বক পাখির জন্য ভালোবাসা
তাদের রাত পোহায় বক পাখির লাফালাফির শব্দে। শান্ত এই পাখির সাথে মিতালী গড়ে তুলেছে বাড়ির লোকজন। বলছি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার খানের বাড়ি ও তাঁর পাশের বাড়ির বাঁশঝাড়ে থাকা বক পাখির কথা। কয়েক বছর যাবত এই দুই বাড়িতে নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তোলে এ পাখিগুলো। এদের কলরবে এলাকাটি সবসময় মুখরিত হয়ে থাকে। পথচারীরা এমন দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যান।
শমশেরনগর-মৌলভীবাজার সড়কের গা ঘেঁষে সরিষকান্দি গ্রামের প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার খান ও আতাউর রহমান খানের বাড়ি। বাড়ির পেছনে পুকুর পাড়ে বাঁশঝাড়ের সারি। সারিবদ্ধ বাঁশঝাড়ে দীর্ঘ চার, পাঁচ বছর ধরে নিরাপদ আবাসভূমি গড়েছে বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময় যে কারো নজরে পড়বে ধবধবে সাদা, সোনালী বকসহ বিভিন্ন জাতের বকের লাফালাফির দৃশ্য।
বছরের একটি মৌসুমে হাজারো সাদা বকসহ কয়েকটি প্রজাতির পাখির নিরাপদ অভয়ারণ্য যে কাউকে মুগ্ধ করে তোলে। পাখির নিরাপদ এই অভয়ারণ্যেও শিকারিদের কিছু তৎপরতা থাকলেও সেটিও রুখে দিয়েছেন কয়েক বাড়ির লোকজন। অতীতের মতো গ্রামের বাড়িঘরে গাছের ডালে, বাঁশঝাড় ও শুপারি গাছে পাখির বাসা, কলরব এখন আর চোখে পড়ে না। বিদেশি প্রজাতির গাছগাছালি, রাসায়নিক সার, কীটনাশক আর মনুষ্যসৃষ্ট কর্মকাণ্ডে প্রজননে বাধাগ্রস্ত, আবাসস্থল বিনষ্ট ও খাদ্য সংকটের কারণে বিপন্ন হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের পাখি। ফলে সংকটাপন্ন হয়ে পড়ছে দেশীয় প্রজাতির নানা সব পাখি। এসব ভেদ করে এখনও কোন কোন স্থানে গ্রামগঞ্জের বাড়ির আশেপাশে প্রাচীনতম গাছ আর বাঁশঝাড়ে পাখি বাসা বাঁধছে। আর এখন পাখির সেসব বাসাগুলো হয়ে পড়ছে বিরল।
গ্রামগঞ্জের আনাচে কানাচে সচরাচর পাখির বিচরণ দেখা যেতো। সম্প্রতি বিভিন্ন কারণে এসব দৃশ্য আর চোখে পড়ছে না। দেশীয় প্রজাতির প্রাচীনতম গাছ বিলুপ্ত, খাবার সংকট, জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ এসব কারণে পাখি নিরাপদ আবাসভূমি হারাচ্ছে।
সরিষকান্দি গ্রামের ওই দুটি বাড়ির পুরনো বাঁশঝাড় ও গাছগাছালিতে গত কয়েক বছর ধরে সাদা বক, সোনালী বক, পানকৌড়িসহ কয়েক প্রজাতির পাখির নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তোলেছে। সকালে আর বিকেলে পাখির কিচিরমিচির শব্দ গোটা বাড়ির পরিবেশকে ভিন্ন আঙ্গিকে মাতিয়ে তোলে।
গ্রামের স্থানীয় জগরাম শব্দকর জানান, কয়েক বছর ধরে এসব পাখি এই দুটি বাড়ির বাঁশঝাড় ও গাছগাছালিতে অবাধ বিচরণ করছে। সকালে ও বিকেলে পাখির কলকাকলি দূর থেকেই শোনা যায়। সকালে খাবারের উদ্দেশ্যে সবগুলো পাখিই মান্দারী বন্দের বিশাল কৃষি জমিতে বেরিয়ে পড়ে। আবার বিকেলে ধীরে ধীরে বাসস্থানে ফিরতে থাকে।
তিনি বলেন, ‘গত বছর ও এর আগের বছরগুলোতে বক পাখির উপস্থিতি আরো বেশি ছিল। বাড়ির পেছনের ফিসারিসহ আশপাশের এলাকার আবাদি জমি থেকে বেশিরভাগ খাবার খেতে দেখা যায়। তবে পাখির নিরাপদ আবাসভূমি হলেও কিছু সংখ্যক শিকারিদের অপতৎপরতা রয়েছে। এসব শিকারিরা ক্ষেতের জমিতে বন্দুক নিয়ে সন্ধ্যায় গোপনে পাখি শিকারের চেষ্টা করে। এসব কারণে পাখির উপস্থিতি আগের চেয়ে কম দেখা যাচ্ছে।’
মৌলভীবাজার/সাইফুল্লাহ হাসান/হাকিম মাহি
রাইজিংবিডি.কম