ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

বিনা ধান-২১ দ্বিগুণ ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

আবদুর রহমান, কুমিল্লা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪১, ২২ আগস্ট ২০২১  
বিনা ধান-২১ দ্বিগুণ ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

কুমিল্লায় ফসলের মাঠে প্রথমবারের মতো চাষ করা হয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিনা ধান-২১। আর প্রথমবারেই সাফল্য পেয়েছেন কৃষকরা। কম খরচে নতুন এই ধান চাষ করে দ্বিগুণ ফলন পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে। বিনা ধান-২১ চাষে কম খরচের পাশাপাশি সময়ও কম ব্যয় হয়। এছাড়া দীর্ঘ খরায়ও এই ধান টিকে থাকতে পারে বলে জানা গেছে।

এদিকে, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা উপকেন্দ্রের কর্মকর্তারা সম্প্রতি মাঠ পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন, বিনা ধান-২১ চাষ করে প্রতি হেক্টরে কৃষকরা সাড়ে ৫ টন ধান পেয়েছেন। চলমান আউশ মৌসুমে অন্য ধান চাষ করে হেক্টর প্রতি পৌনে ৩ টন ধান পাওয়া যায়। আউশ মৌসুমেও বিনা ধান-২১ ফসলের প্রধান মৌসুম বোরোর মতোই ফলন দেয়।

মাঠ পরিদর্শন দলে ছিলেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশিকুর রহমান, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ) ড. ফাহমিনা ইয়াসমিন ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ জুয়েল সরকার।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, বিনা ধান-২১ নামের ধানটি উদ্ভাবন করা হয়েছে আফ্রিকার নেরিকা-১০ জাতের ধান থেকে। তবে নেরিকার ফলন কম হতো। পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম গবেষণা করে এই ধানের ফলন বাড়িয়ে দিয়েছেন। আগে গাছের উচ্চতা কম-বেশি ছিল, সেগুলো এখন সমান করা হয়েছে। এছাড়া ধানের সাইজ চিকন করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রথমবারের মতো কুমিল্লার মাঠে ৫০ হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে বিনা ধান-২১ চাষ করা হয়েছে। এতে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফলন এসেছে। আশা করা হচ্ছে, আগামীতে আউশ মৌসুমে কুমিল্লার মাঠে বিনা ধান-২১ এর আবাদ আরও বাড়বে। এছাড়া কম সময় এবং কম খরচে এই ধান চাষে দ্বিগুণ ফলন হওয়ায় ধানটি চাষ নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মধ্যে।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, আফ্রিকার নেরিকা-১০ ধানের জাত থেকে এই বিনা ধান-২১ উদ্ভাবন করা হয়। নেরিকার ফলন কম হতো, তাই কৃষকের আগ্রহ কম ছিল। তবে গামা রশ্মি প্রয়োগ করে এর ফলন বাড়ানো হয়েছে। গাছের কম-বেশি উচ্চতা সমান করা হয়েছে। মোটা ধানের সাইজ চিকন করা হয়েছে। তাই এই ধান চাষ নিয়ে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামীতে আউশ মৌসুমে এই ধান চাষের মাধ্যমে দেশের খাদ্য উৎপাদন আরও বেড়ে যাবে।

জেলার বুড়িচং উপজেলার দয়ারামপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, এবারের আউশ মৌসুমে প্রথমবারের মতো বিনা ধান -২১ চাষ করেছেন তিনি। প্রথমে ফলন নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত বাম্পার ফলনে তিনি বেশ খুশি।  আগামীতে আরও বেশি জমিতে এই ধান চাষ করবেন বলে জানান।

কুমিল্লা সদর উপজেলার রামপুর গ্রামের কৃষক রিপন মিয়া বলেন, ধানটির এমন ফলন দেখে সবাই অবাক হয়েছেন। অনেক কৃষক এই ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আশা করা যাচ্ছে আগামী আউশ মৌসুমে মাঠে বিনা ধান-২১ জাতের ধানের হাসি দেখা যাবে।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন, আউশ মৌসুমে অন্য ধান চাষে হেক্টরে আগে কৃষকরা পেতেন পৌনে ৩ টন ধান। আর এ বছর বিনা ধান-২১ চাষে প্রতি হেক্টরে কৃষকরা সাড়ে ৫ টন ধান পেয়েছেন। এছাড়া ধানের জীবনকাল কম হওয়ায় এক জমিতে চার ফসলও করা সম্ভব হচ্ছে। এই ধান চাষে সেচসহ অন্যান্য খরচ নেই বললেই চলে। এছাড়া দীর্ঘ খরায়ও এই ধান টিকে থাকতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ফলন কম হওয়ায় আউশ মৌসুমে অনেক জমি খালি পড়ে থাকে। ব্যয় বেশি এবং ফলন কম হওয়ার কারণে কৃষকরা এই মৌসুমে ধান চাষ করতে চান না। তবে বিনা ধান-২১ এর ফলন দেখে কৃষকরা এই মৌসুমে ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

ড. ফাহমিনা ইয়াসমিন বলেন, বিনা ধান-২১ জাতের ধানের চাল চিকন। কুমিল্লার মানুষ সৌখিন, তারা চিকন চাল খেতে পছন্দ করেন। এই কারণে এই ধান চাষে কৃষকরা ভালো লাভ পাবেন। এছাড়া এই ধান পানি ছাড়া ২০ দিন টিকে থাকতে পারে। ২০ দিন চুপচাপ থাকবে, আর পানি পেলে ধানটি আবারও বেড়ে উঠবে। এই কারণে কৃষকরা আরও বেশি লাভবান হবেন।

/মাহি/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়