ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

মেলায় চট বিছিয়ে নিজের বই বিক্রি করেছি : নির্মলেন্দু গুণ

লায়লা ফেরদৌসী  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৭, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৭:০৭, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
মেলায় চট বিছিয়ে নিজের বই বিক্রি করেছি : নির্মলেন্দু গুণ

নির্মলেন্দু গুণ। কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও গদ্য এবং ভ্রমণসাহিত্যে স্বকীয় অবদান রেখে চলেছেন। আঁকিয়ে হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে। ১৯৭০ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি খুব দ্রুত পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর কবিতায় প্রেম ও নারীর পাশাপাশি স্বৈরাচারবিরোধী ও শ্রেণীসংগ্রামের বার্তা উঠে এসেছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন লায়লা ফেরদৌসী 

একুশে বইমেলার শুরু এবং আপনার অংশগ্রহণ সম্পর্কে জানতে চাই।

১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমি মাঠে চট বিছিয়ে কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলা শুরু করেন। এই ৩২টি বই ছিল চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত ‘স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ’ থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশী শরণার্থী লেখকদের লেখা বই। এই মেলায় আমি নিজেও অংশগ্রহণ করেছি। ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশ থেকেই আমার বই প্রকাশিত হয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে আমার বই প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭০-এর নভেম্বর মাসে। মাঝখানে ৭১ সাল গিয়েছে যুদ্ধে। তখন প্রকাশকগণ বই বিক্রি করতে পারেননি। ঢাকায় ফিরে আসার পর যখন পয়লা ফেব্রুয়ারি এলো, তখন আমার দুই প্রকাশকের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলো। কলকাতা থেকে প্রকাশিত বই এবং বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত বই- দুটো বইয়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত যে বইয়ের প্রকাশক, তিনিই অগ্রাধিকার পেলেন বাংলাদেশে বই বিক্রি করার। কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ বইটি তারা এখানে বিক্রি করতে এক প্রকার বাঁধা দিল। তখন আমার মনে হলো, এই দুটি বই-ই যদি বিক্রি হয়ে যায় তাহলে এই কলহ থেকে আমি পরিত্রাণ পেতে পারি। ফলে আমি চিত্তরঞ্জন সাহার এই মেলার আয়োজনকে সমর্থন করি আমার ব্যক্তিগত স্বার্থে। চট বিছিয়ে আমিও বাংলা একাডেমির মাঠে বসে নিজের বই বিক্রি করতে শুরু করি। তখন বয়স অল্প ছিল। নিজের বই বিক্রি করার জন্য মানুষকে ধরে নিয়ে এসে পুসিং সেল করতে শুরু করি। তারপর আমার বই বিক্রি হয়ে গেলে মেলার প্রতি আর আগ্রহ রইল না। কিন্তু নতুন প্রকাশকদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হলো। তারা ভাবল, এ ভাবে বইমেলা করলে পাঠকদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যাবে। পরের বছর থেকে অর্থাৎ ১৯৭৩ সাল থেকে আরো কয়েকজন প্রকাশক এসে যুক্ত হলো। এ ভাবেই বইমেলা শুরু।

বইমেলার পরিসর বেড়েছে, দিনদিন নান্দনিক হচ্ছে। বাংলা একাডেমি যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে প্রতিবছর। আর কী করণীয় থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন? 

এখানে বাংলা একাডেমির ভূমিকাই থাকা উচিত নয়। বাংলা একাডেমির নিজস্ব অনেক একাডেমিক কাজ আছে। তাদের উচিত সেগুলোতে মনোযোগী হওয়া। বইমেলা বাংলা একাডেমির জন্মসূত্রে প্রাপ্ত কোনো বিষয় নয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর, চিত্তরঞ্জন সাহা নিজস্ব উদ্যোগে যে বইমেলা শুরু করেছিলেন সেখানে তিনি বাংলা একাডেমির মাঠটি শুধু ব্যবহার করেছিলেন। ফলত বাংলা একাডেমি এর উপর নিজস্বতা দাবি করে। এই দাবির মধ্যে দিয়েই তারা এই গ্রন্থ ব্যবসায় নিজেদের নেতৃত্ব এবং আধিপত্য বজায় রাখতে চায়। এখান থেকে তাদের বেরিয়ে আসা উচিত। তাদের এই আধিপত্যের জন্য আসলে দায়ী প্রকাশকরা।

প্রকাশকরা এ বিষয়ে কী উদ্যোগ নিতে পারেন?

প্রকাশকরাই পারে বইমেলা থেকে বাংলা একাডেমিকে বিচ্যুত করতে। প্রকাশকদের এ বিষয়ে একমত হতে হবে। যতদিন পর্যন্ত তারা এক হতে পারবে না ততদিন পর্যন্ত তাদের বাংলা একাডেমির দ্বারস্থ হতে হবে।

আমরা প্রতিবছরই দেখছি, মেলায় প্রকাশক বাড়ছে, পাঠকের সংখ্যা বেড়েছে কিনা- আপনার কী মনে হয়?

আমার মনে হয়, জনসংখ্যা যেভাবে বাড়ছে সেভাবে পাঠকের সংখ্যা বাড়ছে না। তবে পাঠকের সংখ্যা যে একেবারেই কমে গেছে এটাও বলা যাবে না। কারণ প্রত্যেক বইমেলায় বইয়ের স্টলের সংখ্যা বাড়ছে, প্রকাশকের সংখ্যাও বাড়ছে। আর প্রকাশকের সংখ্যা না বাড়লে তো বইমেলায় বইয়ের স্টল বাড়তো না। পাঠকের সংখ্যা যদি একেবারেই কমে যেতো তাহলে প্রকাশকরা বইপ্রকাশ বন্ধ করে দিতেন, তারা হাত গুটিয়ে নিতেন।

বইমেলায় এখন পাঠকদের সঙ্গে লেখককে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য একটি মঞ্চ রয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়- বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

পাঠকদের সঙ্গে লেখকদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্যই এই অনুষ্ঠানগুলো করা হয়। পাঠকরা সেখানে লেখককে প্রশ্ন করার সুযোগ পান। তবে সেখানে আরো বেশিসংখ্যক লেখকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত। অনুষ্ঠানগুলোর মান বাড়ানোর জন্য সঞ্চালক এবং লেখকের প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। গিয়ে বসে কথা বলা শুরু করে দিলে তো হয় না! যে লেখক কথা বলবেন তার একটা ভালো সম্মানীর ব্যবস্থা করা, যিনি উপস্থাপন করবেন তারও ভালো সম্মানীর ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাজেট থাকা উচিত। এতে লেখক-পাঠকের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি হবে। বইমেলার আয়োজন করে বাংলা একাডেমি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। সেই লভ্যাংশের কিছুটা তারা ভালো প্যাভিলিয়নের জন্য পুরস্কার আকারে বিতরণ করে। কিন্তু বাংলা একাডেমি বইমেলা থেকে যে আয় করে এবং পুরস্কারের পিছনে যে ব্যায় করে তার মধ্যে বিস্তর ফারাক। 
 

তারা//

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়