ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সচেতনতা-নীতিমালার অভাবে হুমকিতে ডলফিন

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৮, ৬ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সচেতনতা-নীতিমালার অভাবে হুমকিতে ডলফিন

করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিধি-নিষেধের কারণে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে নেই পর্যটকের কোলাহল। যার কারণে সৈকত ফিরেছে তার পুরনো রূপে। সাগর তীরে দল বেঁধে খেলা করতে দেখা যাচ্ছে ডলফিনের দলকে। কিন্তু এ ডলফিন এখন হুমকির মুখে। সাগরে জেলেদের জালে প্রতিনিয়তই আটকা পড়ছে।

পরিবেশবিদরা বলছেন, প্রাণী সুরক্ষা নীতি ও জেলেদের সচেতন করা যায়নি বলে ডলফিন এখন হুমকির মুখে পড়েছে। আর জেলেদের এ ব্যাপারে সবসময় জেলেদের সচেতন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম খালেকুজ্জামান।

করোনাভাইরাসের কারণে পুরো দেশ এখন ঘরবন্দি। পর্যটন শহর কক্সবাজারে নেই সেই চিরচেনা কোলাহল। বেলাভূমিতে প্রতি বেলায় পা পড়ছে না পর্যটকদের। যার কারণে পুরনো রূপে ফিরেছে সাগর।

স্বচ্ছ নীল জলরাশি, দেখা মিলল বিরল দৃশ্যের। সাগর তীরে বিচরণ করছে ডলফিনের দল। যা অন্য কোনো সময় দেখা যায়নি এ দৃশ্য। কিন্তু এ ডলফিন এখন হুমকি মুখে। সাগরে বিচরণকালে নিরীহ, শান্ত ও জ্ঞানী এই প্রাণীকে জেলেরা হত্যা করছে।

সৈকতের কলাতলী এলাকার জেলে রাসেল বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু বন্ধ। সৈকতে কেউ বেড়াতে আসছে। আমরা যখন সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছি, তখন দেখছি বড় বড় ডলফিন খেলা করছে। এছাড়াও কাছিমও দেখা যাচ্ছে। সাগরে এগুলো দেখে খুবই সুন্দর লাগে। সাগরের পানি একদম নীল হয়ে যাওয়ায় সবকিছু ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে।

একই এলাকার আরেক জেলে আব্দুল মালেক বলেন, সাগরের বড় বড় যে ট্রলারগুলো রয়েছে; তাদের বিহিন্দি কিংবা উন্নতমানের জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করছে। ওই জালে আটকা পড়ে ডলফিনগুলো মারা যাচ্ছে। ডলফিনগুলো মরার পর যখন উপকূলে আসে তখন দেখা যায় তাদের গায়ে আঘাতের চিহ্ন। তবে আমরা ছোট জাল ব্যবহার করি। এখানে ডলফিন মরে না।

আরেক জেলে ছৈয়দ আলম বলেন, বড় বড় মাছ শিকারের কতগুলো জাল রয়েছে। এসব বড় বড় জালে ডলফিনগুলো আটকা পড়ে। আটকা পড়লে যখন শ্বাস নিতে পারে না, ফলে মারা যায়।
 


এদিকে পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা বলছেন, প্রাণী সুরক্ষা নীতি ও জেলেদের সচেতন করা যায়নি বলে ডলফিন এখন হুমকির মুখে পড়েছে।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, সৈকতে এলাকায় পর্যটকের সমাগম না থাকায় প্রকৃতি তার নিজস্ব রূপ ফিরে পেয়েছে। যার কারণে ডলফিনের দলবদ্ধ খেলা সাগর তীর থেকে আমরা দেখতে পারছি। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে সম্প্রতি পরপর তিনটি ডলফিন মৃত অবস্থায় তীরে পাওয়া গেছে। এটার কারণ হচ্ছে ডলফিন যখন জেলেদের জালে আটকা পড়ছে তখন জেলেরা ডলফিনকে না বাঁচিয়ে জাল বাঁচানোর জন্য সেগুলোকে মেরে ফেলছে। তাই এ মুহূর্তে প্রশাসনের উচিত জেলেদের সচেতন করা।

সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসাইন বলেন, ডলফিন সুরক্ষা নীতি আমরা গড়ে তুলতে পারেনি এটা আমাদের ব্যর্থতা। জেলেদের সচেতন কিংবা নির্দেশনা দিতে পারেনি। কোন প্রাণীগুলো কিভাবে সুরক্ষিত করতে হয়, কোন প্রাণী ক্ষতিকর ও ক্ষতিকর নয়- এই বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছি বলে প্রতিদিনই জেলেদের জালে ডলফিন আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে ডলফিন সুরক্ষার দায়িত্ব বনবিভাগকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যারা বন, পাহাড় ও পাহাড়ি অঞ্চলের বন্যপ্রাণী সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে তাদের সামুদ্রিক প্রাণী রক্ষার দায়িত্ব দিলে সেটাতে সফলতা আসবে না। তাই মনেকরি মৎস্য অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় যদি সামুদ্রিক প্রাণীগুলো রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে প্রাণীগুলোকে বাঁচানো সম্ভব হবে। এটার জন্য ডলফিন রক্ষায় সরকারকে নীতিমালা নিতে হবে।

আর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম খালেকুজ্জামান জানান, পৃথিবীর অন্যতম নিরীহ, শান্ত ও জ্ঞানী পন্ডিত প্রাণীর মধ্যে ডলফিন একটি। মানুষের কথা তারা বুঝতে পারে, ভাষা কিংবা ইঙ্গিতও তারা সহজেই বুঝে নেয়। তারা কাউকে আক্রমণও করে না। এব্যাপারে জেলেদের সবসময় বলেছি, ডলফিন কোনো ক্ষতিকর কিংবা আগ্রাসী প্রাণী নয় এবং ডলফিনকে যেন বন্ধু সুলভ দৃষ্টিতে দেখে জাল থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয়।

২৩ মার্চ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে ডলফিনের দুটি দলকে খেলা করতে দেখা যায়।  সেখানে মোট ২০-২৫ টি ডলফিন ছিল। আর গত দু’দিনে জেলেদের জালে আটকা পড়ে মারা গেছে ৩টি ডলফিন।



রুবেল/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়