ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

তৃষ্ণার্ত উপত্যকায় সুপেয় পানি  

সঞ্জীবন মণ্ডল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৫, ২৭ মে ২০২৩   আপডেট: ১৯:৫৬, ২৭ মে ২০২৩
তৃষ্ণার্ত উপত্যকায় সুপেয় পানি  

কালের নিয়মে সবই পরিবর্তনশীল। নিয়মের বশেই সমাজের আর্থ-সামাজিক, ইতিহাস, ভৌগোলিকতার পরিবর্তন হয়। সমাজের মতো পরিবর্তন হয় কবির মন-চিন্তা-চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গীর। কবিরা এই পরিবর্তনের ধারা বহন করে চলেন আমৃত্যু। তাই কবিকে রাষ্ট্র-সমাজ তথা দেশ সমীহ করে চলেন। কারণ তিনি সত্যি কথার বাহক; চোখে চোখ করে সত্যি কথার শব্দ ঝুড়ি সাজিয়ে বাক্য বিন্যাস তুলে ধরেন রসজ্ঞ ও চিন্তাশীল পাঠকের সামনে। কবির কাজ শুধু জ্ঞান দান নয়- কবির কাজ আনন্দ দেওয়া; কবির কাজ সৃষ্টি করা; কবির কাজ সঠিক রাস্তার খোঁজ দিয়ে সমাজকে পথ দেখানো। কবির কাজ করতে গিয়েই তরুণ কবি তীর্থঙ্কর চক্রবর্তী তাঁর কাব্যগ্রন্থের নাম দিয়েছেন ‘তৃষ্ণার্ত উপত্যকা থেকে বলছি’।

কিসের তৃষ্ণা? কোথায় উপত্যকা? কী বলছি? কেন বলছি? হাজারও প্রশ্ন; হাজারও উত্তর দুই মলাটে।পাঠক খুঁজবে উত্তর, পাঠক পাবে দিশা, পাঠক জানবে ইতিহাস, পাঠক পাবে শিক্ষা। কবির উদ্দেশ্য হবে সফল। তারপর কালের নিয়মক্রমে কবি ডুববেন অন্য চিন্তা-চেতনায়; কবি তীর্থঙ্কর চক্রবর্তীর কলম বইবে অন্য খাতে।

আমি যেখানে বসে ‘তৃষ্ণার্ত উপত্যকা থেকে বলছি’ পাঠ করে ব্যক্তিগত অনুভূতি লেখার চেষ্টা করছি; সেস্থান থেকে কাব্যগ্রন্থটির জন্মভূমির দূরত্ব প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার। আবার গ্রন্থটি যেখান থেকে গ্রন্থরূপ লাভ করেছে সেই জায়গাটি বর্তমানে কাঁটাতারের ওপারে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের রাজধানী শহর। কথাগুলি না বললেও হতো। কিন্তু আমি যখন ‘তৃষ্ণার্ত উপত্যকা থেকে বলছি’ পাঠ শেষ করে বইটি বন্ধ করতে যাচ্ছি, ঠিক সেই মুহূর্তে আমার কানে কে যেন বলে উঠল পরিবর্তনশীল ইতিহাসের কথা: ‘বাংলা, বিহার, উড়িশ্যার মহান অধিপতি তোমার শেষ উপদেশ আমি ভুলিনি জনাব…।’

তারপর মনের কোণে উঁকি দিল ১৯০৫ এর বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাবের ঘটনাক্রম। তৎকালীন সময়ে ঈশান বঙ্গ বা বরাক উপত্যকা তো তৃষ্ণার্ত ছিল না। তৎকালীন সময়েও এই অঞ্চলে প্রবাহিত হতো বরাক নদীর সুপেয়  জলধারা। সেই জলধারা আজকের দিনে কবির চোখে তৃষ্ণার্ত কেন? তারপর পুনরায় পাঠ শুরু করলাম। পাঠান্তে খুঁজে পেলাম কবির সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গী। কবির দৃষ্টিভঙ্গীই আমায় নিয়ে চলল ১৯৪৭-এ। চোখের সামনে ভেসে উঠল বরাকজুড়ে বইছে বরাক নদী, মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া; তারপর আপন বেগে বইছে সুরমা নদীর জলধারা। বরাক ও সুরমা যেন দুই বোন। দুই বোনই এদেশবাসীর কাছে ব্রহ্মপুত্র হলেও ওদেশবাসীর কাছে মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গর্ভ থেকে তো সৃষ্টি হয়- গর্ভে বিলীন! এ আবার কেমন কথা? কথাটি ব্যতিক্রম বলেই কবির কলমে বর্তমান বরাক উপত্যকাই তৃষ্ণার্থ উপত্যকা হিসেবে নির্মাণ হয়েছে বলে আমার মনে হয়।

ইতিহাস ও সাহিত্য অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। ইতিহাস কখনও সরাসরি বা পরমার্জিতভাবে সাহিত্যে উপস্থাপিত হয়। এই পরিমার্জনের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে সাহিত্যিকের উপর। ‘তৃষ্ণার্ত উপত্যকা থেকে বলছি’ কাব্যজুড়ে তাই আমরা এক বৃহৎ ইতিহাসকে পাই। যে ইতিহাস ১৯৪৭ থেকে সমসাময়িকের কথাই বলেনি- বরং প্রাচীন বঙ্গ বা বাংলাকেও ছুঁয়ে গেছে। একসময় বাংলা তো ছোট ছোট জনপদে বিভক্ত ছিল। সেই গৌড়, তাম্রলিপ্ত, অঙ্গ, বঙ্গ, বরেন্দ্র, সমতট, হরিকেলের পাশেই সমভাষা, সম খাদ্যাভ্যাস, সম বেশভুষা নিয়ে জ্বলজ্বল করত শ্রীহট্ট। সেই জনপদের সমস্ত উপাদনই রয়েছে; শুধু নেই জনপদগুলো। জনপদগুলোই তো পাশাপাশি অবস্থান করে হয়েছিল পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গ এখনও স্বমহিমায় ভাস্বর কিন্তু পূর্ববঙ্গ গেল কোথায়? পূর্ববঙ্গ রূপান্তরিত হলো বাংলাদেশে। দুই বাংলাসহ ঈশান বাংলা ও ত্রিপুরার মাঝ বরাবর কাঁটাতারের বেড়া তো ভাষা-সংস্কৃতি- পোশাক ও খাদ্যাভ্যাসের পার্থক্য করতে পারেনি। ‘শ্রীহট্ট’ নাম বললে এখন আর কতজন বা বলতে পারেন? এই শ্রীহট্টের জনপদজুড়েই তো বরাক নদী, কোশিয়ারি নদী ও সুরমা নদী বিরাজমান। কালের নিয়মে শ্রীহট্ট রূপান্তরিত হলো ‘সিলেট’ নামে। ’৪৭ এ সিলেট ভাগ হলো। করিমগঞ্জ, কাছাড়, হাইলাকান্দি রইল এপারে, বাকি অংশ ওপারে- এটাই ইতিহাস। এই ইতিহাসের পরিণাম ফিসফাস কথা বলেছে ‘তৃষ্ণা উপত্যকা থেকে বলছি’ গ্রন্থের নাম কবিতায়-

‘খণ্ড-বিখণ্ড মানচিত্রের বক্রতায়
হাওরে এখন সহস্র উদ্বাহু শোক।
ক্ষুধাতুর তাসের ঘর থেকে সমানে 
তাঁবু ফেঁড়ে টহল দিচ্ছে হাওরচারী চোখ;
মাথার ত্রিপল, আকালের চাল, গুড়, চিড়ায়-
এরা প্রতিশ্রুতির ঈশ্বর খোঁজে বাইপাসে।
মন্ত্রের মতো উচ্চারিত হয় শব্দক্ষুধা,
‘আমার… এর রিলিফ, গুদামের বাইচ্চা…।’

স্বজনের তৃষায়, কত উনুন জ্বলেনি অবেলায়।
কত অ-সাঁতারু ভালোবেসে গেল নিঃশর্তে। 

গোত্রহীন তৃষ্ণার্ত উপত্যকায়।’ 

তীর্থঙ্কর চক্রবর্তীর ‘তৃষ্ণার্ত উপত্যকা থেকে বলছি’ কাব্যগ্রন্থের সময় পরিসর নিয়ে মোটামুটি একটা ধারণা অর্জন করার পর অন্যান্য দিক খুঁজতে চেষ্টা করলাম। সেদিক খুঁজতে গিয়ে গিয়ে মনে হলো কবি নিতান্তই নবীন। তাই ‘মা’কে এড়িয়ে যেতে পারেননি। সমস্ত নবীন কবির ক্ষেত্রেই তাই হয়। ‘মা’, ‘বর্ষা’, ‘ঋতু’ ‘বিশিষ্টজন’ ইত্যাদি বিষয়গুলি ভিন্নভিন্ন রূপে ফিরে আসে।

‘ফোর্থ স্যাটার্ডে ও মা’ কবিতায় কবির পঙ্ক্তি নতুনত্ব দান করেছে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই:
‘তোমার গোড়ালি ফাটা পা, যতটা পথ হেঁটেছে-
পৃথিবীতে সত্যিই কি এতটা পথ জন্ম নিয়েছে মা?’

‘অমরত্বে নবজন্ম’ কবিতায় স্বর্গীয় কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের প্রতি কবির নিবেদন-
‘এখন জলভরা মেঘের ওপারে তোমার বাস।
ওখানেও নিশ্চয় মাটির গন্ধ খুঁজে ফিরছো, কালিকাপ্রসাদ?’

‘মেধার জন্মদিন’ কবিতায় কবি নতুন ভাষা শুনিয়েছেন আমাদের-
‘২২শে শ্রাবণ,
দেহান্তরিত মেধার জন্মদিন’

উক্ত ধারার কবিতাগুলিতে কবির প্রতিভা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। কাব্যগ্রন্থের নামকরণের সাথে কবিতাগুলির নির্মাণ যথার্থ। তারপরেও বলতে হয় এই ধারার কবিতার জন্য আলাদা গ্রন্থ নির্মাণই শ্রেয়। যেখানে শুধু বাৎসল্য রস বা প্রাথমিক চিন্তাধারারা কথা বলবে।

সময়ের পরিসর নির্মাণে কবি ‘বিবস্ত্র ভূগোল কাঁদে’ কবিতায় তৃষ্ণার্ত উপত্যকার প্রলয়ঙ্কর রূপকে ফুটিয়ে তুলেছেন গভীরভাবে। ইতিহাস ও ভুগোলের বিষয় আমরা প্রথমেই আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। সেই প্রসঙ্গেই পাঠকের নজর টানবে কবি নির্মিত পঙ্ক্তি-
‘সে ভালোবেসেই
উদ্বাস্তু হলো তোমার গভীরে।
তারও কান্না পায়, বুক ভেঙে ভূগোল হয়।
ভূগোল যখন হামাগুড়ি দিয়ে তোমার
আর এক জীবনের মানচিত্র আঁকে-
সময়ের ইতিহাসে তুমি সমুদ্রে মিশে যাও।’

যে উপত্যকার জলধারা আপন গতিতে বইতে অভ্যস্ত ছিল; সেই গতিধারায় শ্যাওলা জমানোর চেষ্টা করলে উপত্যকা তো তৃষ্ণার্ত হবেই। জনগোষ্ঠী, সমাজ ও শহরই শুধু তৃষ্ণার্ত হয় না, কবির চোখে জলপ্রবাহও ব্যঞ্জনার আড়ালে তৃষ্ণার্ত হয়ে ওঠে। তখন তৃষ্ণার্ত জলধারার উম্মাদনার কারন ও ফলাফলকে প্রত্যক্ষ করেই কবি উক্ত কবিতা রচনা করতে পারেন। কবির যে নির্মাণ পাঠকের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়- প্রকৃতির কাজে হস্তক্ষেপ করলে ভূগোল পালটে যেতে পারে।
‘স্পন্দনে উনিশ’ কবিতা মূলত কথা বলে ছে ১৯৬১ এর শিলচর স্টেশনের করুণ ঘটনাকে নিয়ে।কবির উপমা প্রশংসনীয়। কবির মতো আমরাও আশাবাদী- 
‘বাংলাই হোক বাঙালির প্রাণে
যাপনের স্পন্দন।’

বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে আমার আপনার মাতৃভাষার ব্যবহার ও প্রয়োগ প্রথাগত শিক্ষায় নিজভূমে ধীরে ধীরে কমলেও বহির্ভূমে কিন্তু বাংলাভাষার বিস্তার বাড়ছে। সেই বিষয়ে ভাষাপ্রেমীদের প্রচেষ্টার খামতি নেই। কবি উল্লেখ করেছেন-
‘এই ভাষাতেই বাস্তুহারার
ডায়েরি লেখেন কবি।
এই ভাষাতেই সুরের খেয়ায়
শিল্পী আঁকেন ছবি।’

আমরা আশাবাদী, ইউনেস্কোতেও একদিন আমাদের মাতৃভাষা আর প্রস্তাবিত ভাষা হয়ে থাকবে না। ইউনেস্কোর অভ্যন্তরে অন্যতম প্রধান কার্যকারী ভাষা হবে আমাদের মাতৃভাষা।

কাব্যগ্রন্থজুড়ে রয়েছে- প্রেম ও বিষাদের কথা।প্রেম ও বিষাদ তো জীবনেরই অঙ্গ। সাধারণ মানুষ বা পাঠক তা অনুভব করতে পারেন কিন্তু কবি সেই অনুভবকে ভাষায় রূপদান করতে পারেন। এ ক্ষেত্রেও তীর্থঙ্কর চক্রবর্তী সার্থকতার পরিচয় দিয়েছেন। ভাব ও ভাষায় নির্মাণ করেছেন: 
‘অনেক সাধের স্বপ্নে গড়া
ব্যথার রাজপ্রাসাদ।’
‘বসন্ত’ কবিতায় উল্লেখ করেছেন: 
‘এক পাতা ঝরা বসন্তে আমি
শুনেছি তোমার দীর্ঘশ্বাস।
সেকি ভালোবাসা? নাকি অভিমান ?
নাকি বেপরোয়া ভুলের পূর্বাভাস?’
‘প্রেম ও প্রতিস্বর’ কবিতায় শুনিয়েছেন প্রেমিক কবির কবি হয়ে ওঠার কথা:
‘কবিতা, ভাগ্যিস তুমি ছিলে! তাই তো
আমি শব্দের গায়ে গন্ধ খুঁজে পাই;
গন্ধও হয় শব্দ মুখর সুখ।’

কবিরা হন আশাবাদী। আশাবাদী কবি তীর্থঙ্কর চক্রবর্তী এক বুক আশা নিয়ে তৃষ্ণার্তের সমুদ্রে ডুব দিয়ে নির্মাণ করেছেন: ‘তৃষ্ণার্ত উপত্যকা থেকে বলছি’। কবিতার শৈলী নির্মাণে ও ছন্দ প্রয়োগে ব্যক্তিগতভাবে তিনি তৃষ্ণাকে জয় করেছেন। কিন্তু কিছু দুরূহ ও কঠিন শব্দ প্রয়োগে পাঠকের তৃষ্ণা মিটাতে একটু সময় লাগাবে বলে আমার মনে হয়। পাঠক তো বিভিন্ন স্তরের হন। তাই নবীন কবি হিসেবে কবি যদি সর্বস্তরের পাঠককে সামনে রেখে কবিতার শব্দ চয়নে মনোনিবেশ করতেন তবে তৃষ্ণার্ত উপত্যকা দ্রুত মিষ্টত্ব উপত্যকায় পর্যবেসিত হতো এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। যেমন- ‘আনপড়ের’; ‘কাকবলিতে’; ‘দরবেশ-মেঘ’; ‘বড়ে গোলাম আলীর তোড়ি’; ‘নৈঃশব্দ্যের মেহফিল’; ‘কনীনিকায়’; ইত্যাদি শব্দ, শব্দবন্ধ বা বাক্যের অর্থ উদ্ধার করতে একটি বড় শ্রেণির পাঠককে অভিধান নিয়ে বসতে হবে। তাতে পাঠক কাব্যের রস হারাতে পারেন। সেইসাথে উপত্যকা যেহেতু ভাষার দিক থেকেও তৃষ্ণার্ত; তাই কবিতার ভাষা নির্মাণে- ‘ইমারত’; ‘মেহফিল’; ‘কাফের’; ‘শুকরিয়ায়’ ‘স্যাটার্ডে’ প্রভৃতি আরবী-ফারসী-উর্দু-ইংরেজির প্রয়োগ আর একটু কম হলে ভালো হত বলে আমার ব্যক্তিগত অভিমত। যদিও বাস্তবকে গভীর বাস্তবসম্মত করে তুলতেই কবি কঠিন শব্দ বা অন্যভাষার শব্দ ব্যবহারে জোর দিতেই পারেন। কিন্তু পাঠকের বোধগম্যতার উপর খেয়াল রাখাও কবির ধর্ম হওয়া উচিত। বইয়ের প্রচ্ছদ, পৃষ্ঠা ও ছাপার ব্যাপারে প্রকাশক গভীর দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছেন এবিষয়ে সন্দেহ নেই। তারপরেও কয়েক জায়গায় একই মুদ্রণদোষ ফিরে ফিরে এসেছে। আমার বিশ্বাস, দ্বিতীয় সংস্করণে সেই মুদ্রণদোষ পরিহার হবে এবং ‘তৃষ্ণার্ত উপত্যকা থেকে বলছি’ জায়গা করে নেবে বাংলা ভাষাভাষী বৃহত্তর পাঠকের বইয়ের ব্যাগে।       

তারা//

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়