ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ঘুষ ও দালালমুক্ত শেরপুর ভূমি অফিস

তারিকুল ইসলাম, শেরপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৫, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২  
ঘুষ ও দালালমুক্ত শেরপুর ভূমি অফিস

ভূমি অফিস মানে ভোগান্তি। জনমনে দীর্ঘ দিনের এই ধারণা পাল্টে দিয়েছেন শেরপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. উজ্জ্বল হোসেন। ভূমি কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করে ভোগান্তি ছাড়াই শেরপুরবাসী এখন সব ধরনের ভূমি বিষয়ক সেবা পাচ্ছেন। স্বয়ং সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের বারান্দায় চেয়ার পেতে বসে দিচ্ছেন নাগরিক সেবা। ভূমি অফিসের প্রবেশদ্বারের বারান্দায় লাগিয়েছেন দালালমুক্ত অফিসের ঘোষণা। টানানো হয়েছে ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা গ্রহণের গাইডলাইন। নামজারি, জমি খারিজ ও জমা একত্রীকরণ সংক্রান্ত নিয়মাবলী ও সরকারি খরচের বিবরণ। সদর উপজেলার প্রাণকেন্দ্র মাধবপুরে অবস্থিত সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সবকিছুতে এসেছে বড় পরিবর্তন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শেরপুর ভূমি অফিসে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হননি এমন মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম। জমির নামজারি, ভূমিকর পরিশোধ, খাসজমি বরাদ্দ ও জমি ক্রয়-বিক্রয় করার ক্ষেত্রে খোঁজখবর জানতে এবং রেকর্ড জানাসহ ভূমি সংক্রান্ত সেবা নিতে এসে মানুষ কখনো দালালের খপ্পরে পড়ে অতিরিক্ত টাকা গচ্চা দিয়েছে, কখনো বা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্বারা ঘুষ, হয়রানির শিকার হয়ে মাস, বছর পার করে কাজটি সারিয়ে নিয়েছেন। ভূমি অফিস নিয়ে এমন নেতিবাচক ধারণা সেবাগ্রহিতাদের মন থেকে দূর করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন শেরপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. উজ্জ্বল হোসেন। সেবা গ্রহিতাদের জন্য ভোগান্তি ছাড়া কাঙ্ক্ষিত সুবিধা নিশ্চিত করতে কর্মরত সকলকে দিয়েছেন কঠোর নির্দেশনা।  

শেরপুর সদর উপজেলা ভূমি অফিস ঘিরে ইউনিয়ন তহশিল অফিসগুলোও সাধারণের জন্য খুলে দিয়েছে ভূমি সংক্রান্ত সেবার দরজা। শহর আর গ্রামের মানুষ এখন নিজ ভূমির কাজের কথা অফিসে এসে বলতে পারছেন সরাসরি সহকারী ভূমি কমিশনারকে। শেরপুর সদর এসিল্যান্ড অফিস নিয়ে এর আগে অভিযোগের শেষ ছিল না। এখানকার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছিল দুর্নীতি। দালালের উপদ্রব ছিল সবচেয়ে বেশি। দালালরাই কর্মকর্তা আর বেঞ্চ সহকারীদের নাম দিয়ে ‘ঘুষের টাকা’ হাতিয়ে নিতেন বলে অভিযোগ আছে। 

শেরপুর পৌরসভার খোয়ারপার এলাকার মো. আকরাম হোসেন (৫০) বলেন, ‘আমি এর আগে আমার জমির খারিজ করার জন্য এসেছিলাম। সেই সময় আমার কাগজ হাতে পেতে তিন মাসের বেশি সময় লেগেছিল। তবে আজ সকালে আমি একটি নতুন খারিজের জন্য এসেছি, আমাকে ৪ ঘণ্টার মধ্যে করে দেওয়া হয়েছে। এতে আমি খুব খুশি। আমি চাই সকল মানুষ যেন এইভাবে সেবা পায়।’

সেবা নিতে আসা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ফিল্ড অর্গানাইজার মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘শেরপুর ভূমি অফিসের আওতাধীন নদীগুলোর বিভিন্ন জমির জটিলতা নিরসনে আমাদের মাঝে মধ্যে শেরপুর ভূমি অফিসে আসতে হয়। আগে সেই কাজ করতে মাস পার হয়ে যেত। কিন্তু এই ভূমি অফিসারের সহযোগিতায় আমরা দিনের কাজ দিনে করতে পারছি। এটা আমাদের জন্য খুবই উপকার হয়েছে।’

ভূমি অফিসের তথ্যমতে, মো. উজ্জ্বল হোসেন গত ১৩ জুলাই শেরপুর ভূমি অফিসে যোগ দিয়েছেন। যোগ দিয়েই জনদুর্ভোগ নিরসনের কাজে হাত দেন। প্রথমে অফিসে আসা সেবা প্রত্যাশীদের বসার জন্য অকার্যকর ফ্রন্ট ডেস্ক ও ভূমিসেবা কেন্দ্র ‘গোলঘর’ পুনঃচালু করেন। সিসি ক্যামেরা বসিয়ে করা হচ্ছে নজরদারি। গত ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর হাতেনাতে ধরেন ৪ দালালকে। পরে মুচলেকা নিয়ে তাদের সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফেসবুকে চালানো হচ্ছে সতর্কতা ও সচেতনতামূলক প্রচারণা। একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দালালদের অফিসে ডেকে এনে তাদের কাছ থেকে ফেরত দেওয়া হয়েছে বাড়তি টাকা।

এ ব্যাপারে শেরপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘আমি শেরপুরে যোগ দিয়েই সকল শাখার অপেক্ষমাণ ১৬০০ ফাইল সমাপ্ত করে দিয়েছি। এতে প্রয়োজনীয় নথি বা ফাইল এখন বাছাই করে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে এবং দিনের কাজ দিনে শেষ করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত নোটিশ আমার দরজায় লাগানো আছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমার দফতরের সব কার্যক্রম অনলাইনে হওয়ায় নগদ টাকার ব্যবহারের সুযোগ নেই।’  

অফিস চলাকালীন অফিসের কর্মচারীদের গলায় নিজের পরিচয়পত্র ঝুলানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে কর্মচারী ও দালাল সেবা গ্রহিতারা সহজে নির্ধারণ করতে পারছে। 

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, ‘আমি এখানে যোগ দেওয়ার পর থেকে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে শেরপুরবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ভূমি অফিসের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করি। পুরো অফিস এখন দালালমুক্ত।’ 

এ ব্যাপারে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
 

/বকুল/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়