ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি গোলাম মোস্তফা

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৭, ১ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৩:০৬, ১ ডিসেম্বর ২০২০
স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি গোলাম মোস্তফা

‘দেড় বছরের শিশু কন্যা ও স্ত্রীকে রেখে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিই। ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে সুন্দরবন অঞ্চলে মেজর জিয়াউদ্দীনের নেতৃত্বে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারিনি। ভাতা বা সুযোগ সুবিধা নয়, শুধু চাই সম্মান।’

কথাগুলো বলছিলেন বাগেরহাট শহরের সরুই এলাকার রাজ মিস্ত্রী গোলাম মোস্তফা মোল্লা। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।

তিনি বলেন, ‘শেষ বয়সে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে কঠিন সময় পার করছি। আজ পয়লা ডিসেম্বর, বিজয়ের মাস শুরু। এ বিজয় ছিনিয়ে আনতে যুদ্ধে অংশ নিয়েও প্রাপ্য স্বীকৃতিটুকু মেলেনি আটচল্লিশ বছরেও।’

গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ছোট থেকেই রাজ মিস্ত্রীর কাজে যুক্ত ছিলাম। লেখাপড়া তেমন করতে পারেনি। ১৯৬৮ সালে পিরোজপুরে কালিকাঠী গ্রামের নাসরিনের সঙ্গে বিয়ে হয়। কন্যা রেক্সোনার জন্ম হয়। এরই মধ্যে ডাক আসে যুদ্ধের। স্ত্রী-শিশু সন্তান ফেলে চলে যাই ভারতে। বিহারে বীরভূম চাকুলিয়া কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে আসি দেশে। ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। বাগেরহাটের সুন্দরবন সংলগ্ন রায়েন্দা এলাকায় মেজর জিয়াউদ্দীনের নেতৃত্বে পাক হানাদারদের মুখোমুখি একাধিক সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। ৩০ জন রাজাকার আমাদের হাতে নিশ্চিহ্ন হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীন ঘোষণা হলে পিরোজপুর টাউন বিদ্যালয়ের মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র জমা দিই। ২০০০ সাল থেকে একাধিকবার মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে ঘুরেও শেষ পর্যন্ত নাম লেখাতে পারলাম না। বর্তমানে অসুখ-বিসুখে জর্জরিত হয়ে আছি। চলাফেরা করতে কষ্ট হয়, অনেক স্মৃতিই ভুলে গেছি।’

মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) এইচ এম নুরুল হক বলেন, ‘‘গোলাম মোস্তফা মোল্লা আমার সহযোদ্ধা। একসঙ্গে যুদ্ধ করেছি। অথচ গোলাম মোস্তফা আজও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম ওঠাতে পারেননি। পিরোজপুরের সাবেক পৌর মেয়র এমডি লিয়াকত আলী বাদশা ও সাবেক এমপি আউয়ালসহ আমরা শতাধিক লোক একসংগে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। গোলাম মোস্তফা মোল্লা লেখাপড়া কম জানতো, তাই সে কখনো লাল মুক্তিবার্তা সংসদে যায়নি। তাই তার নামও তালিকায় আসেনি। অস্ত্র জমা দেওয়ার তালিকাটি রয়েছে তার।

‘স্বাধীনতার এতগুলো বছর পার হলেও আজও স্বীকৃতি মেলেনি তার। স্বাধীনতায় ওই পরিবারের অবদান আছে। স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য তারা। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম উঠিয়ে সরকারি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ব‌্যবস্থা করতে দাবি জানাচ্ছি।’’

গোলাম মোস্তফার স্ত্রী নাসরীন বেগম বলেন, ‘কোলের শিশু সন্তান রেখে রেক্সোনার বাবা যুদ্ধে গেলো। সেই আট-নয় মাস কীভাবে কাটিয়েছি আল্লাহই জানেন। জীবন ও মান সম্মান বাঁচাতে একেকদিন একেক যায়গায় পালিয়ে বেড়িয়েছি। বাচ্চাটাকে বাঁচাতে ছুটে বেড়িয়েছি। দেশের জন‌্য ত‌্যাগ স্বীকার করেও মেলেনি স্বীকৃতি। রাজমিস্ত্রী স্বামীর সামান্য আয়। তাই দিয়ে পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ের কাউকেই তেমন লেখাপড়া করাতে পারিনি। বর্তমানে উনি খুব অসুস্থ। হার্ট ও চোখের সমস্যা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাছে দাবি- আমার স্বামী যেনো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পান। আমি যাতে আমার পরিবারটাকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসেবে পরিচয় দিতে পারি, এইটুকুই আমাদের চাওয়া পাওয়া।’

বাগেরহাট/সনি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়