ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

এবারও পবায় যোগ দিতে পারলেন না ফাতেমা

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫২, ২৬ এপ্রিল ২০২৪  
এবারও পবায় যোগ দিতে পারলেন না ফাতেমা

অফিসের সামনের বেঞ্চে বসে দাপ্তরিক কাজ করেছেন ফাতেমা খাতুন

অসুস্থ স্বামীকে রাজশাহী শহরের বাসায় রেখে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে রোজ অফিসে যান ফাতেমা খাতুন। অফিসের এই দূরত্ব কমাতে ফাতেমা অনেক দিন ধরেই বদলি হয়ে আসতে চাচ্ছিলেন পবা উপজেলায়। ভেবেছিলেন, শহর লাগোয়া এই কার্যালয়ে পদায়ন হলে স্বল্প সময়ে বাড়ি থেকে যাতায়াত করতে পারবেন। দুই বছরে দুইবার ফাতেমা তদবির করেই পবা উপজেলায় বদলি নেন। কিন্তু, পাল্টা তদবিরের কারণে একবারও তিসি যোগ দিতে পারেননি।

ফাতেমা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা। দেশের প্রতিটি উপজেলায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার পদ একটি। প্রায় ছয় বছর ধরে পবায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে ছিলেন শিমুল বিল্লাহ সুলতানা নামের এক নারী। গত ২৮ মার্চ এক প্রজ্ঞাপনে শিমুল বিল্লাহকে নাটোরের বড়াইগ্রামে বদলি করা হয়। একই প্রজ্ঞাপনে বড়াইগ্রামের মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হাবিবা খাতুনকে পবায় বদলি করা হয়। পরে ৩ এপ্রিল এক প্রজ্ঞাপনে শিমুল বিল্লাহ সুলতানাকে বড়াইগ্রামে রেখেই হাবিবা খাতুনকে রাজশাহীর দুর্গাপুরে পদায়ন করা হয়। আর পবায় বদলি করা হয় দুর্গাপুরের মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুনকে।

আরও পড়ুন: অফিসে তালা, বাইরে বসে কাজ করলেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা

তবে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) মন্ত্রণালয়ের উপসচিব তাসমিন ফারহানা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ৩ এপ্রিলের প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করা হয়। অর্থাৎ ফাতেমা খাতুনকে আগের মতোই দুর্গাপুরে আর হাবিবা খাতুনকে পবায় রাখা হয়। এই প্রজ্ঞাপনটি জারি হওয়ার পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে ফাতেমা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে পবা উপজেলা কার্যালয় ছেড়ে চলে যান।

এর আগে ২০২২ সালের ৪ জুলাই ফাতেমা খাতুনকে দুর্গাপুর থেকে পবায় বদলি করা হয়েছিল। তখন তৎকালীন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শিমুল বিল্লাহ সুলতানা তাঁকে পবায় যোগদান করতে দেননি। ফাতেমা দেড় মাস ধরে ঘুরলেও মেয়ের পরীক্ষার কথা বলে তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি শিমুল বিল্লাহ। দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিতে তিনি অফিসে তালা দিয়ে রাখতেন। পরে শিমুল বিল্লাহর তদবিরের কারণে ২১ আগস্ট ওই বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়। এর ফলে তখনও ফাতেমা খাতুনকে গিয়ে আবারও দুর্গাপুরে যোগ দিতে হয়েছিল। এবারও তাই হলো।

গত ৩ এপ্রিল পবায় যোগদানের আদেশ হওয়ার পর ফাতেমা দুর্গাপুর থেকে চলে আসেন। ৮ এপ্রিল তিনি রাজশাহী মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কার্যালয়ে যোগ দেন। সেদিন থেকেই তিনি পবায় অফিসে যাচ্ছিলেন, কিন্তু দপ্তর খোলা পাচ্ছিলেন না। শিমুল বিল্লাহর মতো হাবিবা খাতুনও দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে রাখতেন। তিনিও অফিসে আসতেন না ছুটি নিয়েছেন জানিয়ে। ফাতেমা অফিসের বাইরে বারান্দায় বেঞ্চে বসেই দাপ্তরিক কাজকর্ম শুরু করেছিলেন। অবশেষে হাবিবা খাতুন মন্ত্রণালয়ে তদবির করে তার বদলির আদেশ বাতিল করলেন।
 
মন্ত্রণালয়ে তদবিরের বিষয়টি স্বীকার করে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হাবিবা খাতুন বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ে আমি তো আমার আরজি জানাতেই পারি। মন্ত্রণালয় সেটা আমলে নিয়েছে। তাই আমি পবাতেই থাকছি।’ ৩ এপ্রিলের বদলির প্রজ্ঞাপন বাতিল হওয়ায় হাবিবা ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, পবা রাজশাহী।’

পবা থেকে ফিরে যাওয়া ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘অনেক কথা তো বললাম। কে শুনল আমার কথা! এখন আর বলে কি হবে? যাদের ক্ষমতা বেশি, তারা বারবার তদবির করে আমার পবায় যোগদান ঠেকিয়ে দিচ্ছে। আমার অসুস্থ স্বামীর কথা ভাবছে না।’

পবায় ফাতেমাকে বদলির ২২ দিনের মধ্যে ওই প্রজ্ঞাপন বাতিলের বিষয়ে কথা বলতে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব তাসমিন ফারহানার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

রাজশাহী মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক শবনম শিরিনও ফোন ধরেননি। অভিযোগ রয়েছে, এই কর্মকর্তাও দুই দফায় ফাতেমাকে পবায় যোগদান না করানোর চেষ্টা চালিয়েছেন। পবায় ফাতেমার পদায়ন হওয়ার পরেও দুইবারই তিনি ওই প্রজ্ঞাপন বাতিলে মন্ত্রণালয়ে চেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে, এ নিয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কেয়া/মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়