজ চাষ করে ইতো মধ্যে লাভবান হয়েছেন। এদিকে, মাচায় তরমুজ চাষ দেখতে প্রতিদিন আশপাশের এলাকার কৃষক ও অন্য লোকেরা তার (সানু মিয়া) কাছে আসছেন। কীভাবে আগামীতে তারা নিজ নিজ জমিতে তরমুজ চাষ করবেন সে সম্পর্কে পরামর্শ নিচ্ছেন।’

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তমিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘বাহুবলে সাগর কিং, গোল্ডেন ক্রাউন ও মধুমালা জাতের তরমুজ চাষে সফলতা এসেছে। আশা করছি দিন দিন তরমুজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে। আমরা বিষমুক্ত তরমুজ চাষে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়